১৮৫৫ সালের ২৬শে জুলাই বিধবা বিবাহ আইন পাস হলো৷ আর সে সময় নারীদের খুব যন্ত্রণা, অভিযোগ, আশা-আকাঙ্ক্ষার কাব্যরূপ দিলেন কৃষ্ণ কামিনী দাসী তার “চিত্ত বিলাসিনী” বইটিতে৷ কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত বইটি প্রসঙ্গে সংবাদ প্রভাকর এ লিখলেন, “অঙ্গনাগণের বিদ্যানুশীলন বিষয়ে যে সুপ্রণালী এদেশে প্রচলিত হইতেছে, তাহার স্বরূপ এ গ্রন্থ।”
“চিত্ত বিলাসিনী “কাব্যগ্রন্থটির শুরুতে পয়ার ছন্দে মঙ্গলকাব্যের ঢঙে ‘ব্রহ্মবন্দনা’ করে লেখিকা তার আত্মপরিচয় দিয়েছেন। হুগলি জেলার সুখরিয়া গ্রামে শ্রী শান্তি ভূষণ মুস্তাফি হলেন তার স্বামী। “চিত্ত বিলাসিনী” গ্রন্থটিতে লেখিকা নারী সংলাপ রচনায় বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। বইটি সেসময়ে নারী মুক্তি আন্দোলনে প্রভাব ফেলেছিল।
দৃশ্য কাব্য রচনায় কৃষ্ণ কামিনী ছিলেন বিশেষ পারদর্শী। ‘নবঙ্গিকা’ ও ‘মদয়ন্তিকায়’ লেখিকা কুলীন কন্যার বিরহ ও কামনার এক নাটকীয় চিত্র তুলে ধরেছেন।
“রাঢ়ের বিয়ে যদি আগে অবদি থাকতো তবে আর এসব কম্ম কেউ করতো না। দেক দিকি বোন কত লোক লজ্জার ভয়ে, পেট ফেলে, পেটের ছেলে যে প্রাণের চেয়েও বড়, তাও নষ্ট করচে। তাকি পোড়ার মুকো ড্যাকরারা চোকে দেখে না?”
এই সামাজিক চিত্র তৎকালীন বাংলার কৌলিন্য প্রথা ও বাল্যবিধবা জর্জরিত নিপীড়িত পরিবারেরই জ্বলন্ত চিত্রকথা।
তবে লেখিকা এদেশে ইংরেজ শাসনের গুনবন্দনা করেছেন। ইংরেজরা এদেশে এসে স্টিমার, টেলিগ্রাফ, বাষ্পীয় শকট চালু করে নারীদের দুঃখ মোচন করেছে। আগে বিরহকাতরা স্ত্রীরা প্রবাসী স্বামীর পথ চেয়ে দিন কাটাতো। তার খবরের অপেক্ষায় অধীর হয়ে উঠত। কিন্তু এখন আর তাদের সেই বিরহ জ্বালা সহ্য করতে হয় না।
“এখন দুবেলা পাব, মন সাধ পুরাইব,
হবে না বিচ্ছেদ জ্বালা আর।”
লেখিকা নারীদের সুস্থ জীবনবোধে উজ্জীবিত হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। নারীরা কেবল যৌন কামনার আগুনে নিজেকে সমর্পিত না করে জ্ঞানের পবিত্র মন্ত্রে নিজেদেরকে দীক্ষিত করে তুলবে।
লেখিকা কুলীন কন্যাদের প্রসঙ্গে বলেছেন—
“কুলের কামিনী হয়ে কুলে জলাঞ্জলি দিয়ে,
কুলটা কুৎসিত নাম ধরো না লো ধরোনা৷
পর পতি প্রীতি কুপে দেখ যেন কোনরূপে,
ভ্রমান্ধ হইয়ে ডুব দিও না লো দিও না৷
পতিসঙ্গ পরিহরি উপপতি সঙ্গ করি,
কলঙ্কের ভার শিরে নিও না নিও না৷”