বিশ্বের শীর্ষ বিজ্ঞান ও পিআর রিভিউ সাময়িকী ল্যানসেট তাদের বিজ্ঞানীদের তালিকায় বাংলাদেশের অনুজীববিজ্ঞানী সেজুঁতি সাহার নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে। সেজুঁতিকে নিয়ে একটি প্রোফাইল লেখা হয়েছে ল্যানসেটে, যেখানে তার নাম-পরিচয় ও পেশাগত কাজের বিভিন্ন তথ্য রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ইংল্যান্ডভিত্তিক বিজ্ঞান সাময়িকী ল্যানসেট প্রকাশিত হচ্ছে ১৮২৩ সাল থেকে। বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো এই সাময়িকী একই সঙ্গে সুপ্রসিদ্ধ এবং বিজ্ঞানীদের কাছে অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন।
বাংলাদেশের অলাভজনক সংস্থা চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (সিএইচআরএফ) পরিচালক সেজুঁতি সাহার সম্পর্কে ল্যানেসেটে বলা হয়েছে, ‘তিনি (সেজুঁতি) বৈশ্বিক স্বাস্থ্য গবেষণা নিয়ে সমতার পক্ষে এক জোরদার কণ্ঠ। সেঁজুতি এবং সিএইচআরএফে তার দল মিলে করোনাভাইরাসের জিন নকশা (জিনোম সিকোয়েন্স) উন্মোচন করেছেন। বাংলাদেশের শিশুদের আক্রান্ত করে এমন কিছু রোগ—যেমন ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া নিয়েও তাদের গবেষণা অব্যাহত আছে।’
এই প্রথম ল্যানসেটে কোনো বাংলাদেশির প্রোফাইল প্রকাশিত হলো। বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে সেঁজুতি বলেন, ল্যানসেট থেকে প্রথমবার যখন তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলো তখন তিনি ভেবেছিলেন কেউ সম্ভবত এই সাময়িকীটির নাম নিয়ে তার সঙ্গে রসিকতা করছে।
‘প্রথমে আমি ভেবেছিলাম ল্যানসেটের নাম নিয়ে কেউ ধাপ্পাবাজি করছে। কিন্তু পরে যখন বুঝলাম, তখন আমি রীতিমতো অবাক হয়ে গিয়েছিলাম….ল্যানসেট আমাদের কাজ সম্পর্কে এতটা জানে!’
‘আমি খুব গর্বিত বোধ করছি যে ল্যানসেটের মতো একটি জার্নাল একজন বাংলাদেশি বিজ্ঞানীকে নিয়ে একটি প্রোফাইল লিখেছে। এটি বিশ্বের কাছে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করবে।’
করোনাভাইরাসের প্রকোপে এখনও বিশ্ব আক্রান্ত। ২০২০ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশেদেশে প্রথম করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয়। ওই বছরই সেজুঁতি সাহার নেতৃত্বাধীন একটি গবেষক দল করোনাভাইরাসের জিন নকশা উন্মোচন করেন।
বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে সেঁজুতি বলেন, সক্ষমতা থাকলে কত ইতিবাচক কাজ করা যায়, এটি ছিল তারই উদাহরণ। প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করতে আমরা আত্মনিয়োগ করেছি।
রোগ-জীবাণু নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি শিশুদের বিজ্ঞানমনস্ক করে তোলার জন্যও তিনি ছুটে বেড়ান দেশময়। তার কাজ দেখে শিশুদের বাবা-মায়েরাও আপ্লুত হয়ে তাকে বিভিন্ন সময়ে চিঠিও লিখেছেন।
এমন একটি চিঠি সেজুঁতির প্রোফাইলে প্রকাশ করেছে ল্যানসেট। সেখানে অভিভাবকরা লিখেছেন, ‘আমাদের সন্তানেরা বিজ্ঞানী হোক, এটা চাই। আমরা কখনো ভাবিনি, এটা একটা পেশা হতে পারে। কারণ, আমরা কোনো দিন বিজ্ঞানী দেখিনি। সত্যি বলতে, কোনো নারী বিজ্ঞানী দেখিনি।’