পূর্বাঞ্চলীয় রণক্ষেত্রে বছরের কঠিন সপ্তাহ পার করছে ইউক্রেন। গত কয়েক দিনে এই রণক্ষেত্রে রুশ সেনাদের কাছে কিছু ভূখণ্ড হারিয়েছে। কিন্তু উভয়পক্ষের কাছে প্রতীকী গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা কয়লা খনির শহর বাখমুত রক্ষায় কঠোর প্রতিজ্ঞায় আরও শক্তি নিয়োগ করছে তারা।
বিস্তৃত রণক্ষেত্রের ডনেস্কতে নিয়মিত গোলাবর্ষণ করে যাচ্ছে রুশ সেনারা। অঞ্চলটির অর্ধেক এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু তাদের মূল শক্তি নিয়োগ করেছে বাখমুতে। শহরটির পূর্বের শহরতলী তাদের নিয়ন্ত্রণে।
রুশ সেনাবাহিনীর হয়ে বাখমুতে আক্রমণে থাকা ভাড়াটে যোদ্ধা গোষ্ঠী ওয়াগনার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভজেনি প্রিগোজিন বলেছেন, আমরা প্রতিটি বাড়ি ও প্রতি ইঞ্চি ভূখণ্ডে হামলা চালাচ্ছি। কঠোর পরিশ্রম চলছে।
কিন্তু রাশিয়ার সেনাবাহিনী এই লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত খুব সুবিধা করতে পারেনি। যুদ্ধের ৫১তম সপ্তাহে এসে তারা নিজেদের কৌশল পরিবর্তন করছে।
৯ ফেব্রুয়ারি স্পষ্ট হয়েছে যে, বাখমুতে থাকা ইউক্রেনীয় সেনাদের রসদ পুনরায় সরবরাহ বন্ধের চেষ্টা করছে রাশিয়া।
এক রুশ সামরিক রিপোর্টার লিখেছেন, চাসভ ইয়ার ও বেরখোভকাতে ইউক্রেনের রসদ সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। এটি যদি ঘটে বাখমুত একটি কৌশলগত ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়বে এবং ইউক্রেনীয় সেনারা গোলাবারুদ, ওষুধ ও জ্বালানি সরবরাহ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
পর দিন ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ওয়াগনার বাহিনী তিন দিনে বাখমুতের উত্তর দিকে ২-৩ কিলোমিটার অগ্রসর হয়েছে। কয়েক মাস ধরে তেমন কোনও অগ্রগতি না পেলেও মাত্র কয়েক দিনে এই সাফল্য উল্লেখযোগ্য। এখন বাখমুতের উত্তর দিকে স্লোভিয়ানস্ককে সংযুক্ত করা মহাসড়ক হুমকির মুখে রয়েছে।
ডনেস্কের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে রুশ বার্তা সংস্থা তাস উল্লেখ করেছে, মস্কোর সেনারা বাখমুতে প্রবেশের সব সড়কের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এর মধ্যে পশ্চিম দিক থেকে শহরে প্রবেশ করার সড়কও রয়েছে।
তবে প্রকৃত পরিস্থিতি অনেক বেশি জটিল। ইউক্রেনের এক সামরিক বিশ্লেষক বলেছেন, বাখমুতে এখনও রসদ পৌঁছাচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অপর এক রুশ সামরিক রিপোর্টার রায়বার। তিনি বলেছেন, ই৪০ ও টি০৫০৪ নামে দুটি সড়ক রাশিয়ার ঘেরাওয়ের মধ্যে নেই। তবে এই দুটি সড়কে গোলাবর্ষণ করছে রুশ সেনারা।
প্রিগোজিনও নিশ্চিত করেছেন, ইউক্রেন বাখমুতে আরও সেনা ও গোলাবারুদ পাঠাচ্ছে। তিনি বলেছেন, সব দিকেই শত্রুরা আরও সক্রিয় হচ্ছে। রিজার্ভের আরও সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে। প্রতি দিন চার দিক থেকে বাখমুতের দিকে নতুন ৩০০-৫০০ যোদ্ধা এগোচ্ছে। প্রতি দিন গোলাবর্ষণ তীব্র হচ্ছে।
রুশ সেনারা বাখমুতের উত্তর, উত্তরপূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম দিক ঘেরাওয়ে ১২-১৩ ফেব্রুয়ারি আক্রমণ করে। কিন্তু এতে কাজ হচ্ছে না।
প্রিগোজিন বলছেন, উত্তরাঞ্চলে শত্রুদের ঘেরাও করার মতো কোনও অবস্থা নেই। বাখমুতে তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ছে রাশিয়া।
ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের মুখপাত্র সেরহি চেরেভাটি বলেছেন, ১৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ও ইউক্রেনের সেনারা ১৭ বার সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে। রুশ পক্ষে ২০৫ জনের মতো নিহত ও ২১৭ জন আহত হয়েছে।
উভয় পক্ষ বাখমুতে স্পষ্ট রাজনৈতিক গুরুত্বারোপ করার পরও ইউক্রেন প্রকাশ্যে এই লড়াইকে ছোট করে তুলে ধরছে।
ইউক্রেনীয় সামরিক গোয়েন্দা প্রতিনিধি আন্দ্রি চেরনিয়াক কিয়েভ পোস্টকে বলেছেন, রুশ সেনাদের প্রধান লক্ষ্য হলো পূর্ব ইউক্রেনে অন্তত কিছু কৌশলগত সাফল্য অর্জন। কিন্তু রাশিয়ার জনবলের ঘাটতি রয়েছে।
বাখমুত ঘেরাওয়ের লক্ষ্যে রাশিয়া কিছুটা সফলও হয়েছে। ক্রাসনা হোরা ১২ ফেব্রুয়ারি দখল করেছে ওয়াগনার গ্রুপ, দাবি করেছেন প্রিগোজিন। কিন্তু অতীতেও দখলের দাবি করেছিল ওয়াগনার গ্রুপ। সব সময় রাশিয়া তা স্বীকার করেনি। কিন্তু এবার রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, তাদের স্বেচ্ছাসেবী সেনাদের বিভাগ শহরটি দখল করেছে।
১৫ ফেব্রুয়ারি রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় লুহানস্ক অঞ্চলে বড় অগ্রগতির দাবি করেছে। তারা বলেছে, আক্রমণের সময় ইউক্রেনীয় সেনারা এলোপাথাড়ি ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত পিছু হটেছে।
লুহানস্কের ইউক্রেনীয় গভর্নর সেরহি হাইদাই বলেছেন, ভিন্ন ভিন্ন দিক থেকে ঢেউয়ের মতো হামলা হচ্ছে। তবে রুশ সেনারা লুহানস্ক অঞ্চলের প্রশাসনিক সীমান্তে পৌঁছার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। রুশ সেনারা ক্রেমিন্নাতে সেনা ও সরঞ্জাম জড়ো করছে। তারা এটিকে সবচেয়ে সহজ মনে করছে। এজন্য তারা বড় আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সূত্র: আল জাজিরা