পাকিস্তানের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ার রাজধানী পেশোয়ারে কয়েক দিন আগে যে আত্মঘাতী বোমা হামলা ঘটল, সে সম্পর্কিত হালনাগাদ কিছু তথ্য দিয়েছেন পেশোয়ার পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম জাহ আনসারি।
বৃহস্পতিবার পেশোয়ারে এক সংবাদ সম্মেলনে আনসারি বলেন, আত্মঘাতী ওই হামলাকারী পুলিশের ইউনিফর্ম (পোশাক ও অন্যান্য সরঞ্জাম) পরিহিত অবস্থায় মোটরসাইকেলে করে মসজিদের কাছাকাছি আসেন এবং ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায়ই মসজিদে ঢুকেছিলেন তিনি।
তারপর জোহরের নামাজ শুরু হলে নিজের শরীরে বেঁধে রাখা বোমা বিস্ফোরণ ঘটান।
পেশোয়ারের যে মসজিদে হামলা হয়েছে, সেটির অবস্থান পুলিশ লাইন্সে— যা শহরের সবচেয়ে সুরক্ষিত এলাকাগুলোর (রেড জোন) মধ্যে একটি। পুরো এলাকার প্রবেশপথে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে, কিন্তু ইউনিফর্মের সুবিধা নিয়ে সেসব ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম হয়েছেন হামলারকারী।
‘আমি স্বীকার করছি যে, আমাদের নেওয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ঘাটতি ছিল। আমার বিভাগের লোকজন তাকে শনাক্ত করতে পারেনি, তবে এক্ষেত্রে আমি তাদের দোষ দেব না। পেশোয়ার পুলিশের প্রধান হিসেবে হামলায় ক্ষয়ক্ষতির দায় আমি নিজে নেবো।’
সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ১ টা ৪০ মিনিটে জোহরের নামাজ চলার সময় আত্মঘাতী বোমা হামলা ঘটে পেশোয়ারের পুলিশ লাইন্স এলাকার একটি মসজিদে। শক্তিশালী সেই বোমার আঘাতে মসজিদের ছাদ ও একপাশের দেওয়াল ধসে পড়ে। ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন হামলাকারী নিজেও।
পেশোয়ার পুলিশের প্রধান মুহম্মদ ইজাজ খান পাাকিস্তানের জাতীয় দৈনিক ডনকে জানিয়েছেন, হামলার সময় মসজিদটিতে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ মানুষ নামাজ পড়ছিলেন। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, হামলায় নিহত হয়েছেন ৮৪ জন এবং তাদের মধ্যে ৩ জন ব্যতীত সবাই পুলিশবাহিনীর সদস্য। আহতদের মধ্যেও ৯০ শতাংশ পেশোয়ার পুলিশের লোক।
পাকিস্তানের ইতিহাসে এর আগে পুলিশকে লক্ষ্য করে এত বড় মাত্রার হামলা ঘটেনি। হতাহত ও ভয়াবহতার হিসেবে এটি পেশোয়ারে এ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সবচেয়ে প্রাণঘাতী নাশকতাগুলোর মধ্যে একটি।
আফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন তালেবানগোষ্ঠীর পাকিস্তান শাখা তেহরিক-ই তালেবান (টিটিপি) ইতোমধ্যে এই হামলার দায় স্বীকার করেছে, তবে সত্যিই এই হামলার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক আছে কি না— তা নিয়ে এখনও সন্দিহান পুলিশ।
বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে মোয়াজ্জেম জাহ আনসারি বলেন, ‘আমরা এটুকু নিশ্চিত হয়েছি যে হামলাকারী কোনো একটি জঙ্গি গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন, তবে টিটিপির সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ ছিল কিনা— তার কোনো প্রমাণ এখনও আমরা পাইনি।’