গত বুধবার (৪ জানুয়ারি) দিন শেষে রিজার্ভ ছিল ৩৩ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার। ৫ জানুয়ারি এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের পর বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ কমে ৩২ বিলিয়ন (৩ হাজার ২০০ কোটি) ঘরে নেমে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আকুর নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের ১১২ কোটি (১ দশমিক ১২ বিলিয়ন) ডলার পরিশোধ করার পর রবিবার (৮ জানুয়ারি) এই রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে রিজার্ভ কমে যাওয়ায় ইতোমধ্যে ডলারের দাম ৮৫ টাকা থেকে বেড়ে ১০৫ থেকে ১০৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা শতকরা হিসাবে বেড়েছে ২৫ শতাংশের বেশি। খোলাবাজারে ডলারের দর ১২০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এখনও ১১২ থেকে ১১৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ডলার।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৭৬৫ কোটি (৭ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে ছয় মাসে রিজার্ভ থেকে এত ডলার কখনোই বিক্রি হয়নি। এ ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমদানি বেড়ে যাওয়ার প্রভাবে কমছে রিজার্ভ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ইতিহাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে ২০২১ সালের আগস্টে। করোনার প্রভাব শুরুর আগ পর্যন্ত রিজার্ভ ৩২ থেকে ৩৩ বিলিয়ন ডলারের ঘরে ওঠানামা করছিল।
অবশ্য রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে আমদানি দায় কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু নতুন এলসি (ঋণপত্র) কমলেও আগের দায় পরিশোধের চাপের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার খরচ কমেনি। নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে আমদানি দায় পরিশোধ বেড়েছে ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। এ সময় বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলারে। বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) ৫ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার।
জানা গেছে, ক্যালেন্ডার বছরের হিসাবে ২০২২ সালে রিজার্ভ থেকে মোট ১২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এর বিপরীতে বাজার থেকে ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকার বেশি তুলে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে অভ্যন্তরীণ তারল্যের ওপর চাপ বেড়েছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) রিজার্ভ থেকে ৭ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি জানুয়ারি মাসের তিন দিনে (১ থেকে ৩ জানুয়ারি) আরও ১৮ কোটি ডলারের মতো বিক্রি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার। আর ২০২২ সালের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) বিক্রির পরিমাণ ছিল ৫ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ হিসাবে, গত অক্টোবর মাসে মোট ৬ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ। এ হিসাবে বর্তমানের রিজার্ভ দিয়ে পাঁচ মাসের আমদানি বিল মেটানো সম্ভব।