বাড়ি ফিরতে ফিরতে
কিছুক্ষণ হারিয়ে যাই তারপর আবার ফিরে আসি
নতুন কলোনি আমার ঠিকানা
রাস্তা ঠিকঠাক বুঝতে পারি না
যদিও তেমাথা পানের দোকান
সামনেই বিস্কুট কারখানা
মহব্বত বলে কারও সঙ্গে দেখা হয়নি কোনওদিন
অথচ অন্ধকারে সেই নাকি রাস্তা দেখিয়েছে
বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার ম্যাপ তার হাতে
আজ সকাল সকাল চায়ের দোকান সে খবর বলেছে
আমার কামনা এখন পায়রা দেখছে
বিকেলের হলুদ পায়রাগুলি কেমন সব ডানা মেলেছে
কেউ ওরা রসগোল্লা খায় না
বড় বড় গামলায় সবাই ভাসছে আর হাসছে
রসগোল্লাদের কেবলই আমার বেশ্যা মনে হয়
রাস্তা পেরিয়ে যাই
যেতে যেতে এক ছাতুওয়ালার সঙ্গে দেখা হয়
তার কাঁচা লংকা পেয়াজগুলি ডাকছে আমাকে
বাড়ি ফিরতে ফিরতে দেখি সন্ধ্যা দাঁড়িয়ে আছে ঘরের দরজায়
মহব্বতের সঙ্গে আমার কোনও দিন দেখা হয়নি
কবিতারা উঠে দাঁড়াতে চায়
তোমার অসুখের বিছানার পাশে
আমার কবিতারা বসে আছে
কোথাও যায়নি ওরা
জানালার চাঁদে হাত বাড়ায়নি ওরা
স্নেহান্ধ পিচ্ছিল কান্না চেপে
সারারাত জেগে জেগে আছে।
কী বলল ডাক্তার?
হয়তো সেরে যাবে
তিনমাস বিশ্রামে তারপর একটু একটু করে
কে দেখবে সংসার? আমরা সবাই হাওয়া খাব?
ছেলেমেয়ে আর শীতের কুয়াশার হাত ধরে
রোদের অপেক্ষা করে করে আমরা কি বিপ্লবী হব?
মৃত্যুকে পুষে পুষে রোজ বড় করি
মৃত্যু কি কোনও দিন আলো হতে পারে?
ডাক্তারের কাছে কোনও সমাধান নেই
শুধু অ্যানাস্থেসিয়া আর ডেটলের গন্ধ ঘরময়
সেলাইন চুপচাপ শরীরে ঢোকে
যন্ত্রণারা উপশম চায় আমার শব্দের কাছে
কবিতারা উঠে দাঁড়াতে চায়
সুসংবাদ এসে যদি দরজা খুলে ডাকে!
জানোয়ার
আমরা স্বর্গের দিকে যেতে যেতে দুইপাশে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছিলাম
আমরা সবাই দেবতা—চারিপাশে আমাদের শরীরের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ছিল
চারিপাশে সবাই আমাদের দেখছিল আর ফুল ছুঁড়ে অভিনন্দন জানাচ্ছিল
আমাদের কোনও ভ্রুক্ষেপ ছিল না সেদিকে
হাসতে হাসতে চলে যাচ্ছিলাম স্বর্গযানে
দুইপাশে মরচেধরা প্রাণী—ক্ষুধার্ত—ভঙ্গুর—তৃষ্ণার্ত—হাহাকারপ্রিয়…
দুইপাশে কসাইয়ের দোকান—
নিরন্তর ছুরি শান দেওয়ার শব্দ
নিরন্তর দুর্বোধ্য ভাষার চিৎকার…
আমরা সর্বশ্রেষ্ঠ দেবতা
স্বর্গে যেতে যেতে দেখছি এসব;
আমাদের গাড়ির চালক জানাল:
এরা সবাই বিভিন্ন জাতের প্রাণী—
পৃথিবীতে এদের জানোয়ার নামে ডাকা হয়!
দুপুরের ডাকঘর
দুপুর এসেছে, একটু পর চলে যাবে
তাকে কিছুই বলার নেই
অনেক মৃত সকাল, শিশির ভেজা ভোর
স্মৃতির আলোয় পড়ে আছে
পাখিদের কলতান উড়ছে কোথাও
কোথাও বিগতা কুমারী শিস দেয় আজও
শরতের শালুক ফোটা দিঘি আর নেই
দিঘির বকেরা সব মৃত! মাছগুলি চলে গেছে অন্যকোনও সমুদ্রের দিকে….
এখন হৃদয় পেতে ছায়া খোঁজা দিন
বিশ্রামে নীরব হয়ে থাকা
মাটি ফাটা তাপে বয়ে যায় দীর্ঘশ্বাস
শীত আর কুয়াশায় লেখা জীবনের শেষ চিঠি
নিয়ে এসেছে দুপুরের ম্লান ডাকঘর
স্পর্শ
এই হাত, আমারই হাত, আমিই স্পর্শ করি
সমস্ত শরীর জুড়ে এখনও সেই স্পর্শের শিহরন পাই
যে আলো নিভে গেছে বহুদিন
এখনও তার উজ্জ্বলতা আছে
এখনও অক্ষরগুলি পড়ে নিতে পারি
হৃদয় পাথর হয়ে গেছে, যে শোকে পাথর হয়
সব বেদনার অশ্রুগুলি
পথও হারায় পথে
ঠিকানাও বদল হয় অন্য কোনও ঠিকানায়
একটা শূন্যের মতো পৃথিবী গড়াতে গড়াতে
দিনরাত্রি প্রসব করে শুধু
ফেল করা ছাত্রের মতো আমরা শুধু অংকে শূন্য পাই
ঘর বানাতে বানাতে প্রতিদিন ঘর ভেঙে ফেলি
প্রদীপ জ্বালাতে জ্বালাতে প্রতিদিন ডাকি অন্ধকার
স্মৃতির কাচ মুছতে মুছতে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়
শুধু হাতখানি স্পর্শ ধরে রাখে
যে স্পর্শ তার একান্ত ঈশ্বরীর…
রাত্রিযাপন
এখানে শুধু রাত্রিযাপন, এখানে শুধু একটি শয়নঘর
যদিও জানালা আছে, মাঝে মাঝে উদাসীন হই
রাধারা ভিজে ভিজে যায়, যেতে যেতে পিছনে তাকায়
শরীরে শরীর শুধু, কোথাও মৌচাক ঝুলে আছে
স্মৃতির বিনুনি দোলে বিহ্বল কোমরে
পূর্ণ পানপাত্রের মতো সাজানো টেবিলে
কাউকে ডাকি না কাছে, তারা নিভে যায়
নিশাচর উড়ে গেলে টের পাই:
আমিও শিকার হব তার
রোজ রাত্রিকে চিঠি লিখি মনে মনে
সেসব চিঠিও ডাকবাক্স চেনে না
একটি জন্মের মুহূর্ত ঘিরে থাকে
শব্দগুলি ভোরের প্রত্যাশী
আলোকের রাস্তা খোঁজে
লীলাদের পাড়াভর্তি কলরব,বসন্ত উৎসব
বৈধ-অবৈধ হাসি চতুরতা নিয়ে
হাসি গড়িয়ে দিতে থাকে
আমি নিশির বর, ওর কপালের টিপে ঠিকানা খুঁজি
সমাজ আমাকে রোগা, কাপুরুষ ভাবে
আমিও অমল এক নিরন্তর এ-জীবন মাপি…