মিজানুর রহমান আযহারী সাহেবের একটি ওয়াজ অনেকেই শুনেছেন। তিনি বলছেন, ‘পানি-নিরোধী কোন কিছু আগুনে পুড়ে না’। তিনি ভুল বলতেই পারেন এবং তা সংশোধনও করতে পারেন। এ ধরনের ভুলকে আমরা ‘শ্লিপ অব টাঙ’ বলে থাকি। ওনারও হয়তো তাই হয়েছে। তবে সংকটটা হয়- শ্রোতারা যখন প্রশ্নহীন হয়ে পড়েন। তারা সকলেই সম্মতিজ্ঞাপন করছিলেন যেনো পানি-নিরোধী পলিথিন আগুনে পুড়বে না। তারাও বিষয়টি জানেন যে পলিথিন আগুনে পুড়ে। তবে অন্ধ বিশ্বাসে অনুগত থাকার কারণে তারা প্রশ্ন না করেই বিশ্বাস করেন। তারা বিশ্বাস করতে থাকেন যে আগুনে পলিথিন পুড়বে না। মিথগুলো কিভাবে তৈরি হয়? মিথ শব্দটি মিথ্যা থেকে উৎপত্তি হয়নি, যদিও মিথ্যার সাথেই মিথের বেশ মিল। রূপকথা বা পৌরণিক গল্প যা মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত কিন্তু সত্য নয় বা প্রমাণিত নয় এমনকি বিজ্ঞানভিত্তিকও নয়। ‘মিথ’ এসেছে গ্রীক শব্দ মাইথোস থেকে যার অর্থ লোককথা বা সত্য ঘটনা। যদি অন্ধ বিশ্বাসীদের কাছে কেউ দাবি করে- তিনি মোমবাতি হাতে নিয়ে পানিতে ডুব দেয়ার পর পুরো পানির নিচটা আলোকিত হয়ে উঠে আর দেখতে পান .. ..। অন্ধ অনুগতরা প্রশ্ন করবে না যে, পানির নিচে মোমবাতি জ্বলবে না অক্সিজেনের অভাবে। তারা বিশ্বাস করবে এবং মুখে মুখে ছড়িয়ে দিবে। মানুষ এসব অলৌকিক ঘটনা শুনে নিজ লাভের আশায় ছুটে আসবে এবং প্রতারিত হতে থাকবে। এটা এক সময় মিথে পরিণত হবে।
পানি নিয়ে মানুষ অজ্ঞতায় ছিল সুদীর্ঘকাল। ধারণা করা হতো সমুদ্রের কোন সীমাপরিসীমা নেই। পানি সম্পর্কে ধারণা ছিল- পানি অফুরন্ত এর কোন শেষ নেই। কোন কোন ধর্ম ধারণা করতো সমুদ্রের পরেই আছে নরক। মৃত্যুর পরে সমুদ্রের ঐপারেই পাঠানো হবে। কলম্বাসের আমেরিকা আবিস্কারের পরেই মনে হতে থাকলো- পৃথিবী বাস্তবিকই গোলাকার হতে পারে। নইলে, তিনি পশ্চিমে গিয়ে কিভাবে ভারতে গেলেন? যদিও তিনি ভারতে নয় গিয়েছিলেন আমেরিকার কাছাকাছি। ধর্মগ্রন্থগুলোতেও পানিকে বিভিন্নভাবে আনা হয়েছে। হিন্দু ধর্ম মতে সৃষ্টির আদিতে বিষ্ণু প্রলয় সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় যোগনিদ্রা দশায় শায়িত ছিলেন। এই সময় তাঁর নাভি থেকে ব্রহ্মার সৃষ্টি হয়। ব্যাবিলোনিয়ান পুরোহিতরা বলতেন- দেবতা মার্দুক পানি থেকেই জগৎ সৃষ্টি করেছেন। গ্রীক দার্শনিক থেলিস বলতেন, পানি থেকেই সবকিছুর জন্ম, পানিই পরম সত্ত্বা। ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে- আসমানসমূহ, জমীন, মানুষ ইত্যাদি তৈরির আগে আল্লাহর আরশ ছিল পানির উপর। আল্লাহ সেখানেই বিরাজমান ছিলেন।
ডারউইন যখন বিবর্তন বাদে বললেন, পানিতেই প্রথমে প্রাণের বিকাশ ঘটেছে। তখন বিশ্বাসীদের মধ্যে দু ধরনের মতামত দেখলাম। এক শ্রেণি ডারউইন মতবাদকে বাতিল করে তা মানতে অস্বীকার করলো- বিবর্তনবাদকে কোনরূপ ভুল প্রমাণ করা ছাড়াই। আরেক শ্রেণি দাবি করলো- আরে আমাদের ধর্মেইতো প্রথম বলেছে পানি থেকেই জগতের উৎপত্তি তাই বিবর্তনবাদতো আমাদের ধর্মগ্রন্থ থেকেই নেয়া হয়েছে। তারা জানে অশিক্ষিত অসচেতন মানুষ কখনোই প্রশ্ন তুলবে না, প্রতিবাদ করবে না। তাদের অন্ধ বিশ্বাসকে প্রশংসায় ভাসাতে হবে এবং ইহকালের যাবতীয় যন্ত্রণাকে পরীক্ষা আখ্যা দিয়ে পরকালের অফুরন্ত সুখের লোভ দেখাতে হবে। তাহলেই তারা খুশি থাকবে। তারা জানে মানুষ ততক্ষণ পর্যন্তই খুশি থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা অজ্ঞ থাকবে। যখনই তারা জ্ঞানার্জন করবে, সচেতন হবে, বিজ্ঞানমনস্ক হবে তখনই প্রশ্ন তুলবে। বলবে, ‘হুজুর পলিথিন তো আগুনে পুড়ে যায়!
লেখক: মুজিব রহমান
স্যোসাল মিডিয়া থেকে সংগৃহীত।