রাজা রামমোহন রায় ও ব্রাহ্মধর্মের রূপকল্পনা
ভারতবর্ষ তথা বাংলার ইতিহাসে ঊনবিংশ শতাব্দীর গুরুত্ব বিশেষভাবে অনুধাবনের যোগ্য। এই শতাব্দীতে বাংলা তথা ভারতবর্ষের সমগ্র অধিবাসীর জীবনে, চিন্তায়, মননে, আধ্যাত্মিকতায় এক বিরাট পরিবর্তন সূচিত হয়েছিল। ভারতব্যাপী এই বিরাট পরিবর্তনের প্রথম পদধ্বনি শোনা গিয়েছিল বাংলার মাটিতে। বিশেষত ইংরেজের রাজধানী শহর কলকাতার বুকে। ওয়ারেন্ট হেস্টিং এর সময় থেকেই কলকাতা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র কাঠামোয় একটি মুখ্য ভূমিকায় প্রতিষ্ঠিত ছিল।
কলকাতার বুকেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট, প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এশিয়াটিক সোসাইটি যার মাধ্যমে ঐশ্বর্যশালী সংস্কৃত সাহিত্য পুনরুদ্ধারের মত একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কলকাতায় বসবাসকারী ইউরোপিয়ানরা কলকাতার তথাকথিত অধিবাসীদের দিয়েছিল ইন্দ্রিয় সংবেদ্য জীবন যাপনের স্বাদ। প্রাগ্রসর ইউরোপীয় চিন্তাধারা দর্শন, সাহিত্য, রাষ্ট্রনীতি, বৈজ্ঞানিক ভাবনার মধ্যে নিজেদের নিমজ্জিত করার এক দুর্লভ সুযোগ। ‘ঊনবিংশ শতাব্দীর বড় কথা পুঁথির যুগের অবসান এবং মুদ্রণের যুগের সূচনা’ (বাংলা সাহিত্যের সম্পূর্ণ ইতিবৃত্ত। অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়)
ঊনবিংশ শতাব্দীতে ভারতবর্ষ তথা বাংলার ধর্মীয় ইতিহাসের গতিপ্রকৃতি লক্ষ্য করলে যে সত্যটি প্রকাশিত হয় তা হল হিন্দুধর্ম মৌল সত্য থেকে বিচ্যুত হয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট আচার ও বিধি সর্বস্ব অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল। হিন্দু ধর্মের মধ্যে অসারতা ও যুক্তিহীনতা বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছিল। ধর্মের এই অন্তঃসারশূন্যতা তৎকালীন কিছু মানু ষের হৃদয়কে বিক্ষিপ্ত করে তুলল। তারা ধর্মের ক্ষেত্রে বা জীবনাদর্শের ক্ষেত্রে এক নতুনবোধ ও নুতনচেতনা আনতে তৎপর হলেন।
ঊনবিংশ শতাব্দীর সমস্ত ধর্মীয় কুসংস্কার দূর করে হিন্দু ধর্মকে উদার সমুন্নত ধর্ম রূপে প্রতিষ্ঠিত করতে অগ্রসর হলেন এ যুগের প্রথম আধুনিক মনস্ক মানুষ রাজা রামমোহন রায়। এই প্রসঙ্গে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা থেকে কিছু অংশ উদ্ধৃত করছি যখন-“বঙ্গদেশ ভ্রম ও কুসংস্কারে অন্ধকারে আবৃত ছিল, যখন ধর্মহীন ইংরেজি শিক্ষার প্রভাবে বঙ্গীয় যুবকগন নাস্তিকতা ও সংশয়বাদের স্রোতে পতিত হইয়া দুর্গতি সাগরের দিকে ধাবিত হইতেছিল, যখন ধর্ম প্রচারকগণ বঙ্গ সমাজে নিকৃষ্ট ধর্মমতের প্রাবল্য দেখিয়া হিন্দুধর্ম ও সমাজরূপ দুর্গকে দলবলে আক্রমণ পূর্বক উহাকে কম্পিত করিয়া তুলিতে ছিলেন তখন মহাত্মা রাজা রামমোহন রায় হিন্দু শাস্ত্রের তুমুল আন্দোলন উত্থিত করেন এবং হিন্দুধর্মের উচ্চ পবিত্র সত্য মতগুলি প্রচার করিয়া বঙ্গদেশকে এক নতুন আলোকে আলোকিত করেন।
সেই আলোকে ভ্রম ও কুসংস্কারের কুৎসিতভাব, নাস্তিকতার ভীষণতা এবং খ্রিস্টীয়ান ধর্মের অসারতা প্রকাশিত হইয়া পড়িল।বঙ্গদেশ দ্রুত বেগে যে অধোগতি প্রাপ্ত হইতেছিল তাহা রুদ্ধ হইয়া গেল।রাজা রামমোহন রায় হিন্দু শাস্ত্র মন্থন করিয়া যে ধর্ম মতের উদ্ধার করিলেন এবং যাহার বলে বঙ্গদেশ – সমগ্র হিন্দু সমাজের মহোপকার সাধন করিলেন তাহাই ব্রাহ্ম ধর্ম। (আদি ব্রাহ্মসমাজ ও হিন্দু সমাজ। আশ্বিন ১৮২২ শক। ৬৮৬ সংখ্যক তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা)
ঊনবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় চতুর্থ দশকে হিন্দু সমাজ এক গভীর ধর্মীয় সংকটে সম্মুখীন হয়েছিল। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর মিশন প্রতিষ্ঠিত হয়। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে কয়েকজন ইংরেজ মিশনারী বাংলাদেশে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারের জন্য সচেষ্ট হন। তাদের নির্দেশে উইলিয়াম কেরি ও টমাস নামে দুজন এ দেশের প্রেরিত হন।
