রেডিও ও “ইন্টারনেট ফ্রিডম টুলস” ব্যবহার করে উত্তর কোরিয়ার নাগরিকদের কাছে তাদের নেতা কিম জং উনের দমনমূলক শাসন সম্পর্কে “সত্য তুলে ধরতে” বিশাল পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ওয়াশিংটন বলছে, তাদের এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে উত্তর কোরিয়ার নাগরিকদের আরেও বেশি প্রশ্ন করতে “উৎসাহিত” করা হবে।
এমন প্রজেক্টে যুক্তরাষ্ট্র আগামী পাঁচ বছরে ৫০ মিলিয়ন ডলার (৪৬ মিলিয়ন ইউরো) বিনিয়োগ করবে। যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক প্রতিরক্ষা ব্যয় প্যাকেজের আওতায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত ডিসেম্বরের শেষে “অটো-ওয়ার্মবিয়ার বিল” স্বাক্ষর করেছেন। উত্তর কোরিয়ায় সেন্সরশিপ ও নাগরিকদের ওপর নজরদারির বিরুদ্ধে এই আইনটি পরিকল্পনা করা হয়েছে।
নাশকতার অভিযোগে মার্কিন ছাত্র অটো ওয়ার্মবিয়ারকে ২০১৬ সালে আটক করে উত্তর কোরিয়া। পরবর্তীতে পোস্টার চুরির অভিযোগে তাকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০১৭ সালে মুক্তি দেওয়া হলেও ২২ বছর বয়সি ওয়ার্মবিয়ার ছয় দিন পর হাসপাতালে মারা যান। তার নামেই এই বিল করা হয়েছে।
এই আইনের আওতায় বিশ্বজুড়ে তথ্য সম্প্রচার এবং প্রচারের জন্য ইউএস এজেন্সি ফর গ্লোবাল মিডিয়াতে অর্থ প্রদান করা হবে।
ট্রয় ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড্যান পিঙ্কস্টন বলেছেন, “এমন উদ্যোগ আমার কাছে আকর্ষণীয় মনে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র এখন যা করতে চাচ্ছে, অন্য দেশগুলো কিছুদিন ধরেই এই কাজগুলো করছে।”
প্রশ্ন করতে উৎসাহ
যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে, তাদের এই উদ্যোগের ফলে উত্তর কোরিয়ার মানুষ তাদের সরকারের দুঃশাসন নিয়ে বেশি প্রশ্ন করতে সক্ষম হবে।
অধ্যাপক পিঙ্কস্টন মনে করেন, ওয়াশিংটন রাশিয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খেলছে, যা তার নিজস্ব ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্যকে এগিয়ে নেওয়ার প্রচারণায় বিশেষভাবে কার্যকর।
মার্কিন এই উদ্যোগ উত্তর কোরিয়ায় অতিরিক্ত রেডিও প্রোগ্রামিংয়ের পাশাপাশি “ইন্টারনেট ফ্রিডম টুলস” বিকাশের দিকে মনোনিবেশ করবে। ফলে, ব্যবহারকারীরা উত্তর কোরিয়ার সরকার কর্তৃক আরোপিত “ডিজিটাল প্রতিবন্ধকতা” এড়াতে সক্ষম হবে। এই সুবিধা বিনামূল্যে দেওয়া হবে। তবে এই কার্যক্রমে রেডিও তুলনামূলক সহজ হলেও ইন্টারনেট অ্যাক্সেস চ্যালেঞ্জ হবে বলে মত দিয়েছেন অধ্যাপক পিঙ্কস্টন।
উত্তর কোরিয়ার নাগরিক ইউজিন কিম; তিনি খাদ্য সংকটের কারণে উত্তর হামগয়ং প্রদেশ থেকে তার মা এবং বোনের সঙ্গে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, এমন উদ্যোগ তার দেশের জনগণের জন্য বিপজ্জনক হবে। কেননা এতে শাসকগোষ্ঠীর সমালোচনাকে উৎসাহিত করা হবে।
ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তিরা বলেছেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পিয়ংইয়ংয়ে বিদেশি রেডিও সম্প্রচার শোনা ও চোরাচালানের মাধ্যমে নিয়ে আসা টেলিভিশন অনুষ্ঠান দেখা বেশ কয়েকজনকে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা হয়েছে।