বাংলাদেশে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- আব্দুল ওয়াহেদ মণ্ডল ও জাছিজার রহমান ওরফে খোকা।
র্যাবের পৃথক অভিযানে ওয়াহেদকে রাজধানীর উত্তর মান্ডা থেকে র্যাব-৩ এবং একই মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খোকাকে মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে র্যাব-২ এর একটি দল গ্রেপ্তার করে। র্যাব জানায়, তারা দীর্ঘ দিন পলাতক ছিলেন।
শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ গ্রেপ্তার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “১৯৭১ সালের পহেলা জুন সকালে আসামি আব্দুল ওয়াহেদ, তার পিতা আব্দুল জব্বার মন্ডল, তার ভাই জাছিজার রহমান মন্ডল, মোন্তাজ ও রঞ্জু মিয়াসহ হানাদার ও রাজাকারের সমন্বয়ে ২০-২৫ জনের একটি দল গাইবান্ধা সদরে বিষ্ণুপুর গ্রামে হিন্দু সম্পদায়ের বাড়িঘরে হামলা চালান। অম্বিকাচরণ সরকার এবং আব্দুর রউফের পাশাপাশি বাড়িতে আব্দুল জব্বার মন্ডল পূর্ব শত্রুতার জের ধরে দুই ছেলে ওয়াহেদ ও জাছিজারসহ রাজাকার বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে হামলা চালিয়ে লুটপাট চালান।”
একপর্যায়ে ওয়াহেদ এবং তার বাবা জব্বার মিলে অম্বিকাচরণকে ধরে বেধড়ক মারপিট করেন। আঘাতের ফলে অম্বিকাচরন মৃতপ্রায় হয়ে পড়ে থাকলে তারা তাকে মৃত মনে করে ফেলে রেখে লুটপাটের মালামাল নিয়ে চলে যান। পরে রাজাকার ও পাকহানাদার বাহিনীর সাথে সম্মিলিত হয়ে আব্দুল ওয়াহেদ তার ভাই জাছিজারসহ আরও বেশ কয়েক জনকে নিয়ে একই গ্রামের দিজেশচন্দ্র সরকারের বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট চালান।
এছাড়া ফুলকুমারী রাণী এবং তার ননদ সন্ধ্যা রাণী সরকারকে পাশবিক নির্যাতন করে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করান। সে ঘটনায় গৃহকর্তা দিজেশচন্দ্র সরকার বাধা দিতে গেলে তাকে তারা গাইবান্ধা আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেন এবং তার মরদেহ গুম করে দেন।
এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে ওই এলাকায় ৪৫ থেকে ৫০টি হিন্দু বাড়িতে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, অপহরণসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালিয়ে পরিবারগুলোকে দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যেতে বাধ্য করার অভিযোগ ছিল।
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, আব্দুর রউফ ২০০৯ সালে গাইবান্ধার আদালতে গ্রেপ্তার আব্দুল ওয়াহেদ ও জাছিজার রহমান এবং তাদের বাবাসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মামলা করেন। ২০১৪ সালে মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে স্থানান্তর করা হয়। বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হলে আব্দুল ওয়াহেদসহ অন্যান্য আসামিরা ২০১৬ সাল পর্যন্ত জামিন নেন। ২০১৬ সালে জামিনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে এবং পরে জামিনের আবেদন নামঞ্জুর হলে তখন থেকে আসামিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান।
তিনি জানান, তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে আনা প্রতিটি অভিযোগ প্রসিকিউশনের মাধ্যমে প্রমাণ হলে ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল ৫ জন আসামির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। মামলার রায় হওয়ার পর পলাতক অবস্থায় দুই আসামি আব্দুর জব্বার এবং রঞ্জু মিয়া মারা যান। পৃথক অভিযানে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ওয়াহেদ ও জাছিজারকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। অপর এক আসামি মোন্তাজ আলী পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যহত রয়েছে।