যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের আশঙ্কাই সত্যি হতে চলেছে। ভয়াবহ ভূমিকম্পে গত দুই দিনে তুরস্ক ও সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় ১০ হাজারে।
উদ্ধারকর্মীদের বরাত দিয়ে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকা থেকে এ পর্যন্ত ৯ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তুরস্কে ধসে পড়া বিভিন্ন ভবনের ধ্বংসস্তুপ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার ১০০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন কর্মীরা। আর সিরিয়ায় উদ্ধার করা মরদেহের সংখ্যা আড়াই হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
সোমবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তুরস্ক ও তার প্রতিবেশী দেশ সিরিয়া। ওই ভূমিকম্পের ১৫ মিনিট পর ৬ দশমিক ৭ মাত্রার আরও একটি বড় ভূমিকম্প এবং পরে আরেও অনেকগুলো আফটারশক হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তাৎক্ষণিক এক বিবৃতিতে বলা হয়, তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চীলয় কাহমানমারাস প্রদেশের গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে ভূপৃষ্ঠের ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার গভীরে ছিল ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল।
সোমবারই আর এক বিবৃতিতে ইউএসজিস জানিয়েছিল, শক্তিশালী এই ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে এবং এটি এক লাখে পৌঁছে যাওয়ারও শঙ্কা আছে।
তুরস্কের হাতায় প্রদেশে বিভিন্ন হাসপাতালের সমানে পড়ে আছে সারি সারি কম্বল বা কাপড়ে জড়ানো মৃতদেহ। ভূমিকম্পের আঘাতে ধসে পড়া বিভিন্ন ভবনের বাসিন্দাদের কেউ রাত কাটাচ্ছেন গাড়ির ভেতরে কেউবা খোলা আকাশের নিচে।
বহু ভবনের ধ্বংসস্তুপে এখনও চাপা পড়ে আছে শত শত মৃতদেহ। তাদের সঙ্গে আটকা পড়ে আছেন হাজার হাজার আহত মানুষও। বিপর্যয়ের যে ব্যাপকতা, তাতে উদ্ধারকর্মীদের সার্বক্ষণিক তৎপরতা সত্ত্বেও মৃতের হার আরও বৃদ্ধির সমূহ আশঙ্কা আছে।
এদিকে, যারা শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হননি— তাদের সামনে প্রকট হয়ে উঠছে আশ্রয় ও খাদ্যসংকট। অনেক এলাকায় এখনো কোনো ত্রাণসামগ্রী পৌঁছায়নি।
তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর আন্তাকিয়ার বাসিন্দা মেলেক রয়টার্সকে বলেন, তার এলাকায় গত দু’দিনে কোনো ত্রাণ আসেনি।
৬৪ বছর বয়সী এই নারী বলেন, ‘এর আগে যত দুর্যোগ এসেছে, দ্রুত খাদ্য সহায়তা পাওয়া গেছে; কিন্তু এবার দু’দিন পেরিয়ে গেলেও আমরা কোনো ত্রাণ পাইনি।’
‘খাবার নেই, তাঁবু নেই… এই ঠান্ডায় খোলা আকাশের নিচে অভুক্ত অবস্থায় আমরা কী করে বাঁচব!’