বিশ্বকাপের রাউন্ড অফ সিক্সটিনে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের প্রথমার্ধেই সামুরাই ব্লুদের ম্যাজিক। ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে নকআউট ম্যাচের প্রথমার্ধে এক গোলে এগিয়ে যায় সূর্যোদয়ের দেশ। জাপানের হয়ে গোলের মুখ খোলেন ডাইজেন মায়েদা। বিরতির পর শুরুতে ক্রোয়েশিয়াকে ম্যাচে ফেরান পেরিসিচ। ১-১ গোলে শেষ হয় নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা।
ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। অতিরিক্ত সময়েও হয়নি মীমাংসা। ফলে পেনাল্টি শুটআউট। সেখানে জাপানের তিনটি পেনাল্টি শট ঠেকিয়ে দেন ক্রোট গোলকিপার ডোমিনিক লিভাকোভিচ। পেনাল্টি স্নায়ুযুদ্ধে লিভাকোভিচ বীরত্বে ৩-১ গোলের জয় নিয়ে শেষ আটে উঠে ক্রোয়েশিয়া। শেষ ষোলোতেই সমাপ্ত জাপানের বিশ্বকাপ মিশন।
এদিন ম্যাচের শুরু থেকেই হাই প্রেসিং ফুটবল খেলতে শুরু করে জাপান। গতি দিয়ে ক্রোয়েশিয়াকে কিছুটা হতভম্ব করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন জাপানের কোচ হাসিমি মোরিইয়াসু। প্রথমে একটু সমস্যা হলেও ম্যাচ যত এগিয়েছে পাল্টা আক্রমণে গিয়েছে ক্রোয়েশিয়াও। ইউরোপ ও এশীয় ঘরানার ফুটবলের আক্রমণ-প্রতিআক্রমণে জমে ওঠে ম্যাচ। দুই দলই রক্ষণকে মজবুত রেখে আক্রমণে যায়।
ম্যাচে দ্বিতীয় মিনিটেই কর্নার পায় জাপান। কর্নার নেওয়ার পর ডান দিকে বাড়ানো ক্রসে মাথা ছোঁয়ান শোগো তানিগুছি। তবে তা চলে যায় পোস্টের বাইর দিয়ে। ম্যাচের ৮ মিনিটে ডিফেন্সের ভুলে গোলের সুযোগ পায় ক্রোয়েশিয়া। ডি বক্সের ভেতর থেকে ইভান পেরিসিচের নেওয়া শট রুখে দেন জাপানের গোলরক্ষক শুইচি গোন্ডা।
ম্যাচের ১২ মিনিটে ডান দিক থেকে ক্রস বাড়ান জুনিয়া আইটিও। তবে সেই ক্রসে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন ইউটো নাগাটোমো। ম্যাচের ১৭ মিনিটে বাম দিক থেকে ক্রস বাড়ান ইউটো নাগাটোমো। তবে তাতে মাথা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন ডাইচি কামাডা। এরপর ম্যাচের ১৯ মিনিটে ডি বক্সের বাইর থেকে ফ্রি কিক পায় জাপান। তবে তা কাজে লাগাতে পারেনি তারা।
ম্যাচের ২৩ মিনিটে ফ্রি কিক পায় ক্রোয়েশিয়া। মদ্রিচের নেওয়া ফ্রি কিক থেকে বল পেয়ে ডি বক্সের বাইরে থেকে শট করেন মার্সেলো ব্রোজোভিক। তবে তা চলে যায় ক্রসবারের অনেক ওপর দিয়ে। এরপর ম্যাচের ২৫ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাকে গেলেও তা কাজে লাগাতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া। এরপর আরও বেশ কিছু অ্যাটাক করে ক্রোয়েশিয়া। তবে তা জালে জড়াতে ব্যর্থ হয় তারা।
অবশেষে ম্যাচের প্রথমার্ধের বাঁশি বাজার ২ মিনিট আগে গোলের দরজা খুলে ফেলে জাপানি সামুরাইরা। কর্ণার থেকে দোয়ানের ক্রসে ডাইজেন মায়েদা গোল করে জাপানকে এগিয়ে দেয়। প্রথমার্ধে এরপর আর গোলের সুযোগ তৈরি হয়নি। ১ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় জাপান।
বিরতির পরই সমতা ফেরায় ক্রোয়েশিয়া। ম্যাচের ৫৫ মিনিটে লভরেনের পাস থেকে দুর্দান্ত এক গোল করেন পেরিসিচ। লভরেন ডান দিক থেকে সুইং করেন, পেরিসিচ হেডারে বল নেটে জড়ান। মাপা হেড। অসাধারণ একটি গোল।
৫৮ মিনিটে দারুণ সুযোগ পেয়েছিল জাপান। ওয়াতারু এন্ডোর শটটি লাফিয়ে বাইরে বের করেন লিভাকোভিচ। বাকিসময় আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণ হলে গোলের দেখা পায়নি কোনও দলই। ফলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। কাতার বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত গড়ালো। সেখানেও কোন গোল হয়নি ফলে নিয়ম অনুযায়ী ম্যাচ গড়ায় পেনাল্টি শুটআউটে।
মিনামিনোর প্রথম পেনাল্টি ঠেকিয়ে দেন ক্রোয়েশিয়ার কিপার লিভাকোভিচ। ভ্লাসিচ নড়বড় করলেও পেনাল্টিতে গোল হয়। ক্রোয়েশিয়া ১-০ এগিয়ে যায়।
এরপর জাপানের মিতোমার পেনাল্টিও ঠেকিয়ে দেন লিভাকোভিচ। এরপর গোল করে ক্রোয়িশিয়াকে ২-০ গোলে এগিয়ে দেন ব্রোজোভিচ।
এরপর গোল করেন জাপানের টাকুমা আসনো। ক্রোয়েশিয়ার লিভাজার শট ঠেকিয়ে দেন জাপানি গোলকিপার এস গোন্ডা।
এরপর আবার জাপানের ইয়োশিদার শট ঠেকিয়ে দেন লিভাকোভিচ। পরে লক্ষ্যভেদ করেন মারিও পাসালিক। পেনাল্টি শুটআউটে ৩-১ গোলে ম্যাচ জিতে নেয় ক্রোয়েশিয়া।
শেষ ষোলোয় হলো না সূর্যোদয়। রাশিয়া বিশ্বকাপের পর এবারও নকআউট থেকেই বিদায় জাপানিদের।