ষষ্ঠ দল হিসেবে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ব্রাজিল। দুর্দান্ত ছন্দের ফুটবল খেলে দক্ষিণ কোরিয়াকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
সেলেকাওদের ৪টি গোলই এসেছে প্রথমার্ধে। দলের হয়ে একে একে গোল করেছেন ভিনিসিয়াস, নেইমার, রিচার্লিসন ও লুকাস পাকেতা।
শেষ গ্রুপ ম্যাচে ক্যামেরুনের কাছে হারের পর ভক্তদের আশ্বস্ত করতে ব্রাজিলের দরকার ছিল নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ রাখা। সেটা তারা করেছে দারুণভাবেই। চোট কাটিয়ে দলের সেরা তারকা নেইমারের ফিরে আসায় উজ্জীবিত ব্রাজিল শুরু থেকেই কোরিয়াকে ম্যাচে কোনো সুযোগ দেয়নি।
নিজস্ব ধারার ‘জোগা বোনিতোর’ উপভোগ্য এক প্রদর্শনী উপহার দেয় ব্রাজিল। কোরিয়াকে প্রথমার্ধে এক রকম দর্শক বানিয়ে নাইন সেভেন্টি ফোর স্টেডিয়ামে উৎসব শুরু করেন নেইমার-রিচার্লিসনরা।
শুরুটা করেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। সপ্তম মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে রাফিনিয়ার ক্রস ফার পোস্টে পাওয়ার পর বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিখুঁত শটে লক্ষ্যভেদ করেন রিয়াল মাদ্রিদের এ তারকা ফরোয়ার্ড।
মিনিট পাঁচেক পরই ব্যবধান দ্বিগুণ করে ব্রাজিল। রিচার্লিসনকে নিজেদের বক্সে ফাউল করেন কোরিয়ার ডিফেন্ডার। রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজালে স্পট থেকে গোল করে নিজের প্রত্যাবর্তনকে স্মরণীয় করে রাখেন নেইমার।
দুই গোলের ব্যবধান পেয়ে অদম্য হয়ে ওঠে ব্রাজিল। ছোট পাসে পজিশনাল ফুটবল খেলে অকার্যকর করে তোলে কোরিয়ার ডিফেন্স লাইনকে।
২৯ মিনিটে ম্যাচ এক রকম ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যায় ব্রাজিল। মাথা দিয়ে চমৎকার বল কন্ট্রোলের পর রিচার্লিসন বল মার্কিনিয়োসকে পাস দিয়ে ঢুকে পড়েন বক্সে। মার্কিনিয়োসের কাছ থেকে বল পান থিয়াগো সিলভা।
নির্ভুল পাসে তিনি আবারও খুঁজে নেন রিচার্লিসনকে। বল পেয়ে দেরি করেননি টটেনহ্যাম হটস্পারে খেলা এ ফরোয়ার্ড। স্কোরলাইনকে ৩-০ বানিয়ে দেন তিনি।
বিরতির আগে আবারও আঘাত আনে ৫ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। আক্রমণে উঠে আসা নেইমারের পাস খুঁজে নেয় ভিনিসিয়াসকে। ভিনিসিয়াসের মাপা পাস থেকে বল পেয়ে লক্ষ্যভেদ করেন লুকাস পাকেতা।
৪-০ গোলে এগিয়ে ও কোয়ার্টার ফাইনালে এক পা রেখে বিরতিতে ফেরে ব্রাজিল। ২০১৪ সালে ব্রাজিলের বিপক্ষে জার্মানির পর এই প্রথম কোনো দল বিশ্বকাপের প্রথমার্ধে ৪ গোলের দেখা পেয়েছে।
প্রথমার্ধে কার্যত শেষ হয়ে যাওয়া ম্যাচের দ্বিতীয়াংশে মরিয়া চেষ্টা করে কোরিয়া। শূন্য হাতে ফিরে যেতে চাইছিল না এশিয়ার পরাশক্তিরা।
তবে ব্রাজিলের ডিফেন্স ও গোলকিপার আলিসন তাদের হতাশ রাখেন ৭৫ মিনিট পর্যন্ত। পরের মিনিটে পাইক সিউং-হোর স্ট্রাইকে স্কোরশিটে নাম ওঠে কোরিয়ার।
এই অর্ধেও কয়েকটি সুযোগ পায় ব্রাজিল, তবে কোরিয়ার ডিফেন্স প্রথমার্ধের চেয়ে গোছানো খেলা উপহার দেয়ার ব্যবধান আর বাড়েনি।
দ্বিতীয়ার্ধে বেশ কিছু পরিবর্তন করেন ব্রাজিলের কোচ লিওনার্দো তিতে। গ্লেইসন ব্রেমার ও গোলকিপার ওয়েভারটনকেও নামান তিনি। এতে করে বিশ্বকাপের ইতিহাসে স্কোয়াডের ২৬ জন খেলোয়াড়কে মাঠে নামানো প্রথম দলে পরিণত হয় সেলেকাওরা।
শেষ পর্যন্ত ৪-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ব্রাজিল। শুক্রবার রাত ৯টার কোয়ার্টার ফাইনালে নেইমারদের প্রতিপক্ষ লুকা মডরিচের ক্রোয়েশিয়া।