রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাবাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের অসংখ্য সেনা ইউক্রেন যুদ্ধে যোগ দিয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে ওয়াগনার দাবি করে, তাদের সেনারা ডনবাসের সোলদার শহর দখল করেছে। এখন তাদের লক্ষ্য পাশের শহর বাখমুত।
ইউক্রেনের গোয়েন্দাদের বরাতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন সোমবার (২৩ জানুয়ারি) ওয়াগনার গ্রুপের কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে।
সিএনএন জানিয়েছে, ওয়াগনার গ্রুপ নিয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে ইউক্রেন। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ওয়াগনার সেনারা খুবই ভয়ঙ্কর। এমনকি অনেক সেনা হতাহত হলেও তারা অবিচল থাকে। তবে রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘ওয়াগনার গ্রুপের কয়েক হাজার সেনার মৃত্যু রাশিয়ার কাছে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না।’
ওয়াগনার সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে, ‘তাদের হামলাকারী দল কমান্ডারের নির্দেশ ছাড়া কখনো পিছপা হয় না। অনুমতি ছাড়া বা আহত হওয়া ছাড়া যুদ্ধের ময়দান ছাড়লে তাৎক্ষণিক গুলি করে হত্যার শাস্তির বিধান রয়েছে তাদের।
ওয়াগনার গ্রুপের সেনাদের ফোনে আড়িপেতে বিভিন্ন তথ্য জানতে পেরেছেন ইউক্রেনের গোয়েন্দারা। এরমধ্যে একটি কথোপকথনে বেরিয়ে এসেছে যুদ্ধক্ষেত্রে কতটা দয়ামায়াহীন আচরণ করছে ওয়াগনার।
দুই সেনার মধ্যে হওয়া টেলিআলাপে এক সেনাকে বলতে শোনা যায়, ‘ইউক্রেনের সেনাদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে চেয়েছিলেন একজন। কিন্তু ওয়াগনার তাকে ধরে ফেলে এবং তার অন্ডকোষ কেটে দেয়।’
যদিও সিএনএন এ ফোন কলের সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি।
ইউক্রেনের গোয়েন্দারা আরও দাবি করেছেন, ওয়াগনারের আহত সেনারা যুদ্ধের ময়দানে কয়েক ঘণ্টা বিনা চিকিৎসায় পড়ে থাকেন। হামলাকারী দলের সদস্যরা আহতের নিয়ে যেতে পারেন না। কারণ তাদের কাজ হলো লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত হামলা অব্যাহত রাখা। আর যদি লক্ষ্য অর্জন না হয় তাহলে পিছিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে শুধুমাত্র রাতের বেলাতেই পেছানো যাবে এমন নিয়ম রয়েছে।
ইউক্রেনীয় বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে রাশিয়ার যে আসল সেনাবাহিনী আছে তারাও ওয়াগনারের কৌশল আয়ত্ত্ব করার চেষ্টা করছে। এমনকি সদ্য রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া কিছু সেনা ওয়াগনারে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
ওয়াগনারের যুদ্ধের কৌশল
ইউক্রেনের প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা গেছে, ওয়াগনার তাদের সেনাদের রকেট-প্রোপেলড গ্রেনেড দিয়ে ও ড্রোনের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে ছোট ছোট দলে (১০ থেকে ১২) মোতায়েন করে। যা খুবই কার্যকরী কৌশল।
এছাড়া ওয়াগনার সেনারা মোটোরালার তৈরি যোগাযোগ যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে। যদিও মোটোরালা জানিয়েছে, রাশিয়ায় নিজেদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে তারা।
আরও জানা গেছে, জেলবন্দি ও দাগী যেসব অপরাধীদের ওয়াগনার নিজেদের বাহিনীতে যুক্ত করেছে তারা প্রথমে হামলা শুরু করে। এতে হতাহতও তারাই বেশি হয়। এরপরের ধাপে হামলা চালায় আধুনিক অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত অভিজ্ঞ সেনারা।
তবে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সঙ্গে ওয়াগনার সেনাদের খুব বেশি যোগাযোগ নেই বলেও দাবি করেছেন ইউক্রেনের গোয়েন্দারা। তারা জানিয়েছেন, এক রুশ সেনা ফোনে তার বাবাকে জানিয়েছিলেন, তারা ভুলে ওয়াগনারের একটি গাড়িতে হামলা চালিয়েছেন।
সূত্র: সিএনএন