আমার শিরদাঁড়া বেঁকে যায়নি
সব দরোজা খুলে যাবে একদিন
এই ভরসায় এখনও ধুলো মাখি
এখনও বৃষ্টিতে ভিজি একা একা
নিজের মৃত্যু দেখতে দেখতে
জ্বর গায়ে কাঁপতে থাকি সারারাত
কত বেদনা আর অভিমান এসে কাঁদায়
কাঁদতে কাঁদতেই দেখি পৃথিবী গড়াচ্ছে
ভোর হচ্ছে, পাখি ডাকছে
নীল আকাশে জ্যোতিষ্কলোকের রমণী
চুল শুকোচ্ছে
এখনও আমার শিরদাঁড়া বেঁকে যায়নি
সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি
পৃথিবী পাক খেতে খেতে ফিরে আসছে
আমারই পায়ের কাছে
জ্যোতিষ্কলোকের রমণী হেসে উঠছে
মেঘের আড়ালে
শুনতে পাচ্ছি
একটি স্বকীয় প্রলাপ
দূরে দূরে চাঁদ হাঁটে
আমি তার ওড়নার হাওয়া পাই
মনখারাপের ভাষা লুকিয়ে রাখি ঘাসে
টের পায় নাকো কেউ, রোদ পেয়ে হাসে
কখনও উড়তে পারিনি
জানালার বাইরে দাঁড়িয়ে ডেকেছি মনে মনে
গঞ্জনা ছড়িয়েছে পড়শিরা
কোনওদিন তাদের ডেকে প্রতিবাদ করিনি
শব্দ দিয়ে বানিয়েছি হার
কত ফুল হেসে কুটোকুটি
ওদের পাপড়িতে লিখিনি নাম
মনের গোপন ডাকঘরে পাঠিয়েছি নীলখাম
হাত পেতে নতজানু তোমার জ্যোৎস্নায়
মুগ্ধ আগুনে শুধু পুড়িয়েছি আহ্লাদ
বিকেলের জ্বরে সেঁকে নেওয়া ভবিষ্যৎ
উড়িয়ে দিয়েছি নির্জন সন্ধ্যায়
বৃষ্টি এসেছিল
গতকাল খুব চেনা বৃষ্টি এসেছিল
ভেজা গন্ধ শুধু তার, নূপুর বাজেনি
হলুদ দুপুরে ক্ষত ঢেকে রেখে
আমি তাকে বসতেও বলিনি
ঢেউ উঠছিল খুব, নাচছিল নদী
মৃদু ঘ্রাণ ছিল, তবু বাঁশি বাজেনি
দূরে কার রাঙা চোখ অদ্ভুত রঙিন
দেখছিল, তবু তাকে কাছে ডাকিনি
পলাশের বনে ছিল কাক
টুপটাপ ঝরছিল নিষিদ্ধ সংলাপ
ভেজা ভেজা মৃণালে তার
ছড়িয়ে দিচ্ছিল একাগ্র উত্তাপ
কুড়িয়ে পাওয়া সংকেতে
আমিও বিপজ্জনক মাখামাখি
দুপুরের গুমোট ভেদ করে
বৃষ্টিকে কাছ থেকে দেখি
জন্মান্তর
নশ্বরতায় সাজিয়ে রাখছি
বাতাস এসে মুছে দেবে,
পলিথিনের ব্যাগের মতো উড়িয়ে দেবে
এ নিভৃতের অনুভূতি ঝরে যাবে
দেখবে না কেউ
তোমার শুধু জন্ম হবে, নতুন জন্ম
আমিও হব অন্যপুরুষ।
সেদিনও কোনও ভোরের শেষে বৃষ্টি আসবে
জানালার ধারে তোমার ছায়া
বাগানেও শ্বেতকরবী
ঘরের ছাতে পায়রা ডাকবে।
পুরোনো অভ্যাসগুলি ফিরে আসবে
তোমার কাছে গোপন বেড়াল
চুপচাপ সেও জেগে উঠবে।
নীল আশমান দেখতে দেখতে
পুকুর ঘাটে ভাঙা চাঁদ
বুকের ভেতর অজস্র বুক, আবছা আঁধার
জন্মান্তর ঘুরতে থাকবে….
শাশ্বতকথা
মৃদু স্বপ্নে আছি
মৃদু ভোর হলে জেগে উঠব
মানুষ চিরদিন অসভ্য থেকে গেল
সভ্যতা দখল করল রাজনৈতিক জন্তুরা
পর্দার আড়ালে আছি
ব্যাভিচার ব্যাভিচারিনী নিয়ে সংসার
সাধ্যমতন ওরা সবাই ভালো মানুষ
অন্ধকার পেলে মাঝে মাঝে নগ্ন হয়
বিষ ও অমৃতের দোকানে গিয়ে বসি
দোকান চালায় মধু আর নিম
দেখতে সুন্দর বেশ নারী ও পুরুষ
যার যা সাধ্যমতো কেনে — কান্না ও হাসিটুকু ফ্রি
রাতের চাঁদের কণা বুকে এসে নামে
আমরা সবাই চাঁদ খুঁজি শরীরের গানে
যদিও পাহাড় অরণ্য হ্রদ মরুর সঞ্চার
দেহ মনে রিপু খেলে অসম্ভব প্রলয় প্রহর
এ জন্ম মোচন হয়
এ জন্ম মোচন করতে এসে
শুধু অসন্তোষ বারুদে পুড়ি
কে এত পোড়ায় আমাকে?
জীবন যদিও দাতব্য চিকিৎসালয়
মন সেখানে চিরদিন রোগী
কত ভালো ভাগ্য দেখি এপাশে ওপাশে
অভিনয় সেরে বাড়ি ফেরে
আমি চাঁদ কুড়িয়ে স্বপ্নের ঘরে
গোলাপি হাতের ছবি আঁকি
এ জন্ম মোচন হয় ধুলোর পরাগ মেখে
এ জন্ম রোজ পার হয় কান্নায় আকাঙ্ক্ষার শরবত গুলে
পূর্ণ কেমন রোজ ভাবি
কতটুকু উজ্জ্বল তার পা, ঠোঁট নাক চোখ
কেমন নূপুর বাজে, দোলে নাকছাবি!