উত্তর আমেরিকায় অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় দ্বীপ-রাষ্ট্র গ্রিনল্যান্ড বিশ্বের শীতলতম স্থানগুলোর মধ্যে একটি। তবে নতুন তথ্যে দেখা গিয়েছে, গ্রিনল্যান্ডে গত এক হাজার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকৃতির ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কত ভয়াবহ তা হাড়ে-হাড়ে টের পাচ্ছে পৃথিবীবাসী।
গ্রিনল্যান্ডের হিমবাহের একেবারে অভ্যন্তরের বরফ নিয়ে করা গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের পরিষ্কার নিদর্শন। বিজ্ঞানীরা বছরের পর বছর ধরে গ্রিনল্যান্ডের বরফের স্তর নিয়ে গবেষণা করছেন। সম্প্রতি নেচার জার্নালে তারা তাদের গবেষণার ফল প্রকাশ করেছেন।
এর আগে ১৯৯৫ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, গ্রিনল্যান্ডের তাপমাত্রা পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের মতো ততটা বাড়ছে না। তবে আবার ১৫ বছর পর বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণ করে দেখলেন, সেখানে আগের তুলনায় তাপমাত্রা অনেকটাই বাড়ছে।
জার্মানির আলফ্রেড ওয়েজেনার ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী ও গবেষণার প্রধান লেখক মারিয়া হোরহোল্ড বলেছেন, আমরা ১৯৯০ থেকে ২০১১ সালের মধ্যের তাপমাত্রা নিয়ে পর্যালোচনা করেছি। এখন আমাদের কাছে বিশ্ব উষ্ণায়নের এক ভয়াবহ প্রমাণ রয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানির দ্রুত ব্যবহার বায়ুমণ্ডলে কার্বন নির্গমন ঘটায়, যা পৃথিবীকে উষ্ণ করে। ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ন দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। প্রতি এক দশকে গ্রিনল্যান্ডে কয়েক ট্রিলিয়ন টন বরফ গলে যাবে। এ বরফ গলার মাত্রাও ক্রমবর্ধমান। ফলে কার্বন নিঃসরণ কমাতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। হাতে আর সময় নেই।
গত বছরের নভেম্বরে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, পৃথিবী উষ্ণ হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে বিশ্বের অনেক হিমবাহ ২০৫০ সালের মধ্যে গলে হারিয়ে যেতে পারে। ৫০টি জায়গায় ১৮ হাজার ৬০০টি হিমবাহ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করেছে জাতিসংঘ।
আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৯০ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত গ্রিনল্যান্ডে তাপমাত্রা গড়ে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। ২১০০ সালের মধ্যে বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ হিমবাহ বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে অনুমান করছেন বিজ্ঞানীরা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা।
সর্বশেষ ২০২২ সালের এক রিপোর্টে বলা হয়, বিশ্বের তাপমাত্রা এখন প্রাক-শিল্পায়নের যুগের চেয়ে ১.১৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বেড়েছে। এমনকি গত আট বছর ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণতম বছর।