ব্রাজিলের সব আক্রমণ গিয়ে প্রতিহত হচ্ছিল ক্রোয়েশিয়ার দুর্ভেদ্য প্রাচীরে। সত্যিই যেন এদিন নেইমার, রিচার্লিসন, ভিনিসিয়ুসদের সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ক্রোয়েশিয়ার গোলকিপার ডোমিনিক লিভাকোভিচ। একের পর এক আক্রমণ ঠেকিয়ে যাচ্ছিলেন। লিভাকোভিচের দৃঢ়তায় শুক্রবার রাতে কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষ হয় গোলশূন্য ড্রতে।
খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ১০৫ মিনিটে গিয়ে গোলের দেখা যায় ব্রাজিল। সেলেসাওদের ত্রাণকর্তা নেইমার জুনিয়র। কিন্তু বেশিক্ষণ লিড ধরে রাখতে পারেনি ব্রাজিল। মুহূর্তের অসাবধানতায় গোল খেয়ে বসে তারা। ১১৭ মিনিটের মাথায় প্রতি আক্রমণে আসে ক্রোয়েশিয়া। সেখান থেকে পেরিসিচের পাসে বাঁ পায়ের শক্তিশালী শটে গোল করেন ব্রুনো পেটকোভিচ। ১-১ গোলে সমতা।
ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানেও দেয়াল হলে দাঁড়ালেন লিভাকোভিচ। প্রথম শট নিতে আসেন রদ্রিগো। তার শটটি ঠেকিয়ে দেন তিনি। মারকুইনসের শট গিয়ে লাগে সাইড বারে। ৪-২ গোলে জিতে সেমিতে যায় ক্রোয়েশিয়া। বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয় ব্রাজিল।
এদিন ম্যাচের শুরুতে ব্রাজিলকে চাপে রাখার চেষ্টা করে ক্রোয়েশিয়া। প্রতিপক্ষকে স্পেস না দিয়ে বলের নিয়ন্ত্রণ রাখার চেষ্টা করে ক্রোটরা। ব্রাজিলের কোনও ফুটবলার বল ধরলেই ছেঁকে ধরেন তিন-চার জন।
১১ মিনিটে প্রতি আক্রমণে দারুণ এক সুযোগ পায় ক্রোয়েশিয়া। ডান দিক থেকে ক্রস করেছিলেন মদ্রিচ। কিন্তু ক্রসে পা ঠেকাতে পারেননি পেরিসিচ।
২০ মিনিটে পর পর দুটি আক্রমণ করে ব্রাজিল। প্রথমে ভিনিসিয়ুস পরে নেইমার। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণ তা আটকে দেয়।
৪২ মিনিটে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে বক্সের সামান্য বাইরে ফাউল করা হয়। ফ্রিকিক পায় ব্রাজিল। নেইমারের পাস বিপক্ষ ফুটবলারের গায়ে লেগে হালকা ঘুরে গেলেও জমা পড়ে গোলকিপারের হাতে। গোলশূন্য বিরতিতে যায় উভয় দল।
বিরতির পর আরও আক্রমণাত্মক ব্রাজিল। ম্যাচের ৪৭ মিনিটে ব্রাজিলকে বঞ্চিত করে ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণ ভাগ। ক্রোয়েশিয়ার এক ফুটবলারের হাতে বল লাগলেও রেফারি ভার-এর সঙ্গে পরামর্শ করে পেনাল্টি না দেওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত নিলেন। আক্রমণ বাড়াতে ৫৭ মিনিট রাফিনহাকে তুলে অ্যান্টনিকে নামান তিতে। নেমেই ডান দিকে পাস বাড়িয়েছিলেন তিনি। অল্পের জন্য গোল হয়নি।
৬৬ মিনিটে পাকুয়েতার শট বাঁচিয়ে দেন লিভাকোভিচ। গোলকিপারের মাথায় ওপর দিয়ে শট মারতে গিয়েছিলেন পাকুয়েতা। লিভাকোভিচের হাতে লেগে বল কর্নার হয়ে যায়।
৭৬ মিনিট আবারও গোলের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল ব্রাজিল। কিন্তু এবারও ক্রোয়েশিয়ার গোলকিপার ত্রাতা হয়ে উঠলেন। নেইমারের শট বাঁচিয়ে দেন লিভাকোভিচ।
৮০ মিনিটে আবারও দেয়াল হয়ে দাঁড়ালেন লিভাকোভিচ। অ্যান্টনির ক্রস পেয়েছিলেন রদ্রিগো। তার থেকে পাস পেয়েছিলেন পাকুয়েতা। তার শট আটকে দেন লিভাকোভিচ।
নির্ধারিত ৯০ মিনিট পর শুরু হয় অতিরিক্ত সময়ের খেলা। অতিরিক্ত সময়েও গোল খোঁজার মরিয়া চেষ্টা করে ব্রাজিল। তবে বার বার ক্রোয়েশিয়ার বক্সে গিয়ে প্রতিহত হয় তাদের আক্রমণ। অবশেষে গোলের মুখ খুলেন নেইমার।
মাঝমাঠ থেকে খেলা শুরু করেছিলেন নেইমারই। প্রথমে পাস খেলেন পেদ্রোর সঙ্গে। সেখান থেকে নেইমার বল দেন পাকুয়েতাকে। পাকুয়েতার থেকে পাস পেয়ে গোলকিপার লিভাকোভিচকে এক টোকায় কাটিয়ে বল জালে জড়ান পিএসজি তারকা।
মেনে হচ্ছিল ব্রাজিলই চলে যাচ্ছে সেমিফাইনালে। জয়ের উৎসব করার আগ মুহূর্তে ব্রাজিলকে স্তব্ধ করে দেন ব্রুনো পেটকোভিচ। ১১৭ মিনিটের মাথায় প্রতি আক্রমণে আসে ক্রোয়েশিয়া। সেখান থেকে পেরিসিচের পাসে বাঁ পায়ের শক্তিশালী শটে গোল করেন ব্রুনো পেটকোভিচ। ১-১ গোলে সমতা। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।
প্রথমে শট নিতে আসেন নিকোলা ভ্লাসিচ। ১-০ গোলে এগিয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া। ব্রাজিলের হয়ে প্রথম শট মিস করেন রদ্রিগো। ক্রোয়েশিয়ার হয়ে লক্ষ্যভেদ করে মাজের। গোল করে কাসিমিরোও, ক্রোয়েশিয়া ২- ব্রাজিল ১। এরপর একে একে লক্ষ্যভেদ করেন লুকা মডিদ্রচ ও ওরসিচ। ব্রাজিলের হয়ে পেদ্রো লক্ষ্যভেদ করলেও বল সাইড বারে লাগান মারকুইনোস। ৪-২ গোলে জয় নিশ্চিত হওয়ায় আর শট নেওয়ার প্রয়োজন পড়েনি।