১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয়, তখন বাংলাদেশের ৮০% মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করত। বর্তমানে সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ২০%-এ। শনিবার (২১ জানুয়ারি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
তবে শতাংশের বিবেচনায় এই সময়ে দরিদ্র মানুষের প্রকৃত সংখ্যা কমেনি বলে জানানো হয় এ প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশ দারিদ্র্য পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন ২০২২-এ উঠে এসেছে এসব তথ্য। এতে বলা হয়, দেশে ৩.৫ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করে।
প্রতিবেদনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা বলেন, গত তিন দশকে দারিদ্র্যের হার অর্ধেকে নেমে আসা সত্ত্বেও ১৯৯০ সাল থেকে ৩.৫ কোটি মানুষ দরিদ্র রয়ে গেছে।
এজন্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে দারিদ্র্যসীমার ওপরে উন্নীত করার জন্য সরকারকে বিকেন্দ্রীকরণে প্রয়োজনীয় নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়।
ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইএনএম) ও সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ডায়ালগ (সিআইডিডি) যৌথভাবে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
আইএনএম ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান কাজী খলিকুজ্জামান আহমেদ বলেন, “আয়-ভিত্তিক দারিদ্র্য পরিমাপ প্রকৃত দারিদ্র্য দূর করবে না। আমাদের বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সম্পর্কে জানতে হবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, “অর্থনীতি ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, জ্বালানি ঘাটতি ও সরবরাহ শৃঙ্খল বিঘ্নিত হওয়ায় কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সরকারের উচিত এই চ্যালেঞ্জগুলো বিবেচনা করে পদক্ষেপ নেওয়া।”
সিআইডিডির চেয়ারম্যান মোস্তফা কে মুজেরি বলেন, “এটা সত্য যে দারিদ্র্য ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু দারিদ্র্যকে শুধুমাত্র আয়ের অভাব দ্বারা পরিমাপ করা হয় না। বরং এর মধ্যে রয়েছে পছন্দের অভাব, সুযোগ ও শোনার অভাব।”
সিআইডিডির ট্রাস্টি অধ্যাপক সালমা আক্তার তার মূল প্রবন্ধে বলেন, “প্রায় ৯৪% গারো পুরুষ দিনমজুর হিসাবে কাজ করে ও বাকিরা অনানুষ্ঠানিক খাতে নিযুক্ত।”
“সম্প্রদায়ের সকল সদস্য সারা বছর নিজেদেরকে দরিদ্র মনে করে। কারণ পুরুষরা দিনে ৩০০ টাকা আয় করে, যেখানে নারীরা মাত্র ১০০ টাকা।”
“মুন্ডা সম্প্রদায়ের প্রায় ৬০,০০০ মানুষ প্রতি বছর তিন থেকে চার মাস খাদ্য সংকটের সম্মুখীন হয়।”
“মাল পাহাড়িয়া সম্প্রদায়ের দৈনিক আয় ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা।” “১২৯,০০০ সাঁওতালদের প্রায় ৯২% দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করে।”
অধ্যাপক সালমা বলেন, “এই গোষ্ঠীর বেশিরভাগ নারী ও শিশু অতিরিক্ত দুর্বলতা ও অধিকার লঙ্ঘনের সম্মুখীন হয়। তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক সুযোগ, সুরক্ষা ও ন্যায়বিচারের সুযোগ কম পায়।”
তিনি আরও বলেন, “আইনি, প্রশাসনিক ও অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত জাতিগত সংখ্যালঘু ও ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকার রক্ষায় সমানভাবে কাজ করে না। ফলে তাদের কথা উঠে আসে না।”
প্রতিবেদনে তাদের সামাজিক সংহতি ত্বরান্বিত করার জন্য বেশ কিছু মূল কার্যক্রমের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।