ডনবাস সংকট শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের সব চেষ্টায় রাশিয়া করেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেছেন, শান্তির প্রতিষ্ঠায় পশ্চিমা প্রতিশ্রুতি স্রেফ প্রতারণা। ‘নিষ্ঠুর মিথ্যা’ ছাড়া তারা আর কিছু বলতে পারে না।
পুতিন বলেন, ‘আমরা এই সমস্যাটি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছিলাম। এই কঠিন সংঘাত থেকে বের হতে শান্তিপূর্ণ উপায় নিয়ে আলোচনা করছিলাম। কিন্তু আমাদের পেছন পেছন ভিন্ন দৃশ্যকল্প তৈরি করা হচ্ছে।’
পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের সদস্যদের সামনে ভাষণে পুতিন ইউক্রেন সংঘাতের বিষয়ে রাশিয়ার রাজনৈতিক ও সামরিক অভিজাতদের আপডেট করেন। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ৯ টায় ভাষণ শুরু করেন পুতিন।
গোস্টিনি ডভোর হলের এই আয়োজনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু, সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ, অর্থমন্ত্রী আন্দ্রেই সিলুয়ানভ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ, প্যাট্রিয়ার্ক কিরিল। রাশিয়ার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরাও এতে যোগ দিয়েছেন।
বিদেশি সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের ‘বিদেশি এজেন্ট’ হিসেবে বিবেচিত করে চলতি বছর আয়োজনে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
ভাষণে পুতিন দাবি করেন, জৈবিক ও পারমাণবিক অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা করছে কিয়েভ।
তিনি বলেন, ‘তারা (পশ্চিম) শুধু সময় নিতে চাচ্ছিল। রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তারা চোখ বন্ধ করে থাকে।’
ভাষণে পুতিন তার ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেছেন, কিয়েভ সরকারের কাছ থেকে হুমকি এবং ঘৃণার পাশাপাশি নাৎসি আচরণ পেয়ে আসছে রাশিয়া।
পুতিন বলেন, ‘ইউক্রেন রাশিয়ার সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করছিল। বলা বাহুল্য, এ বিষয়টি কখনোই স্বীকার করবে না ইউক্রেন সরকার।’
ভাষণে ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলের বাসিন্দাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন পুতিন। কয়েক মাস আগে বিতর্কিত গণভোটে এ চারটি অঞ্চল রাশিয়ায় যোগ দেওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে।
পুতিন বলেন, ‘মাতৃভূমির সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্তের চেয়ে সাহসী আর কিছুই হতে পারে না। আমাদের পূর্বপুরুষ এবং আমাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের ভবিষ্যতের জন্য আমাদের বীরেরা লড়াই করছেন।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কিয়েভ সফরকে রাশিয়া স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবেই দেখছে বলে জানান ভ্লাদিমির পুতিন।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে পুতিন বলেছেন, তিনি চান একটি নিরাপদ আন্তর্জাতিক অর্থ পরিশোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে। যার ফলে পশ্চিমাদের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে।
তিনি বলেন, আমাদের ভুলের পুনরাবৃত্তি করা চলবে না। আমরা আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস হতে দিতে পারি না।
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেছেন, রুশ জনগণকে দুর্ভোগে ফেলার লক্ষ্যে আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সফল হয়নি।
তিনি দাবি করেছেন, রুশ মুদ্রা রুবলের আন্তর্জাতিক লেনদেন দ্বিগুণ হয়েছে।
ইউক্রেনে চলমান সংঘাতে পশ্চিমারা উসকানি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। একই সঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, তারা একটি অর্থনৈতিক যুদ্ধেও লড়াই করছে।
পশ্চিমারা কখনও কোনও কিছু অর্জন করতে পারবে না বলেও অঙ্গীকার করেছেন তিনি।
তার দাবি, রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা দেশগুলো নিজেরাই নিজেদের শাস্তি দিচ্ছে। এই মন্তব্যের সঙ্গে তিনি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ব্যবসা বন্ধ ও জ্বালানি সংকটের কথা তুলে ধরেছেন।
সূত্র: বিবিসি