মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিবি)। স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে এ ঘটনা ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ইতিহাসে এটি একটি বড় ব্যর্থতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।
শুক্রবারে নিউইয়র্কের নিউ স্টক এক্সচেঞ্জে এসভিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপের একটি চার্ট দেখানো হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, এসভিবি গ্রুপ তাদের শেয়ার বাড়িয়েছে। তার আগে অবশ্য ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টরা তাঁদের প্রিমার্কেট ট্রেডিং বন্ধ করে দিয়েছিলেন। অন্যদিকে কোম্পানিগুলো তাদের অর্থ তুলে নেয়। ফলে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সৃষ্টি হয়।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তদারককারী সরকারি সংস্থা এফডিআইসি (ফেডারেল ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স করপোরেশন) বলেছে, বিমা করা আমানতকারীরা আগামী সোমবার সকালের মধ্যে বিমাকৃত আমানত ফেরত পাবেন। এ ছাড়া বিমাহীন আমানতকারীদের আগামী সপ্তাহের মধ্যে লভ্যাংশ দেওয়া হবে।
সিএনএন বলেছে, এ ব্যাপারে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে এসভিবি গ্রুপ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
কীভাবে ঘটল এমন ঘটনা
গত বুধবার এসভিবি ঘোষণা করে, আর্থিক ক্ষতির কারণে তারা বেশ কয়েকটি সিকিউরিটিজ বন্ধ করে দিচ্ছে। ব্যালেন্সশিট ধরে রাখতে ২২৫ কোটি ডলারের নতুন শেয়ার বিক্রি করবে তারা। এ ঘোষণার পর ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানিগুলোর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। তারা দ্রুত ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিতে শুরু করে। এরপর শুক্রবার সকালে এসভিবি তাদের শেয়ার বন্ধ করে দেয়।
বেটার মার্কেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেনিস এম কেলেহার বলেছেন, এসভিবির অবস্থার এত দ্রুত অবনতি হয়েছিল যে এটি আর পাঁচ ঘণ্টাও টিকে থাকার অবস্থায় ছিল না। কারণ আমানতকারীরা আতঙ্কিত হয়ে ব্যাংক থেকে সমস্ত টাকা তুলে নিচ্ছিলেন। ফলে ব্যাংকটি মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেউলিয়া হয়ে যায়।
এ ছাড়া সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের দেউলিয়া হওয়ার পেছনে ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার বৃদ্ধিও একটি কারণ বলে মনে করেন ডেনিস এম কেলেহার। তিনি বলেন, যখন সুদের হার শূন্যের কাছাকাছি ছিল, তখন ব্যাংকগুলো কম ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতির লাগাম টানতে গিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ যখন সুদের হার বাড়িয়েছে, তখন সম্পদের দাম কমে গেছে। অন্যদিকে ব্যাংকগুলোও লোকসানের মুখে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সেবদাতা প্রতিষ্ঠান মুডির প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্ক জান্ডি বলেছেন, সুদের উচ্চহার প্রযুক্তিশিল্পে আঘাত হেনেছে। প্রযুক্তির স্টকগুলোর দাম কমে গেছে এবং প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর তহবিল সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে অনেক প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান ব্যাংকে রাখা টাকা উঠিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে।
তবে ডেপুটি ট্রেজারি সেক্রেটারি ওয়ালি আদেয়েমো জনগণকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। ব্যাংকিং খাত স্বাভাবিক আছে বলেও আশ্বস্ত করেছেন তিনি। সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ফেডারেল নিয়ন্ত্রকেরা এই বিশেষ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন। আমরা ব্যাংকিং খাতের সক্ষমতা ও স্থিতিস্থাপকতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।’