অদিতি মহসিন ১৯৭০ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গীত এবং সাহিত্যপ্রেমী, এবং ছোটবেলা থেকেই তাকে সঙ্গীতের প্রতি গভীর আগ্রহ জন্মায়। তার মা তাকে বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টসে (বিএএফএ) ভর্তি করেন। সেখানেই তিনি রবীন্দ্র সঙ্গীতে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন ১৯৮৮ সালে। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হোলি ক্রস কলেজ থেকে আই.এ. সম্পন্ন করেন। ১৯৯২ সালে ভারত সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে সঙ্গীত শিক্ষার জন্য পাড়ি দেন। সেখানে তিনি উভয় বাচেলর এবং মাস্টার্স ডিগ্রীতে প্রথম শ্রেণী লাভ করেন।
সঙ্গীত জীবন
অদিতি মহসিনের সঙ্গীত জীবন ছিল সমৃদ্ধ এবং সফল। শান্তিনিকেতনে সঙ্গীতের তত্ত্ব ও কৌশলে শিক্ষার পর তিনি বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনে নিজের স্থান পোক্ত করেন। তিনি তার কণ্ঠশক্তি উন্নত করার জন্য আরও প্রশিক্ষণ নেন এবং এটি তার সঙ্গীত জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি ২০০০ সাল থেকে চায়ানাটে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন এবং নিয়মিতভাবে বিভিন্ন টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেলে তার গান পরিবেশন করেন।
আলবামসমূহ
অদিতি মহসিনের বেশ কিছু জনপ্রিয় আলবাম মুক্তি পেয়েছে। তার প্রথম আলবাম “আমার মন চেয়ে রয়” ২০০৩ সালে মুক্তি পায় এবং এটি ছিল সঙ্গীত জগতের একটি বড় মাইলফলক। এর পর পর ২০০৪ সালে তার দ্বিতীয় আলবাম “শারদ প্রাতে” মুক্তি পায়। তার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আলবামগুলোর মধ্যে “বর্ষণমুখর রাতে ফাগুন সমীরণে” (২০১৩), “মম রুপে বেশে” (২০১৪) অন্যতম।
উল্লেখযোগ্য সঙ্গীত কার্যক্রম
অদিতি মহসিন বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাদেশ টেলিভিশন, এনটিভি, মাছরাঙ্গা টিভি, সিএটিভি, তারা মিউজিক ইত্যাদিতে নিয়মিত পারফর্ম করেন। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গীতে অসাধারণ দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। তার গান বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে গভীরভাবে প্রতিধ্বনিত হয়েছে। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “ছিন্নপত্র” নামক গানে প্লে-ব্যাক গেয়েছেন, যা একটি তথ্যচিত্রে ব্যবহৃত হয়েছিল।
বিশ্বব্যাপী কর্মসূচি
অদিতি মহসিন তার সঙ্গীতকে আন্তর্জাতিক পরিসরে নিয়ে গেছেন। তিনি যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন, ইন্দোনেশিয়া এবং অন্যান্য দেশে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন। ২০১৬ সালে তিনি লন্ডনের রয়্যাল আলবার্ট হলে একটি কনসার্টে পারফর্ম করেন।
ব্যক্তিগত জীবন
অদিতি মহসিন বাংলাদেশ রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী সংস্থার সদস্য এবং ঢাকা সিটি কমিটির সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করছেন। তিনি তার কণ্ঠের মাধ্যমে রবীন্দ্র সঙ্গীতের প্রতি মানুষের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা আরও বৃদ্ধি করছেন।
পুরস্কার এবং সম্মান
অদিতি মহসিন তার সঙ্গীত জীবনে বহু পুরস্কার লাভ করেছেন। ২০০৪ সালে তিনি “অনন্যা শীর্ষ দশ পুরস্কার” পান এবং ২০০৬ সালে সেরা রবীন্দ্র সঙ্গীত গায়িকা হিসেবে “সিটিসেল চ্যানেল-আই সঙ্গীত পুরস্কার” লাভ করেন।
অদিতি মহসিন তার দীর্ঘ সঙ্গীত জীবনে রবীন্দ্র সঙ্গীতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তার মধুর কণ্ঠ এবং গভীর সঙ্গীত জ্ঞান তাকে বাংলাদেশের সঙ্গীত প্রেমীদের কাছে জনপ্রিয় করেছে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে তার নাম আকাশচুম্বী হয়েছে।