প্রথমে এরা কলকাতাকে খ্রিস্টধর্ম প্রচারের জন্য পছন্দ করেন।কিন্তু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের রাজধানীতে কোনরূপ ধর্ম প্রচার কেন্দ্র গড়ে তুলতে আগ্রহী ছিলেন না। তাই তাদের অসম্মতিতে এদের বাধ্য হয়ে কলকাতার অদূরে দিনেমার কেন্দ্র শ্রীরামপুরে মিশন প্রতিষ্ঠা করতে হয়। এদের সঙ্গে ওয়ার্ড, বার্নসন, মার্শাম্যান প্রভৃতি মিশনারিরা যোগ দিয়েছিলেন। “শ্রীরামপুর মিশন প্রতিষ্ঠার পর তার সহকর্মীরা দেশীয় ভাষায় বাইবেল অনুবাদের প্রয়োজন বোধ করলেন।” (বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত। অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়।)
তারা ভেবেছিলেন দেশীয় ভাষায় বাইবেল পড়তে পারলে বাঙ্গালী কুসংস্কারাচ্ছন্ন হিন্দুধর্ম পরিত্যাগ করে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করবে। দেশীয় ভাষায় তারা সংস্কৃত রামায়ণ মহাভারত ও অনুবাদ করেছিলেন এবং মনে করেছিলেন অলৌকিক ব্যাপারে পূর্ণ সংস্কৃত সাহিত্য জনসাধারণের মধ্যে প্রচারিত হলে তারা এগুলিকে অবজ্ঞা করে প্রভু যীশুর আশ্রয় গ্রহণ করবে। তারা ‘সমাচার দর্পণ’ ও ‘দিক্ দর্শন’ নামে দুটি সাময়িক পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন। যার উদ্দেশ্য ছিল বিশেষভাবে হিন্দু ধর্মকে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে লোকের সামনে তুলে ধরা।
খ্রিস্টান মিশনারীদের এভাবে নিন্দা বা কুৎসা প্রচার করে যে ধর্মপ্রচার তাকে রামমোহন কোনদিনই সম্মানের দৃষ্টিতে দেখেননি। তখন শ্রীরামপুর মিশন পরিচালিত সাময়িক পত্রে হিন্দু ধর্মের নামে যে কুৎসা প্রচার করা হতো তার উত্তর দেবার জন্য রামমোহন ‘ব্রাহ্মনিক্যাল ম্যাগাজিন’ এবং তার বাংলা সংস্করণ ‘ব্রাহ্মণ সেবধি’ প্রকাশ করেন এবং বাংলায় শিবপ্রসাদ শর্মা ছদ্মনামে তার উত্তর দিয়েছিলেন।
একদিকে খ্রিস্টান মিশনারীরা যেমন হিন্দুধর্মকে আঘাত করছিল বা এই ধর্মের অপব্যাখ্যা করছিল, তেমনি ইংরেজি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের আর এক অংশ আবার নিজেদের ধর্মের সবকিছুকে অসার বলে উড়িয়ে দিচ্ছিল – এরা হলেন প্রধানত ডিরোজিওপন্থী ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠীর তরুণ সম্প্রদায়। এরা ছিলেন ফরাসি বিপ্লবের ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ। হেনরি লুইভিয়ানন ডিরোজিও ছিলেন হিন্দু কলেজের অধ্যাপক।তিনি সবসময় তার ছাত্রদের স্বাধীনভাবে চিন্তা করার, কোন কিছুকে অন্ধভাবে অনুসরণ না করার, যুক্তি নির্ভর চিন্তাধারা গড়ে তোলার – শিক্ষা দিতেন। তাঁর অনুগামীরা ‘ইয়ং বেঙ্গল’ নামে সমাজে পরিচিত ছিলেন। এরা তৎকালীন প্রচলিত হিন্দু ধর্মের গোড়ামী, কুসংস্কারকে দূর করতে এতদূর বদ্ধপরিকর হয়েছিলেন যে তার ফলে তৎকালীন হিন্দুধর্মই নস্যাৎ হতে বসেছিল।
তাই রামমোহন যখন হিন্দুধর্মের সমুন্নত রূপ হিসেবে ব্রাহ্মধর্ম গড়ে তুললেন তখন তাঁকে তিন ধরনের উপদ্রব সহ্য করতে হয়েছিল একটি রক্ষণশীল হিন্দু পৌত্তলিক সম্প্রদায়ের বিরোধিতা, অপরটি খ্রিস্টান মিশনারীদের হিন্দুধর্ম সম্বন্ধে অপপ্রচার এবং তৃতীয়টি হল ইংরেজি শিক্ষিত তরুণ সম্প্রদায়ের হিন্দুধর্ম সম্বন্ধে অনাস্থা।
