আফগানিস্তানের কট্টরপন্থি তালেবান শাসকেরা দেশটির নারীদের উচ্চশিক্ষায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এছাড়া নারী এনজিও কর্মীদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তারা। তীব্র মানবিক সংকটে থাকা দেশটিতে এখন নারী কর্মীর অভাবে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
গত সপ্তাহে জাতিসংঘের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নারী কর্মকর্তা চার দিনের সফরে আফগানিস্তানে গেছেন। কাবুলে তালেবান নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তারা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছেন। তালেবান যেন দেশের ভালোকে অগ্রাধিকার দেয়, সে অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
বুধবার (২৫ জানুয়ারি) জাতিসংঘের ডেপুটি সেক্রেটারি-জেনারেল আমিনা মোহাম্মদ বলেছেন, তারা আফগান নারীদের ওপর বিধিনিষেধ তুলে নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন। বিশেষ করে ত্রাণ সহায়তা বিতরণে নারীদের কাজ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে তারা বেশ কঠোরভাবে তাদের অবস্থান তালেবানকে জানিয়েছেন। এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক সংস্থার সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের ২ কোটি ৮৩ লাখ মানুষ, অর্থাৎ দেশটির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের টিকে থাকার জন্য জরুরি সহায়তা প্রয়োজন।
আফগানিস্তানে এবারের প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে এ পর্যন্ত ১৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার তালেবান সরকারের এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ নিয়ে এক সপ্তাহের কম সময়ের ব্যবধানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ঠাণ্ডা আবহাওয়ার পাশাপাশি ত্রাণসংকটের কারণে আফগান জনগণকে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
আফগানিস্তান এবার শীতলতম একটি বছর পার করছে। জানুয়ারির শুরুতে তাপমাত্রা কমে মাইনাস ২৮ ডিগ্রিতে নেমে আসে। অন্য বছরগুলোতে এ সময়ে তাপমাত্রা ০ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে।
গত রবিবার জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক কার্যালয়ের এক টুইটার পোস্টে বলা হয়, সংস্থাটি ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৭০০ মানুষকে কম্বল, উষ্ণতা এবং আশ্রয় দিয়েছে। তবে আরও সহায়তা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছে তারা।
গত মঙ্গলবার তালেবানের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শফিউল্লাহ রাহিমি সিএনএনকে বলেন, প্রায় ৭০ হাজার গবাদিপশু ঠাণ্ডায় জমে মারা গেছে।
এমন ভয়াবহ মানবিক সংকটময় পরিস্থিতিকে আরও তীব্র করে তুলেছে নারীদের ওপর আরোপ করা তালেবানের নিষেধাজ্ঞা। তালেবানের এমন সিদ্ধান্তের পর বেশ কয়েকটি সাহায্য সংস্থা দেশটিতে তাদের কার্যক্রম স্থগিত করেছে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তালেবান সরকার নারীদের শুধুমাত্র স্বাস্থ্য খাতে কাজ করার অনুমতি দিয়েছে।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক ও জরুরি ত্রাণ বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মার্টিন গ্রিফিথস বলেছেন, “তিনি আশা করেন, আফগান নারী কর্মীদের আরও মানবিক খাতে কাজ করতে তালেবান সরকার অনুমতি দেবে।”