বেতন বাড়ানো ও উন্নত কর্মপরিবেশের দাবিতে পর্তুগালের রাজধানী লিসবনের সড়কে নেমে বিক্ষোভ করেছেন লাখো শিক্ষক ও স্কুলকর্মী। ইউরোপের এই দেশটিতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর চেয়ে বড় বিক্ষোভ আর দেখা যায়নি।
শনিবার ইউনিয়ন অফ অল এডুকেশন প্রফেশনালস (স্টপ) এর আয়োজনে শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত এ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বিক্ষোভকারীরা ব্যানার ধারণ করে এবং স্লোগান দেয়। তারা ওই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে দেশটির শিক্ষামন্ত্রী জোয়াও কস্তাকে পদত্যাগ করারও আহ্বান জানায়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, পর্তুগালে সর্বনিম্ন বেতনকাঠামোতে থাকা শিক্ষকরা প্রতিমাসে এক হাজার ১০০ ইউরো (এক হাজার ২০০ ডলারের কাছাকাছি) বেতন পান।অন্যদিকে শীর্ষসারির অনেক শিক্ষকেরই আয় মাসে ২ হাজার ইউরোর নিচে। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, বর্তমান জীবযাপনের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এই মজুরি খুবই কম।
বিক্ষোভ শুরুর আগে ইতিহাসের শিক্ষক ৬২ বছর বয়সী মারিয়া দুয়ার্তে বলেছেন, শিক্ষকদের ন্যায্য বেতন প্রাপ্য, কারণ আমরা সারা জীবন কাজ করেছি, আমরা কখনই দুর্নীতিগ্রস্ত হইনি, চুরি করিনি, দুর্ভাগ্যবশত যেটা রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে হয়েছে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী আন্তোনিও কস্তার নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক দল এক বছর আগে নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতায় আসে। কিন্তু এরপর অতীতের অসদাচরণের অভিযোগে বা প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকাণ্ডের দায়ে ১৩ জন মন্ত্রী ও সেক্রেটারি অব স্টেটসকে দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করতে হয়। এসব ঘটনা ক্ষমতাসীন দলকে বেশ ঝামেলায় ফেলে।
গণিতের শিক্ষক আইটর মাতোস বলেছেন, “যে নেতারা এই বিক্ষোভ দেখছেন তারা পরবর্তীতে কী পদক্ষেপ নেবেন সে বিষয়ে খুব সতর্কতার সাথে চিন্তা করা তাদের জন্য ভালো হবে। কারণ আমরা এই কর্মসূচির প্রতিক্রিয়া দেখতে চাই,গুরুতর ব্যবস্থা নেওয়া হোক-এটাই চাই’।
৪৭ বছর বয়সী এক শিক্ষক জানান, শিক্ষকদের আয় এখন ‘নিয়মিত কমছে’। প্রায়ই তাদেরকে এমন স্কুলে নিয়োগ দেওয়া হয়, যা তাদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে।
শিক্ষাখাতের দুর্দশায় শোক জানিয়ে বিক্ষোভকারীদের অনেককেই শনিবার কালো পোশাক পরতেও দেখা গেছে। সরকার তাদের পরিস্থিতির উন্নতিতে কিছুই করছে না বলেও অভিযোগ তাদের।
দেশটিতে ডিসেম্বর থেকেই শিক্ষকরা ধর্মঘট করছেন, যার ফলে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
এদিকে, দেশটির শিক্ষামন্ত্রী শুক্রবার বলেছেন, কিছু শিক্ষককে ক্লাসে ফেরাতে বাধ্য করতে তিনি ডিক্রি জারির কথাও ভাবছেন।