রামমোহনই সর্বপ্রথম এই মৃতকল্প জাতির ঘোর তামসিকতাকে সাত্ত্বিকতার ভানমুক্ত করে রাজসিক আদর্শের প্রতিষ্ঠায় যত্নবান ছিলেন। আধুনিকতার অগ্রদূত রামমোহন রায় আপন স্বতন্ত্র ও যুক্তিবাদের দ্বারা যেমন সমাজনীতি ও রাষ্ট্রচিন্তাকে পরিশোধিত করেছিলেন তেমনি ধর্মক্ষেত্রে নবমন্ত্রে সংশোধনের দীক্ষা দিলেন জাতিকে। রামমোহন বেদান্ত প্রতিপাদ্য সত্য ধর্ম পুনঃস্থাপনের প্রয়াসী হয়েছিলেন। উদার অসাম্প্রদায়িক বিশ্বজনীন ধর্মই রামমোহন রায়ের ধর্ম ছিল। নিজের দেশকে ইউরোপের সমপর্যায়ে উন্নীত করার জন্য তিনি নানা সংস্কার আন্দোলনে ব্যপৃত হলেন ।
তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে দেশের উন্নতি করতে হলে প্রথমেই ধর্মীয় কুসংস্কার বর্জন করে তাকে উন্নীত করতে হবে। কারণ ধর্মের উপরে ভারতবর্ষ তথা বাংলার মূল ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত। তবে এই ধর্ম সংস্কার করতে গিয়ে তিনি অন্ধভাবে ইউরোপের অনুকরণ করলেন না বরং স্বদেশের ঐতিহ্যের দিকেই দেশবাসীকে আকৃষ্ট করলেন।তাই হিন্দু ধর্মকে বিকৃতি থেকে উদ্ধার করার জন্য ভারতীয় ধর্ম সংস্কৃতির মূল শিকড় যেখানে প্রথিত আছে সেই বেদান্তের দিকেই দৃষ্টি ফেরালেন। ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে রামমোহন অনুবাদ ও ভাষ্য সহ বেদান্ত গ্রন্থ প্রকাশ করেন।
বাংলা ভাষায় তিনি সর্বপ্রথম বেদান্তের ভাষ্যকার। রামমোহন ‘বেদান্তগ্রন্থ’ ও ‘বেদান্তসার’ শুধুমাত্র বাংলা ও হিন্দুস্তানি ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন তা নয়, তিনি ইংরেজি ভাষাতেও এই গ্রন্থ দুটির অনুবাদ করেন। এর উদ্দেশ্য হলো হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে ইউরোপীয়দের মনের ভ্রম দূর করা। হিন্দুদের মধ্যে যে কত উন্নত চিন্তা আছে তা রামমোহন বেদান্তের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করে দেখিয়ে দিলেন। এছাড়াও ‘উপনিষদের অনুবাদ’ এবং বিতর্কমূলক রচনার মধ্যে ‘উৎসবানন্দ বিদ্যা বাগীশের সহিত বিচার’, ‘গোস্বামীর সহিত বিচার’, ‘সহমরণ বিষয়ক প্রবর্তক নিবর্তক সংবাদ’, ‘কবিতা কারে সহিত বিচার’, ‘সহমরণ বিষয়ক’ প্রভৃতির কথা উল্লেখযোগ্য। তিনি ‘গৌড়ীয় ব্যাকরণ’ ও ব্রহ্মসঙ্গীত রচনা করেন।
ব্রহ্ম সম্বন্ধীয় আলোচনার জন্য ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে ‘আত্মীয় সভা’ স্থাপিত হয়। এই সভায় শাস্ত্রীয় আলোচনা বেদান্ত পাঠ ও ব্যাখ্যা এবং ব্রহ্ম সংগীত হত। ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দের ২০ শে আগস্ট রামমোহনের ‘ব্রাহ্মসভা’ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ব্রাহ্ম আন্দোলনের সূত্রপাত।
রামমোহন রায়ের ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠার পিছনে ছিল একটি মহান উদ্দেশ্য। বিভিন্ন ধর্ম সম্প্রদায়ের মধ্যে যারা এক অদ্বিতীয় পরমেশ্বরের উপাসক তাদের একত্রিত করে তিনি একটি সর্বধর্মীয় উপাসনা সভা গঠন করতে চেয়েছিলেন। ব্রাহ্মসমাজকে তিনি কোন বিশেষ ধর্ম সম্প্রদায়ে পরিণত করতে চাননি। হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান প্রভৃতি সকল সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের যোগদানের অধিকার ছিল। ব্রাহ্মসমাজের ট্রাস্ট ডিডে এর পরিচয় পাওয়া যায়।
ট্রাস্টিদের প্রতি এরূপ নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে তারা —– shall and do from time to time and all times for ever hereafter permit and suffer the said messuage or building land tenements hereditaments and premises with their appurtenances to be used occupied enjoyed applied and appropriated as and for a place of public meeting of all sorts and descriptions of people without distinction as shall behave and conduct themselves in an orderly sober religious and devout manner for the worship and adoration of the Eternal Unsearchable and Immutab1e Being who is the Author and Preserver of the Universe.
