ঠিকানা
বহুদিন পর ঠিকানা খুঁজতে এসেছি শহরে
ঠিকানা এখন কোন ঠিকানায় থাকে?
গ্রাম মরে গেছে, আলতা রাঙা পায়ে
আর বাজে না নূপুর!
হলুদ বাটা হাতে আর ডাকে না কাছে!
একাকী দুপুর
দূরে দূরে পাখি উড়ে যায়
ঝুঁটিবাঁধা পাখি লাল নীল ডানা
বহুদূর তার স্বপ্নের ঘর
ঘরে ঘরে কত রঙিন বাসনা;
আমার শুধু একাকী দুপুর
বিরহ বাঁশির বিষণ্ণ সুর…
ছোঁয়া
তোমার ছোঁয়া মনে রাখি রোজ
রোজ শিহরন জন্মায়
প্রাচীন শরীরে গানের পুলক
ঘ্রাণের মুকুল ঝরে
নিভৃতে বসন্ত আসে
জন্মান্তর এখানে বসত করে।
স্নান
হাঁসগুলি সব তেমনই নামে জলে
সূর্য হাসতে হাসতে চলে যায়
তোমার ছায়া থামে এসে ঘাটে
পেছন ফিরে স্মৃতিগুলি চায়…
চুড়ি বাজে, চুড়ি বাজে
ভেজা কাপড় লেপ্টে শরীরময়
এই অবেলায় ঝাঁপিয়ে পড়ি স্নানে
শরীরী গঙ্গায়!
পথ
রোজ যদি পথ ভুলে যাই,ভালো;
পৃথিবীর পথগুলি সব ব্যাঁকা
কোনও পথেই পৌঁছানো গেল না;
যত কাছে থাকো তত বেশি দূর
নিকট দূরের পথ দেখিনি মেপে;
হাঁটতে হাঁটতে শুধুই সমুদ্দুর
সর্বনাম আর ক্রিয়ার সঙ্গে দেখা
তোমার বাড়ি সেই অনন্তপুর!
ধুলো
তোমাদের কথোপকথনের আলো এসে পড়ছে
ধূসর বাগানে আজ আমি একা
আমার সব স্বপ্নের প্রজাপতি উড়ে গেছে
এখন শুধু ধুলো নিয়ে ভাবি
সব ধুলো
দিগন্তব্যাপী শুধু ধুলো উড়ছে
তোমাদের কথোপকথনের আলোয়
আমার অস্তিত্ব ধুলো হয়ে পাক খাচ্ছে
নাচ
জীবন, আজ নাচ দেখাবে না?
ঘন কৃষ্ণ মেঘে ছেয়ে গেছে প্রণয়-উঠোন
যুবতী-বিশ্বাস আজ ঘোরাফেরা করে
মিথ্যা আশ্বাস এসেছে টোপর পরে
কতফুল শোভা দিচ্ছে অশোভন বিকেলে
জীবন, নূপুর পরবে না তুমি উচ্ছ্বাসের শিখা মেলা?
অক্ষরবৃত্ত
একটু একটু করে ভালোবাসা সেলাই করছি
সম্পর্কের সুতো ছিঁড়ে যাবে বলে
কেবলই আমার ভয় করে
স্বপ্নদের ক্রিয়ার পাশে আত্মহত্যাদের চলাফেরা
কথা বলি না তবু কারও সাথে
এই একটুখানি ভাবনার ঘরে
সবাই আসতে চায় হুড়মুড় করে
আমার অক্ষরবৃত্ত বড়োই লাজুক
দাঁড়াতে পারে না কারো কাছে!
ঢেঁকি
প্রাচীন কোনও ঢেঁকি
আমার ভিতরে ওঠানামা করে
কারা রোজ পাড় দেয়
আলতা পরা খালি পায়ে?
সমস্ত ধূসর ধান চাল হবে বলে
আমি তার অপেক্ষায় থাকি
পাড়ের কম্পনে জেগে জেগে
আমার নির্ঘুম রাত কাটে…
উৎকণ্ঠা
সহ্যের সীমানা আঁকি
অসহ্যের তাপ মেপে মেপে
দারুণ হল্লা তবু লুটায় চৌকাঠে
চারিদিকে সঙ্গমের রাত
পার্থিব ও অপার্থিব মোহনায়
নারী ও পুরুষ মিলে উলঙ্গ হয়
উৎকণ্ঠা তীব্র হলে
সভ্যতায় দলে দলে জন্মায়
নির্বোধ সন্তান…
উদ্বিগ্ন
ভাঙা নৌকা আর দুপুরের মেঘ
আমরা কোথায় চলেছি আবেগ?
ঝড় আসবে সেসব আততায়ী ঝড়
কী করে বাঁচাবে মূর্খ আবেগ আমাদের?
চারিপাশ ঘিরে দাঁড়াবে কাতিল অন্ধকার।
জন্মদিন
সব দরোজা খুলে যাচ্ছে একে একে
প্রতিটি দরোজায় তুমি বেরিয়ে আসছ আজ
আমরা সব বাংলা ভাষার পাখি
আমাদের ঠোঁটে ঠোঁটে ভাষার বৈভব!