বিশ্বাসের ক্রম সন্ধ্যায়
যন্ত্রণার কার্নিশে জ্যোৎস্না গড়ায় চাঁদ
আমি কল্পনাদের উহ্য রাখি
না বাজুক আজ তাদের হাতের চুড়ি
ক্ষুধার্ত আত্মা জ্যোৎস্নার আমানি চেয়ে চেয়ে
মধ্যযুগের কোনো অস্পষ্ট কাঠবেড়ালি
যার শব্দে কোনো শস্য নেই
নিষ্ফল মন্বন্তরে নিরুচ্চার কাতরানি
কোন্ আলো আর কোন্ ধর্মোৎসবে যাবে সে ?
সবই নষ্ট ঈশ্বরের পদাবলী, ঘৃণিত আবেগ
ঝড়ের দাপট সহ্য করে ঘনঘোর বর্ষণ ক্লেশে
নিজেকে বাঁচিয়ে রাখে অটুট সংবেদনায়
ভিখিরি যুগের সংকটে আবিল ছায়ার দহন পাক খায়
নিষিক্ত জ্বরের ঘামে ক্লান্ত উল্লাস
কোথাও পৌরুষ নেই শুধু বিহ্বলতা কাঁপে
মানুষের কাছে চূর্ণ মানব, ক্ষয়িষ্ণু বীর্য
অযোগ্য আদিম প্রশ্রয় পড়ে আছে —
এক তস্তরি উত্তরণ অথবা চুমুকে চুমুকে নিগূঢ় আত্মজোশ
আজ বিশ্বাসের ক্রম সন্ধ্যায় যদি নামে !
বিদ্যুতের দেশ
সে একটি বিদ্যুতের দেশ
বিস্ময় চিহ্নের পরে আর কী চিহ্ন হতে পারে
ভাবতে ভাবতে একটি বিশ্বস্ত হ্রদ পেরিয়ে যাই
পুরোনো যুগের কোনো আয়নায় নিজেকে দেখি
চেনা যায় না যদিও তবু পূর্ণচ্ছেদ বসিয়ে রাখি
পূর্ণচ্ছেদের ইহজাগতিক করুণা বিলাস
বিস্ময় চিহ্নের বিন্দুটি ঠিক সরে সরে যায়
রাত্রির নক্ষত্রের মতো
মনের মধ্যে উদার আকাশের আস্ফালন
অন্ধকার হয়ে আসে আর গর্জন করতে থাকে
বৃষ্টি আসে না যদিও, শুধু বৃষ্টির উপক্রম
মনে মনে শান্ত হই আর পূর্ব কালের অন্তরিত কিছু ঢেউ
গুনে গুনে দেখি
একটা ঢেউ আর একটা ঢেউয়ের পিছু পিছু আড়ালে চলে যায়
কমা আর সেমিকোলন বসাবার আগেই মোহিনী বিদ্যুৎ আসে
চোখ ছলছল করে — এইসব পার্থিব চোখ
অন্ধকার ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট রাখে না
দীন হীন ক্লান্ত পথিক এক পার হই বিদ্যুতের দেশ…
শর্তগুলো আদিম, স্বার্থপর, প্রহেলিকাময়
কতকগুলো শর্ত নেমে আসে শীতকালের রোদে
শর্তগুলো আদিম, স্বার্থপর, প্রহেলিকাময়
ঘোরাফেরা করে আমাদের জটিল সংসারে
আমি যৌবনের দূত , সব খাঁচা উল্টে ফেলি
পাখি উড়িয়ে দিই
কালস্রোতে ভাসিয়ে দিই নিজের উন্মুখ পরিচয়
শর্তরা তবু থাকে তাদের ধারাল ক্ষুর ও ব্লেড নিয়ে
তাদের রক্তাক্ত পিপাসা নিয়ে
পৃথিবীময় অসফল ঘুমের দরোজা দিয়ে প্রবেশ করে
আর একটি নির্লজ্জ সাম্রাজ্যের অস্ত্রশালার উদ্বোধন করে
অস্তিত্ব কিছুটা নুয়ে পড়ে —
শর্তদের তাঁবুর ভেতরে অন্ধকার, অন্ধকারে ধর্মের কোলাহল
নিষ্ঠুর কদর্য আর বিকৃত উল্লাস ক্লান্ত করে দেয়
নিজেকে নিজের পাশে রাখি, যতটুকু আড়াল করা যায়
পৃথিবীর সমস্ত নোনা বাঁশি কিছুটা নিজস্ব সুর চেনে
নিঃশর্তে যেতে পারে নিজস্ব কিছুটা পথ…
গাছ হয়ে যাই
আমার জীবিতকালের শহর তীব্র ঘ্রাণ ছড়িয়ে দিচ্ছে
রঙিন পোশাক উড়ছে সবাই চিহ্ন নিয়ে
চিহ্নবিহীন কোথায় যাব?
একলা পাগল, মোড়ের দোকান, দাঁড়িয়ে আছি বাউল হয়ে
তেড়ে আসছে বিচিত্র যান
হুংকার আসছে — শাসন ভাষণ ত্রাস
রাস্তা ছেড়ে দাঁড়িয়ে আছি
হা হা রাস্তা — রাস্তা তবু করছে গ্রাস
কোন্ চোখে দেখব সত্য?
দেখা যায় না, শূন্য ঘরে অবাস্তব ঘুমাচ্ছে একা
কে তাকে জাগাবে এসে ?
হোর্ডিং ফেস্টুন সবাই হাঁটছে — পোশাকবিহীন মরীচিকা
দেখতে দেখতে গাছ হয়ে যাই
মনখারাপের পাখিগুলি বাসা বাঁধে
অসহিষ্ণু উত্তেজনারা সাপ হয়ে যায়
শিকার করে নষ্ট সময় — বুকের মাঝে নীরবতা শুধুই কাঁদে!
বন্ধু
ভ্রান্তর বন্ধুও বিভ্রান্ত
হাত বাড়িয়ে দিলে হাত ধরি
হাতে লেগে থাকে ঘ্রাণ
ঘ্রাণে ছুটে আসে প্রজাপতি
বজ্রগর্ভ আকাশের নীচে দাঁড়াই
কারও ঘর নেই
বিপদের সংকেতগুলি জ্বলে
সংকেতে আলো হয়
আমাদের কারও আলো নেই
নষ্ট পালক কুড়িয়ে বালক হই
তনু রেখে মনকে নিয়ে উড়ি
আমাদের কারও ডানা নেই
ধু ধু আকাশ , মরুতীর্থের গান
ভ্রান্ত বিভ্রান্ত মিলে গাই….
অস্তিত্ব পাথরের মতো
কাতুকুতু পাড়ায় হাসিরা জেগে উঠেছে
ময়ূর ও সাপের খেলা দেখতে দেখতে
ক্রমশ বার্ধক্য আসে
দোকানগুলি সব বন্ধ হয়ে যায় একে একে
কোথায় ফিরতে হবে আমাকে ?
অলৌকিক রশ্মি এসে সামনে দাঁড়ায়
রমণী শরীর হয়ে রমণ গঙ্গায় ভাসে
অথবা নিসর্গ বিদ্যুৎ হয়ে এঁকেবেঁকে চলে
আমি আর মাথা উঁচু করতে পারি না
অস্তিত্ব পাথরের মতো ভারী হয়ে
একটা নিথর পৃথিবী হয়ে যায়…..