ইউক্রেনকে আরও ট্যাংক দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়াকে প্রতিহত করতে পশ্চিমা মিত্রদের কাছে ট্যাংক চেয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির আবেদনের পর এই ঘোষণা দিলো দেশ দুটি।
কিয়েভ এই ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও মস্কো বলছে, এটি “অত্যন্ত বিপজ্জনক” সিদ্ধান্ত। বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ইউক্রেনকে ১৪টি লেপার্ড ট্যাংক দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জার্মানি। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা ৩১টি আব্রামস ট্যাংক দেবে ইউক্রেনকে।
স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার ইউক্রেনকে লেপার্ড-২ ট্যাংক দেওয়ার ঘোষণা দেন জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ। সকালে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে তিনি এ ঘোষণা দেন। এ সময় ওলাফ শলৎজ বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে কীভাবে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা যায়, এ সিদ্ধান্ত তার একটি নমুনা।”
পরে এক বিবৃতিতে জার্মান চ্যান্সেলর আরও বলেন, “ইউক্রেনকে দুই ব্যাটালিয়ন লেপার্ড-২ ট্যাংক দেওয়া হবে। প্রথম ধাপে জার্মান সেনাবাহিনীর ভান্ডার থেকে ১৪টি লেপার্ড-২ ট্যাংক দেওয়া হবে। এ ট্যাংক পরিচালনার জন্য ইউক্রেনের সেনাদের প্রশিক্ষণও দেবে বার্লিন।”
লেপার্ড-২ ট্যাংক বিশ্বের প্রথম সারির যুদ্ধট্যাংকের একটি। জার্মানির সেনাবাহিনী এবং অনেক ইউরোপীয় দেশের সামরিক বাহিনী এই ট্যাংক ব্যবহার করে। ইউরোপীয় নয়—এমন দেশগুলোর মধ্যে কানাডা ও ইন্দোনেশিয়া এ ট্যাংক ব্যবহার করে। আফগানিস্তান, কসোভো ও সিরিয়ার সংঘাতে ডিজেল ইঞ্জিনচালিত এ যুদ্ধট্যাংকের ব্যবহার দেখেছে বিশ্ববাসী।
জার্মানির এ ঘোষণার ফলে অন্য দেশও চাইলে ইউক্রেনে লেপার্ড ট্যাংক রপ্তানি করতে পারবে। এর ফলে যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান নেওয়ার জন্য পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ডসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশ জার্মানিতে তৈরি লেপার্ড-২ ট্যাংক ইউক্রেনের হাতে তুলে দিতে যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে আর কোনো বাধা থাকছে না। ফলে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়তে ইউক্রেনের অস্ত্রভান্ডার আরও সমৃদ্ধ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে গতকাল ইউক্রেনকে আব্রামস ট্যাংক দেওয়ার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। মার্কিন প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এএফপিকে জানান, ইউক্রেনকে মোট ৩১টি এম-১ আব্রামস ট্যাংক দেবে ওয়াশিংটন।
তিনি আরও বলেন, “এই ট্যাংক রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা করা জটিল একটি কাজ। এ জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়। বিষয়টি কীভাবে সামাল দেওয়া হবে, তা নিয়ে কৌশল নির্ধারণ করা হচ্ছে।”
গত শতকের আশির দশকে মার্কিন সেনাবাহিনী প্রথম আব্রামস ট্যাংক ব্যবহার করে। ইউক্রেনকে এই ট্যাংক দেওয়ার বিষয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের প্রেস সেক্রেটারি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট রাডার গত মঙ্গলবার বলেন, “এই ট্যাংক যুদ্ধক্ষেত্রে সক্ষমতা বাড়াতে খুবই কার্যকর; যদিও এটা পরিচালনা করতে জটিল একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ইউক্রেনকে এই ট্যাংক দেওয়ার আগে আমাদের নিশ্চিত হতে হবে যে তারা সঠিকভাবে ও টেকসই উপায়ে এটির ব্যবহার করতে পারছে।”
যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ ট্যাংক পাঠালে তা হবে “আরেকটি নির্লজ্জ উসকানি” এমন মন্তব্য করে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আনাতোলি আন্তোনভ টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টে বলেছেন, “ওয়াশিংটন যে আমাদের কৌশলগত পরাজয় দেখতে চাইছে, তা স্পষ্ট। নেটোর অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র যেভাবে ধ্বংস হয়েছে যুক্তরাষে।ট্রর ট্যাংকগুলোকেও আমাদের সামরিক বাহিনী সেভাবেই ধ্বংস করবে।”
প্রসঙ্গত, যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়াকে প্রতিহত করতে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মিত্রদের কাছে দীর্ঘদিন ধরে ট্যাংকসহ ভারী অস্ত্র চেয়ে আসছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তার এমন চাওয়ার প্রতি সাড়া দিয়ে ইতোমধ্যে ইউক্রেনকে ১৪টি চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাংক দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। ফ্রান্স, পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ডসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশও ইউক্রেনকে ট্যাংক দিতে রাজি হয়েছে।