But not under or by any other name designation or title peculiarly used for and applied, to any particular being or beings by any man or set of men whatsoever, and that no graven image statue or sculpture carving painting picture portrait or the likeness of anything shall be admitted within the said messuages building land tenements hereditarnents and premises and that no sacrifice offering oblation of any kind or thing shall ever be permitted therein, and that no animal or living creature shall within,
or on the said messuage building land tenements hereditaments and premises be deprived of life either for religious purposes or for food, and that no eating or drinking (except such as shall be necessary by any accident for the preservation of life) feasting or rioting be permitted therein.
Or, thereon and that in conducting the said worship and adoration no object animate or inanimate that has been or is or shall hereafter become or be recognized as an object of worship by any man or set of men shall be reviled or slightingly,
or contemptuously spoken of or alluded to, either in preaching prayer or in the hymns or other mode of worship that may be delivered or used in the said Messuage or Building, and that no sermon preaching discourse prayer or hymn be delivered made or used in such worship but such as have a tendency to the promotion of the contemplation of the Author and Preserver of the Universe, to the promotion of charity morality piety benevolence virtue and the strengthening the bonds of union Between men of all religious persuasions and creeds……
(Trust Deed of ADI BRAHMO SAMAJ, 1830)
ব্রাহ্মসমাজে সকল সম্প্রদায়ের লোককে এইরূপ সমান অধিকার দানের উদ্দেশ্য ছিল এই যে পরস্পর একসঙ্গে উপাসনা করতে করতে ধর্মীয় স্বতন্ত্রবোধ ও গোড়ামী দূর হবে। সকল ধর্মকে সমান মনে হবে এবং এক সার্বজনীন ধর্মবোধের দিকে মন অগ্রসর হবে। হিন্দু ধর্মে প্রচলিত প্রতিমা পুজো ও প্রতীকোপসানা বিরুদ্ধে তিনি দৃঢ় হস্তে লেখনি ধারণ করেছিলেন। হিন্দুধর্মের মূল শিক্ষা যে নিরাকার একেশ্বরের উপাসনা এইটি প্রমাণ করার জন্যই তিনি বেদান্ত, উপনিষদের আশ্রয় নিয়েছিলেন। “হিন্দুজাতির কোথায় মহত্ব তিনি তাহা পরিষ্কার রূপে হৃদয়ঙ্গম করিয়াছিলেন এবং তাহার সযত্নে বক্ষে ধারণ করিয়াছিলেন,” (রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ। শিবনাথ শাস্ত্রী)
আধুনিক যুক্তিবাদী ও বৈজ্ঞানিক মনের দ্বারা বাঙালিকে নবযুগের অগ্রপ্রথিক করে তোলার সমগ্র দায়িত্ব বিধাতা যেন তাঁর ওপর অর্পণ করেছিলেন। এই আধুনিক ভারত চেতনায় তাঁকে ইউরোপীয় জন উইক্লিপ এর মত ‘মর্নিং স্টার অফ রিফর্মেশন’ বলা যেতে পারে। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে মুঘল বাদশার উকিল হয়ে তিনি বিলাত যাত্রা করেন। সেখানে ইউরোপীয় মননশীল সমাজে এই ভারতীয় ব্রাহ্মণ অসাধারণ গৌরব অর্জন করেন। ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে ওই দেশে শেষ বিশ্রাম লাভ করেন।