জার্মান-ইরানি এক ভিন্নমতাবলম্বীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ইরান। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ওই ব্যক্তির নাম জামশিদ শারমাহদ। দুর্নীতির দায়ে পশ্চিম এশিয়ার দেশটির একটি আদালত তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের এই রায় ঘোষণা করে। বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের একটি আদালত জার্মান-ইরানি ভিন্নমতাবলম্বী জামশিদ শারমাহদকে ‘ব্যাপক দুর্নীতির’ অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে বলে দেশটির বিচার বিভাগ বলেছে। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ৬৭ বছর বয়সী শারমাহদকে ২০২০ সালে দুবাইতে ইরানি এজেন্টরা অপহরণ করে এবং তারপর সেখান থেকে জোর করে ওমানের মাধ্যমে ইরানে নিয়ে যায় বলে মনে করা হয়।
ইরান জামশিদ শারমাহদকে রাজতন্ত্রপন্থি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নেতা হিসেবে অভিযুক্ত করেছে। তবে জামশিদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং একটি মানবাধিকার গোষ্ঠী বলেছে, জোরপূর্বক ‘স্বীকারোক্তি’ আদায়ের ভিত্তিতে চরম অন্যায় বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি।
এদিকে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক জামশিদ শারমাহদের বিরুদ্ধে দেওয়া এই শাস্তিকে ‘পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য’ বলে নিন্দা করেছেন। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আপিল প্রক্রিয়ায় বিচারের ত্রুটিগুলো সমাধান করে সেই অনুযায়ী রায় সংশোধন করার এবং মৃত্যুদণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা ইরানের প্রতি আহ্বান জানাই।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘শারমাহদের ওপর মৃত্যুদণ্ড চাপিয়ে দেওয়া হলে তা তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে।’
ব্রিটিশ-ইরানি দ্বৈত নাগরিক আলিরেজা আকবরীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার মাত্র এক মাসেরও বেশি সময় পর জামশিদ শারমাহদকে মৃত্যুদণ্ড দিলো ইরান। আলিরেজা আকবরী ছিলেন সাবেক উপ-ইরানি প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং যুক্তরাজ্যের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।
ইরানের বিচার বিভাগের মিজান নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, তেহরানের একটি বিপ্লবী আদালত জামশিদ শারমাহদকে ‘পরিকল্পনা ও সন্ত্রাসী অভিযানের নেতৃত্ব দিয়ে দুর্নীতি ছড়িয়ে দেওয়ার’ জন্য দোষী সাব্যস্ত করেছে।
বার্তাসংস্থাটি অভিযোগ করেছে, জামশিদ শারমাহদ টোন্ডার নামে পরিচিত একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নেতা ছিলেন এবং তিনি ‘২৩টি সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন’। এসব হামলার পরিকল্পনার মধ্যে ‘পাঁচটি সফল হয়েছিল’, যার মধ্যে ২০০৮ সালে শিরাজের একটি মসজিদে বোমা হামলায় ১৪ জন নিহত হয়েছিল।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের আগস্টে ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয় জানায়, তারা একটি ‘জটিল অপারেশন’ এর পরে জামশিদ শারমাহদকে গ্রেপ্তার করেছে। সেসময় এ বিষয়ে আর কোনও তথ্য প্রকাশ করেনি তারা।
এর আগের মাসে শারমাহদ জার্মানি থেকে ফ্লাইটে করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌঁছেছিলেন। তিনি দুবাইয়ের একটি হোটেলে অবস্থান করছিলেন এবং ভারতের উদ্দেশে ফ্লাইটে ওঠার অপেক্ষায় ছিলেন। একপর্যায়ে নিজের পরিবারের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় শারমাহদের।