যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো এক ট্রান্সজেন্ডার নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। সাবেক প্রেমিকাকে হত্যার অপরাধে আদালত তাকে এ শাস্তি দেন। আদেশের ১৬ বছর পর ইনজেকশন দিয়ে এ শাস্তি কার্যকর করা হলো।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নারীর নাম অ্যাম্বার ম্যাকলাফলিন। ২০০৬ সালে সাবেক প্রেমিকা বেভারলি গুন্থারকে হত্যার অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন মিসৌরির আদালত। বিচ্ছেদের পরেও অ্যাম্বার ক্রমাগত উত্যক্ত করতে থাকায় বেভারলি গুন্থার নিরাপত্তা চেয়ে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। ২০০৩ সালে মিসিসিপি নদীর তীরে তার মরদেহ পাওয়া যায়। ধর্ষণের পর রান্নাঘরের ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে ফেলে রাখা হয় তাকে।
মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) বোনে টেরে শহরের ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কারেকশন সেন্টারে প্রাণঘাতী ইনজেকশন দিলে অ্যাম্বার ম্যাকলাফলিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
বিচারকরা সর্বসম্মতিক্রমে অ্যাম্বারলিকে দোষী সাব্যস্ত করলেও মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে তাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। অচলাবস্থা কাটাতে একজন বিচারক তখন মিসৌরির বিশেষ আইন প্রয়োগের পক্ষে রায় দেন। আইনটি ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যেও কার্যকর।
রায়ের পরও অ্যাম্বারের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যায়নি। ১০ বছর পর, অর্থাৎ ২০১৬ সালে অ্যাম্বার ম্যাকলাফলিনের মৃত্যুদণ্ড নিয়ে নতুন করে শুনানির আদেশ দেন আদালত। তবে ২০২১ সালে কেন্দ্রীয় আপিল আদালত ২০০৬ সালের আদেশই বহাল রাখেন।
বিবাদীর আইনজীবীরা যন্ত্রণাময় শৈশব এবং দীর্ঘদিনের ডিপ্রেশনকে অপরাধকর্মের পরোক্ষ কারণ হিসেবে উল্লেখ করে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আর্জি জানান। কিন্তু রিপাবলিকান গভর্নর মাইক পার্সন তাতে সায় না দেয়ায় সে চেষ্টাও বিফলে যায়।
মিসৌরির কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, ৪৯ বছর বয়সী এই ট্রান্সজেন্ডার নারী তিন বছর ধরে তার পূর্ণাঙ্গ নারী সত্তায় ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করে আসছিলেন। তবে তিনি কোনো ধরনের হরমোন চিকিৎসা নেননি। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগ পর্যন্ত তিনি পুরুষ আসামিদের জন্য নির্ধারিত সেলও ছাড়েননি।
অ্যাম্বার ম্যাকলাফলিনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর এক লিখিত বিবৃতিতে মিসৌরির গভর্নর মাইক পার্সন বলেন, ‘‘ম্যাকলাফলিনের কারণে জীবনের শেষ কয়েকটি বছর গুন্থারকে ভীষণ আতঙ্কের মধ্যে কাটাতে হয়েছে। অবশেষে তার পরিবার এবং অন্যান্য ভালোবাসার মানুষেরা একটু শান্তি পেলেন।”
সূত্র: ডয়চে ভেলে