আফগানিস্তানে নারী ও মেয়েদের লক্ষ্য করে ক্ষমতাসীন তালিবান সরকারের নীতির নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। গত সপ্তাহে এই গোষ্ঠীটি আফগান নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া এবং বেসরকারি সংস্থায় (এনজিও) কাজ করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
১৫ সদস্য বিশিষ্ট জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ বলেছে, আফগানিস্তানে নারী শিক্ষার ওপর ক্রমবর্ধমান নিষেধাজ্ঞা ‘গভীরভাবে উদ্বেগজনক’। বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যম বলছে, নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া এবং মানবিক সহায়তা গোষ্ঠীর জন্য কাজ করার বিষয়ে তালেবান-নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানিয়ে মঙ্গলবার আফগানিস্তানে নারী ও মেয়েদের পূর্ণ, সমান এবং অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।
একইসঙ্গে সর্ব সম্মতিক্রমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ১৫-সদস্যের কাউন্সিল বলেছে, আফগানিস্তানে হাইস্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী এবং মেয়েদের পড়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা ‘মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি সম্মানের ক্রমবর্ধমান ক্ষয়ের নিদর্শন’।
এতে আরও বলা হয়েছে, নারী মানবিক কর্মীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জাতিসংঘসহ ‘দেশে মানবিক কার্যক্রমের জন্য ওপর উল্লেখযোগ্য এবং তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলবে।’
এদিকে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, আফগানিস্তানে তালেবানের আরোপ করা সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞাগুলো ‘প্রত্যাহার করতে হবে’। গুতেরেস বলেছেন, সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞাগুলো ‘অযৌক্তিক মানবাধিকার লঙ্ঘন’।
টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘নারী ও মেয়েদের বাদ দেওয়া এবং তাদের নীরব রাখার পদক্ষেপগুলো আফগান জনগণের জন্য সম্ভাব্য অপরিসীম দুর্ভোগ এবং বড় ধাক্কার কারণ হতে চলেছে।’
বিবিসি বলছে, তালেবান সরকার নারীদের জন্য কাজ করা নিষিদ্ধ করার পর অন্তত পাঁচটি শীর্ষ এনজিও আফগানিস্তানে তাদের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল, নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল (এনআরসি) এবং সেভ দ্য চিলড্রেন বলেছে, ‘নারী কর্মীদের ছাড়া’ তারা তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারবে না।
আন্তর্জাতিক রেসকিউ কমিটিও পরিষেবা স্থগিত করেছে এবং ইসলামিক রিলিফ বলেছে, তারা আফগানিস্তানে তাদের বেশিরভাগ কাজ বন্ধ করে দিচ্ছে।
তালেবান গত সপ্তাহে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে নারী শিক্ষার ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া পাঁচ নারীকে গ্রেপ্তার করেছে। এমনকি গ্রেপ্তার করা হয় তিন সাংবাদিককেও।
উল্লেখ্য, ২০ বছর পর গত বছরের ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান দখলে নেয় তালেবান। এরপর সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে তালেবান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার ঘোষণা দেয়।
অবশ্য সরকার গঠন করলেও বিশ্বের কোনো দেশই এখনও পর্যন্ত তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। এর জেরে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ও এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা সংস্থাও আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তাসহ অর্থ সাহায্য পাঠানো বন্ধ করে দেয়।
তবে দেশটির নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার পর থেকে তালেবান গোষ্ঠী ক্রমাগতভাবে নারীদের অধিকার সীমিত করে চলেছে। নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া এবং বেসরকারি সংস্থায় (এনজিও) কাজ নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি নারীদের পার্ক ও জিমে প্রবেশ করতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে।