খালিস্তানপন্থী নেতা অমৃতপাল সিং ইস্যুতে বিদেশে ভারতের দূতাবাসগুলোয় হামলা

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
5 মিনিটে পড়ুন

অমৃতপাল সিং ইস্যুতে বিদেশে ভারতের দূতাবাসগুলোয় হামলা

পাঞ্জাবে খালিস্তানপন্থী নেতা অমৃতপাল সিং-কে আটক করার জন্য পুলিশের ক্র্যাকডাউনকে কেন্দ্র করে বিদেশে ভারতের একের পর এক দূতাবাস বা রাষ্ট্রদূতরা খালিস্তান সমর্থকদের হামলার মুখে পড়ছেন।

পশ্চিমের যে সব দেশে বড়সড় শিখ জনসংখ্যা আছে সেখানেই এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ব্রিটেনের পর যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা বা অস্ট্রেলিয়ার নামও এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে।

- বিজ্ঞাপন -

এদিকে আশি হাজার সদস্যের বিশাল বাহিনী নিয়েও পাঞ্জাব পুলিশ কেন এখনও অমৃতপাল সিংকে ধরতে পারছে না, সেই প্রশ্নেও আজ মঙ্গলবার পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট সরকারের কড়া সমালোচনা করেছে।

ফলে দেশের ভেতরে যেমন, তেমনি বাইরেও অমৃতপাল সিংকে আটক করার অভিযানের জেরে ভারতকে তীব্র অস্বস্তির মুখে পড়তে হচ্ছে।

শনিবার বিকেলে পাঞ্জাবের জলন্ধরের কাছে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর বাহাত্তর ঘন্টারও বেশি কেটে গেলেও অমৃতপাল সিং এখনও ফেরার রয়েছেন, পুলিশ তার কোনও সন্ধান পায়নি।

লন্ডনের পর ক্যালিফোর্নিয়া

পুলিশের এই অভিযানের বিরুদ্ধে রবিবারই লন্ডনে ভারতীয় হাই কমিশনের সামনে খালিস্তানপন্থী সংগঠনগুলো বিক্ষোভ দেখায়, একজন বিক্ষোভকারী দূতাবাসের প্রবেশপথে টাঙানো ভারতের তেরঙা জাতীয় পতাকাও টেনে নামিয়ে ফেলেন।

- বিজ্ঞাপন -

এই ঘটনার রেশ কাটতে না-কাটতেই সানফ্রান্সিসকোতেও ভারতের কনস্যুলেটের সামনে কয়েকটি শিখ সংগঠন বিক্ষোভ দেখাতে আসে, যা পরে রীতিমতো সহিংস হামলার চেহারা নিয়েছিল।

সিটি পুলিশের বসানো অস্থায়ী নিরাপত্তা ব্যারিয়ার সরিয়ে বিক্ষোভকারীরা কনস্যুলেট ভবনের দিকে ধেয়ে যায়, সেখানেও ভারতের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলে টাঙিয়ে দেওয়া হয় দুটি হলুদ খালিস্তানি নিশান।

- বিজ্ঞাপন -
খালিস্তানপন্থী নেতা অমৃতপাল সিং ইস্যুতে বিদেশে ভারতের দূতাবাসগুলোয় হামলা
সানফ্রান্সিসকোতে প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল শান্তিপূর্ণ অবস্থান দিয়েই। ছবি সংগৃহীত

গন্ডগোলের একটা পর্যায়ে খালিস্তানের পক্ষে স্লোগান দিতে দিতে তারা দূতাবাসের কর্মীদের ওপরও হামলা চালানোর চেষ্টা করে।

হাতে লাঠি ও লোহার রড নিয়ে দূতাবাস ভবনের দরজা ও জানালাতেও জোরে জোরে বাড়ি মারতে দেখা যায় কয়েকজনকে।কনস্যুলেট ভবনের দেওয়ালে স্প্রে পেইন্ট দিয়ে খালিস্তানের পক্ষে গ্রাফিতি এঁকে শেষ পর্যন্ত তারা বিদায় নেয়।

দিল্লিতে শীর্ষ মার্কিন কূটনৈতিক কর্মকর্তা এলিজাবেথ জোনস-কে ডেকে পাঠিয়ে ভারত প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এই হামলার ঘটনায় আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে। হোয়াইট হাউসের অন্যতম মুখপাত্র জন কার্বিও এই হামলাকে “ভ্যান্ডালিজম” বলে বর্ণনা করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (স্টেট ডিপার্টমেন্ট) ডিপ্লোম্যাটিক সিকিওরিটি সার্ভিস এই ঘটনায় সানফ্রান্সিসকোর স্থানীয় কর্তৃপক্ষর সঙ্গে কথাবার্তা চালাচ্ছে বলেও তিনি জানান।

