রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (এনপিপি) জন্য রাশিয়া থেকে আসা মালবাহী একটি জাহাজকে বন্দরে ভিড়তে না দেওয়ার রেশ যেন এখনও চলছেই। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকায় বাংলাদেশ ওই জাহাজটিকে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি।
আর এর জেরে এবার (যুক্তরাষ্ট্রের) নিষেধাজ্ঞার চাপ প্রতিহত করতে বাংলাদেশকে তাগিদ দিয়েছে রাশিয়া। বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ওয়ার্ল্ড নিউক্লিয়ার নিউজ।
গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর উরসা মেজর নামে রাশিয়ার পতাকাবাহী একটি জাহাজের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পণ্য নিয়ে মোংলা বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। বাংলাদেশ জানতে পারে, সেটি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা ‘স্পার্টা-৩’ জাহাজ। যেটি রঙ ও নাম বদল করে উরসা মেজর নাম দেওয়া হয়। জাহাজটির আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সংস্থার (আইএমও) সনদ নম্বর: ৯৫৩৮৮৯২, যা প্রকৃতপক্ষে ‘স্পার্টা-৩’ জাহাজের সনদ নম্বর।
তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পরে বাংলাদেশ জাহাজটিকে বন্দরে ভিড়তে নিষেধ করে। যদিও জাহাজটিকে বন্দরে পণ্য খালাসের অনুমতি দিতে বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করে রাশিয়া। তবে জাহাজটি বন্দরে ভিড়তে না দেওয়ার বিষয়ে অনড় অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ।
পরে প্রায় দুই সপ্তাহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পণ্য খালাসের জন্য অপেক্ষা করেছিল জাহাজটি। কিন্তু পণ্য খালাসের জন্য নয়াদিল্লির অনুমতি পেতে ব্যর্থ হওয়ায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পণ্য খালাস না করেই ভারতের জলসীমা ছেড়ে যায় রুশ জাহাজটি।
এই ঘটনার জেরে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পরে গত মঙ্গলবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা যুক্তরাষ্ট্রকে ‘রুশ-বিরোধী নিষেধাজ্ঞা মেনে চলার জন্য নিরপেক্ষ দেশগুলোকে ক্রমবর্ধমানভাবে বাধ্য করার’ জন্য অভিযুক্ত করেন।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি- কয়েক ডজন রুশ জাহাজকে বাংলাদেশের বন্দরে প্রবেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমরা জানি, এই অবন্ধুসুলভ পদক্ষেপটি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ নিজেদের ইচ্ছায় নয় বরং যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় নিষেধাজ্ঞার হুমকির মুখে নিয়েছিল। … তৃতীয় কোনও দেশের নিজস্ব ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্য অনুসরণ করার এই ইচ্ছা ঐতিহ্যগতভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ রাশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যতকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে।’
মারিয়া জাখারোভা আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি বাংলাদেশের নেতৃত্ব আরও দৃঢ়তার সাথে তার জাতীয় স্বার্থকে জোরদার করার শক্তি খুঁজে পাবে। রাশিয়ার সাথে পারস্পরিক উপকারী অংশীদারিত্বে গড়ে তোলা এই সম্পর্ক নিঃসন্দেহে তাদের (বাংলাদেশের) স্বার্থে ইতিহাসের বিভিন্ন সময়কালে একাধিকবার কাজে এসেছে।’
এর আগে চলতি মাসে এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে মারিয়া জাখারোভা বলেছিলেন, ‘নির্দিষ্ট উদাহরণ হিসাবে, আমরা রাশিয়ান জাহাজ উরসা মেজরের ঘটনাটি উল্লেখ করতে পারি। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে জাহাজটি নোঙরের অনুমতি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ প্রত্যাহার করে নেয়। ইতোপূর্বে মংলা বন্দরে জাহাজটিকে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছিল ঢাকা। এ কারণে নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সরঞ্জাম সরবরাহ এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বিলম্বিত হয়, যা কোনোভাবেই বাংলাদেশের স্বার্থ পূরণ করে না’।
রাশিয়ার বার্তাসংস্থা তাস বলেছে, ৬৯টি রাশিয়ান জাহাজকে বাংলাদেশের বন্দরে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে। যদিও বার্তাসংস্থাটি বলেছে, শুধুমাত্র নির্দিষ্ট জাহাজগুলোতে ছাড়া বাংলাদেশে রাশিয়ান পণ্য আমদানিতে কোনও বাধা নেই বলে নিশ্চিত করেছে ঢাকায় অবস্থিত রুশ দূতাবাস।
তাস গত সপ্তাহে প্রকাশিত রিপোর্টে বলেছে, রূপপুরের কাজ ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে এবং সমস্ত প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করা হচ্ছে’ বলে রুশ দূতাবাস তাদেরকে জানিয়েছে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পণ্য সরবরাহের জন্য একটি বিকল্প পথ পাওয়া গেছে এবং এই মুহূর্তে সেটিই ব্যবহার করা হচ্ছে রুশ আণবিক শক্তি সংস্থা রোসাটম জানিয়েছে।
সূত্র: ঢাকা পোস্ট