নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখছে মালাউই। ইতোমধ্যে দক্ষিণপূর্ব আফ্রিকার এই দেশটিতে কলেরায় মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ছাড়িয়েছে এবং আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ৩০ হাজার ৬২১ জনের।
মঙ্গলবার মালাউইর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করা হয়েছে এই তথ্য।
মালাউইর গত ২০ বছরের ইতিহাসে এটি কলেরায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এর আগে ২০০১ সালের নভেম্বর থেকে ২০০২ সালের মার্চ পর্যন্ত মালাউইতে কলেরায় মৃত্যু হয়েছিল ৯৬৮ জনের। বর্তমান প্রাদুর্ভাবের আগ পর্যন্ত এটিই এক মৌসুমের কলেরায় সর্বোচ্চ মৃতের রেকর্ড হিসেবে নথিভুক্ত ছিল।
এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক এসব মৃত্যুর অধিকাংশই ঘটেছে মালাউইর দুই প্রধান শহর লিলংউই ও ব্লানতায়ারেতে।
পূর্ব আফ্রিকা অঞ্চলের অন্যান্য দেশের মতো মালাউইতেও প্রতি বছর নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত কলেরার প্রাদুর্ভাব থাকে এবং গড়ে মৃত্যু হয় ১০০ জনের। কিন্তু চলতি মৌসুমে কলেরা যেভাবে ছড়াচ্ছে দেশটিতে, তাতে মৃত্যুর মিছিল কোথায় গিয়ে থামে— তা নিয়ে রীতিমতো শঙ্কায় আছে দেশটির সরকার।
কলেরা প্রতিরোধে ২০২২ সালে জাতিসংঘ থেকে প্রায় ৩০ লাখ ডোজ কলেরার টিকা নিয়েছে মালাউেই। ইতোমধ্যে সেসব টিকা জনগণকে দেওয়াও হয়েছে। তবে দেশটির সরকারের ভাষ্য, প্রয়োজনের তুলনায় জাতিসংঘের এই টিকা সহায়তা ছিল অপ্রতুল।
‘সমস্যা হলো— কলেরার যাবতীয় টিকা কেবল জাতিসংঘের অনুমোদিত কোম্পানিগুলো উৎপাদন করে এবং টিকা বিতরণও করা হয় জাতিসংঘেল মাধ্যমে। ফলে বেশিরভাগক্ষেত্রেই প্রয়োজন অনুযায়ী টিকার সরবরাহ পাওয়া যায় না,’ এএফপিকে বলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আদ্রিয়ান চিকুম্বে।
মালাউইর বেসরকারি অলাভজনক স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা মালাউই হেলথ ইকুইটি নেটওয়ার্কের পরিচালক জর্জ জোবে এএফপিকে বলেন, চলতি মৌসুমের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবের অন্যতম কারণ—কলেরা সম্পর্কিত বিভিন্ন কুসংস্কার ও ভুয়া তথ্য প্রচার। জর্জ জোবে বলেন, ‘বেশিরভাগ মানুষ এটা স্বীকার করতেই প্রস্তুত নয় যে দেশে কলেরা ছড়াচ্ছে। অনেক সম্প্রদায়ের লোকজন আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসতেও আগ্রহী নন।’
তবে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী খাম্বিজ শিপোন্ডা জানিয়েছেন, জনগণের অসচেতনতার জন্যেই ছড়াচ্ছে কলেরা। এএফপিকে বলেন, ‘আমরা গত তিন মাস ধরে সরকারিভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছি— যেন পান ও গৃহস্থালী কাজে ব্যবহার আগে পানি জীবাণুমুক্ত করা হয়। পানি বিশুদ্ধকরণ ওষুধ সহজলভ্য করার চেষ্টাও করেছি। যারা আমাদের কথা শুনছেন— তারা ক্ষতিগ্রস্ত হননি।