সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যাকাণ্ডে সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে করা একটি মামলা খারিজ করা হয়েছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার মামলাটি খারিজ করেন ওয়াশিংটনের বিচারক জন বেটস।
২০১৮ সালের ২ অক্টোবর খাসোগিকে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি আরবের কনস্যুলেটের ভেতরে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করেন তাঁর বাগ্দত্তা হেতিজে চেঙ্গিস। মামলায় অভিযোগ করা হয়, সৌদি নেতৃত্ব ও দেশটির কর্মকর্তারা খাসোগিকে আটকে রেখে মাদক প্রয়োগ ও নির্যাতন করে হত্যা করেছেন।
এ হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই সন্দেহের তির ছিল যুবরাজ সালমানের দিকে। কারণ, সালমানসহ সৌদি আরবের শাসকগোষ্ঠীর কঠোর সমালোচক ছিলেন খাসোগি। যুবরাজের আদেশে ওই হত্যাকাণ্ড হয়েছিল—এমনটি মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারাও।
তবে গত সেপ্টেম্বরে সৌদি আরবের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন যুবরাজ সালমান। এরপর গত ১৭ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশটির আদালতকে জানান, একটি বিদেশি সরকারের বর্তমান প্রধান হিসেবে সৌদি যুবরাজ মার্কিন আদালতের বিচারের আওতা থেকে রেহাই পাবেন।
সালমানকে নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই অবস্থানের ভিত্তিতেই হত্যা মামলাটি খারিজ করেছেন বিচারক জন বেটস। তিনি বলেন, মামলা থেকে যুবরাজ সালমানকে দায়মুক্তি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করার কোনো ক্ষমতা তাঁর নেই।
জন বেটস বলেন, সৌদি আরবসহ বিদেশি বিভিন্ন বিষয় দেখভালের দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্র সরকারের। এখন যদি আদালত সৌদি যুবরাজের দায়মুক্তির বিষয়ে বিপরীত কোনো সিদ্ধান্ত দেয়, তা সরকারের ওই দায়িত্ব পালনে হস্তক্ষেপ হবে। তাই এই মামলা নিয়ে ভিন্ন কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার উপায় তাঁর হাতে নেই।
খাসোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে শুরু থেকে শক্ত অবস্থানে ছিল মার্কিন সরকার। গত বছরেই এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুবরাজ সালমান খাসোগিকে হত্যাকাণ্ডের অনুমোদন দিয়েছিলেন—এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে। যদিও ওই দাবি নাকচ করেছিল সৌদি সরকার।
খাসোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে ওয়াশিংটন-রিয়াদ সম্পর্কেও চিড় ধরে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দিন দিন ইরানের হুমকি হয়ে ওঠা এবং জ্বালানি তেলের বাজারে সৌদি আরবের আধিপত্যের কারণে শেষ পর্যন্ত ওই সম্পর্ক জোড়া লাগাতে তৎপর হয়ে ওঠেন বাইডেন। এর জেরে গত জুলাইয়ে সৌদি আরব সফর করেন তিনি।