খালিস্তানপন্থী নেতা অমৃতপাল সিং ইস্যুতে বিদেশে ভারতের দূতাবাসগুলোয় হামলা
অনুগামীদের সঙ্গে অমৃতপাল সিং (মাঝে)। ফাইল ছবি সংগৃহীত

কানাডা, অস্ট্রেলিয়াতেও বিক্ষোভ

এদিকে কানাডায় প্রবাসী ভারতীয়দের একটি সংগঠন সে দেশে নিযুক্ত নতুন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সঞ্জয় কুমার ভার্মাকে সংবর্ধনা জানাতে সোমবার একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল।

ব্রিটিশ কলম্বিয়ার সারে-তে ওই অনুষ্ঠানের বেশ কয়েকঘন্টা আগে থেকেই শ’দুয়েক খালিস্তান সমর্থক সেখানে জড়ো হয়ে ভারত-বিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। তাদের বেশ কয়েকজনের হাতে কৃপাণ বা তরবারিও ছিল, যা দুলিয়ে তারা খালিস্তানের পক্ষে আওয়াজ তুলছিলেন।
তাদের বিক্ষোভের মুখে রাষ্ট্রদূত ভার্মা শেষ পর্যন্ত সারে-তে গিয়েও ওই অনুষ্ঠানে যোগই দিতে পারেননি।

খালিস্তানিদের বিক্ষোভ কভার করছিলেন, এমন একজন ভারতীয় সাংবাদিককেও স্থানীয় পুলিশ সেখান থেকে জোর করে সরিয়ে দেয়।

এদিকে অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরাতেও সে দেশের পার্লামেন্টের সামনে জড়ো হয়ে বেশ কয়েকটি খালিস্তানপন্থী সংগঠন আজ বিক্ষোভ দেখিয়েছে। এই বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য ছিল, অমৃতপাল সিং-কে ধরার নামে বিশাল অভিযান চালিয়ে পাঞ্জাবে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে।

খালিস্তানপন্থী নেতা অমৃতপাল সিং ইস্যুতে বিদেশে ভারতের দূতাবাসগুলোয় হামলা
ভারতীয় কনস্যুলেটের দেওয়ালে অমৃতপাল সিংয়ের সমর্থনে গ্রাফিতি। ছবি সংগৃহীত

সব মিলিয়ে, আড়াই বছর আগে ভারতে যখন ব্যাপক কৃষক আন্দোলনের সময় যেমন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শিখ সংগঠনগুলো ভারতের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল এখন আবার যেন অনেকটা সেই দৃশ্যেরই পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে।

ভর্ৎসনা হাইকোর্টেও

এদিকে অমৃতপাল সিংকে আটক করতে এখনও ব্যর্থ পাঞ্জাব পুলিশ আজ চন্ডীগড়ে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টেও আদালতের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে।

পাঞ্জাব সরকারের উদ্দেশে হাইকোর্টের বিচারপতিরা বলেন, “আপনাদের ৮০,০০০ পুলিশ আছে, তারা কী করছে? কীভাবে অমৃতপাল সিং পালাতে পারল সেটা আমাদের বলুন।” এটা রাজ্য পুলিশের “চরম গোয়েন্দা ব্যর্থতা” বলেও আদালত এদিন মন্তব্য করে।

খালিস্তানপন্থী নেতা অমৃতপাল সিং ইস্যুতে বিদেশে ভারতের দূতাবাসগুলোয় হামলা
চন্ডীগড়ে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট ভবন। ছবি সংগৃহীত

এর আগে পুলিশের তরফে আদালতকে জানানো হয় যে গত শনিবার থেকেই অমৃতপাল সিং-কে ধরার জন্য বিশাল সাঁড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে এবং ইতিমধ্যেই ওই নেতার ১২০জন সঙ্গী ও সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু হাইকোর্ট যে এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন, সেটা বিচারপতিরা এর মধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন।

অমৃতপাল সিংকে ধরার অপারেশনের সবশেষ ‘স্ট্যাটাস’ বা পরিস্থিতি কী, তা নিয়ে আদালতে রিপোর্ট জমা দিতেও পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন তারা।

সূত্র বিবিসি

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!