বিশ্বজুড়ে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের বেশি কর্মক্ষেত্রে হয়রানি বা সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। সোমবার (৫ ডিসেম্বর) জাতিসংঘের প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
অলাভজনক নিরাপত্তা সংস্থা লয়েডস রেজিস্টার ফাউন্ডেশন ও পোলস্টার গ্যালাপের সাথে আইএলও-এর যৌথ গবেষণার পর জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা একটি গবেষণা পরিচালনা করে।
এতে বলা হয়, কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানির ঘটনা বিশ্বজুড়ে নিয়মিত ঘটছে।
সমীক্ষায় দেখা যায়, বিশ্বে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৭৪৩ মিলিয়ন কর্মীর মধ্যে ২২.৮% মানুষ কোনো না কোনো সময় কোনো না কোনোভাবে সহিংসতা ও হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন।
প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভুক্তভোগী বলেছেন, তারা একাধিক ধরনের সহিংসতা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। অন্তত ৬.৩% কর্মজীবনে শারীরিক, মানসিক এবং যৌন এই তিনভাবেই হয়রানির শিকার হয়েছেন।
সমীক্ষায় দেখা যায়, হয়রানির শিকার হয়েও গত পাঁচ বছরে ৫৫% কর্মী সেটি কারো কাছে প্রকাশ করেননি।
হয়রানির কথা আড়াল করার কারণ হিসেবে সময়ের অপচয় ও খ্যাতি হারানোর আতঙ্ককে চিহ্নিত করা হয়েছে।
আইএলওর সহকারী মহাপরিচালক ম্যানুয়েলা তোমেই বলেন, কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনো পর্যাপ্ত নীতি ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেই। এমনকি তাদের বিশ্বাস তারা কোনো বিচার পাবেন না।
কারা বেশি সহিংসতার শিকার
১২১টি দেশে ৭৪,৩৬৪ জন শ্রমিকের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে জরিপের ফলাফল তৈরি করা হয়েছে। মুঠোফোনে তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
তবে চীনে সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য সরকারের অনুমতি নিতে হয়েছে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, সহিংসতা বা হয়রানি কীভাবে হয়, সেটি নিয়ে সব দেশে ধারণা একরকম নয়। অনেক জায়গায় কাউকে ধাক্কা দেওয়া অভদ্র আচরণ হিসাবে দেখা হয়। এটি হয়রানি নয়।
কর্মক্ষেত্রে মনস্তাত্ত্বিক সহিংসতা এবং হয়রানি সবচেয়ে সাধারণ হিসাবে দেখা গেছে, ১৭.৯% বা ৫৮৩ মিলিয়ন কর্মী তাদের কর্মজীবনে এটির সম্মুখীন হয়েছে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৮.৫% অর্থাৎ ২৭৭ মিলিয়ন মানুষ শারীরিক সহিংসতা এবং হয়রানির সম্মুখীন হয়েছে।
ধারণা করা হয়েছিল নারীরা মানসিক সহিংসতার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষরা প্রায়শই শারীরিক সহিংসতার শিকার হন।
যৌন সহিংসতা
কর্মস্থলে প্রতি ১৫ জনের মধ্যে অন্তত একজন যৌন সহিংসতা বা হয়রানির শিকার হয়েছেন।
সহিংসতা ও হয়রানির তিনটি ধরণের মধ্যে লিঙ্গ ব্যবধান রয়েছে। ৮% এর বেশি মহিলা ও ৫% পুরুষ এমন সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
টমেই বলেন, উত্তরদাতারা লজ্জা ও ভয় থেকে অনেকেই বিষয়গুলো আলোচনা করতে চাননি।
জরিপে দেখা গেছে, কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানি পুনরাবৃত্তি এবং স্থায়ী হতে পারে। প্রতি পাঁচজনের মধ্যে তিনজনের বেশি ভুক্তভোগী বলেছেন তারা একই ধরণের সহিংসতা ও হয়রানির শিকার একাধিকবার হয়েছেন।