লাশ
যারা লাশ বহন করে নিয়ে যাচ্ছে
তারা সবাই পিপাসার্ত
জ্যোৎস্না খেতে খেতে
বাদুড় হয়ে যাচ্ছে মানুষ
আর জলের কাছে গিয়ে
মাছ হতে চাইছে
সেইসব মাছের মুখে
সোনার নাকছাবি
আর শিরদাঁড়া বেয়ে
জলের শিরশিরানি
নেমে যাচ্ছে
সব লাশগুলি বাতাসে ভাসছে
কেউ আর বহন করতে পারছে না
সব লাশগুলি ডানাঅলা
সরীসৃপ হয়ে যাচ্ছে
খণ্ড খণ্ড মানুষ
খণ্ড খণ্ড মানুষ উড়ে যাচ্ছে
নিয়তির ঝাপসা আকাশে
সুন্দর বেলুনের মতো
আমাদের বেলা শেষের উঠোনে
উড়ে আসছে সন্ধ্যার পাখি
ওদের রঙিন ঠোঁট দেখতে পাই না
শুধু ডাক ঝরে পড়ে সিঁদুর রঙের ধুলোয়
খণ্ড খণ্ড মানুষের ধূসর ডানায়
ঢেকে যায় নিসর্গের অপার্থিব জ্যোতি
মাছ
জলের তলায় ডুবে যাচ্ছে মাছ
এমন মাছ কখনও দেখিনি
আমারা স্থলচর
জলের নিকটে যেতে পারি নাকো
ঢেউ গুনে গুনে এক সময় ঘুমিয়ে যাই
সারারাত মাছেদের মৈথুনের ঘরবাড়ি ভরে যায় চাঁদের আলোয় আলোয়
মাছেরা সিনেমা বানায়
ঢেউ তোলে, রঙিন সব ঢেউ
সকালবেলায় দেখি কিছু কিছু চুমু ভেসে ওঠে
চুমুকে ছেঁকে আমরা ঘরে আনতে চাই
কিন্তু আমাদের জল কই?
চোখের জলের নদীতে চুমু নয়
স্বপ্নের মরা লাশ ভাসে
আমাদের ভেতরে ঘর
দুয়ার নেই, দুয়ার নেই
বাইরে বাউল চেঁচিয়ে কাঁদে
আমাদের ভেতরে ঘর
সারাদিন কোলাহল
থালাবাটি বেজে ওঠে
ধুলো ওড়ে, প্রবল জ্বর
তৃষ্ণাকাতর ঘুমহীন রাত
সেদ্ধ হয় মোহের ভাত,
জল গড়ায় প্রবল স্রোত
স্রোতে ভাসে আবেগমাছ ।
হলুদ কিরণ আসছে যাচ্ছে
দেহ খুলছে বাসন্তী গাছ ,
বেজে উঠছে রমণ বাঁশি
সুর কুড়োচ্ছে ভ্রমের হাসি।
বাইরে জাগ্রত দিন
দিনের কমল রাশি রাশি
ফুটে উঠছে উদাসীন।
ভেতরে ভেতরে সিংহ
অরণ্য,অরণ্যময়—
গর্জন, গর্জন শুধু—
তিরবিদ্ধ চেতনায়।
হাহাকার শুয়ে থাকে
প্রেমের শয্যায় মরা চাঁদ
ধুলোময় আকাঙ্ক্ষার
উদ্ভিন্ন নষ্ট সংঘাত।
রক্তাক্ত বিলাস এঁকে
আসে কার প্রেতছায়া?
নিজেই নিজের জাদুকর
সঞ্চারিত হতে থাকে মায়া।
ব্যাধের কাহিনি
আকাশ রুমাল উড়িয়ে দিয়েছে
তার নিচে আমাদের ব্যাধের কাহিনি
সঙ্গমের বিস্তার থেকে শোক ও অশ্রুর পর্বত শুধু
তারই চূড়ায় উঠে প্রতিদিন গার্হস্থ্য চুম্বন রেখে আসি
চুম্বনের ভেতর দিয়ে সম্পর্কের রোদ পড়ে
আশা ও কলঙ্কের ভেঁড়ারা চেঁচায়
ওদের কারোরই তেমন সম্ভ্রম নেই
কিছু কিছু চোখ শুধুই কাজললতা
তবু এক অদ্ভুত বিশ্রামের ছায়া দুলে ওঠে
পাঁজরের নিকটেই আয়নার নিকেল
সত্যের সংশ্রব থেকে পর্যটক নেমে আসে
মেঘেরাও খুলে দেয় দ্বার
আমাদের অপার্থিব হাসিটুকু পাখিদের দিই
ঘরে ঘরে অনালোকিত বিরহ সাজাতে থাকি
কর্তব্যের সমূহ চাবিতে খুলে ফেলি ব্যক্তিগত তালা।
মধ্যবিত্ত
যে দ্যাখে দেখুক
তোমাতে আমাতে আজ নেমেছি পথে
আমরা অক্ষরবৃত্ত, আমরা লবণযুক্ত মোটাভাতে
মধ্যবিত্ত পথ, কাঁচাপাকা, বিপজ্জনক
মাঝে মাঝে গর্ত আর সংঘাত
আগে পিছে কুকুর ডাকে
কুকুরের ডাকনামে আমাদেরও ডাকে
ঝিনুক খুঁজতে আসিনি
ময়লা পোশাক কেচে নিতে
এসেছি সাগরের ঘাটে
ঢেউয়ে ভেসে যাচ্ছে মূল্যবোধ
কীভাবে সম্মানীয় ভাবব আজ?
সূর্যের দিকে হাত —আলো দাও
রাষ্ট্রের দিকে হাত —শান্তি দাও
চারিদিকে সমাজ সমাজ…
সম্পর্ক কী করে রাখব?
তোমাতে আমাতে মাঝামাঝি
আমৃত্যু হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছি।