যেকোনো দেশের অখন্ডতা নিরাপত্তা স্থিতিশীলতা সর্বোপরি সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে সেনাবাহিনীর অবদান অপরিসীম। সীমান্ত পাহারা থেকে শুরু করে দেশের শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠাতে সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার্থে সর্বোপরি বৈদেশিক আক্রমণের হাত থেকে সুরক্ষিত করতে দিবারাত্র প্রহরীর মত ভূমিকায় অবতীর্ণ ভারতীয় সেনাবাহিনী।আমাদের ভারতবর্ষের জাতীয় সংহতি সম্প্রীতি ঐক্য দেশাত্মবোধের বাতাবরণ জনমানসে সুষ্ঠুভাবে বজায় রাখতে সেনাবাহিনীর জওয়ানেরা জীবনকে বাজি রেখে আত্ম বলিদানে নিবেদিত প্রাণ।
নৌবাহিনী হল ভারতীয় সামরিক বিভাগের নৌ বিভাগ। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সশস্ত্র নৌবাহিনী রয়েল ইন্ডিয়ান নেভি নামটি স্বাধীনতার পর ১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি পরিবর্তন করে রাখা হয় ভারতীয় নৌ-বাহিনী। ভারতের রাষ্ট্রপতি কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে সেনা বাহিনীর নেতৃত্ব দান করেন। মারাঠা সম্রাট ছত্রপতি শিবাজীকে নৌবাহিনী জনক বলা হয়ে থাকে। নৌবাহিনীর প্রধান কাজ হল দেশের সামুদ্রিক সীমানা সুরক্ষিত রাখা। ১৯৭১ সালে ভারত-পাক যুদ্ধের সময় প্রথমবার ভারতীয় নৌবাহিনী পাকিস্তানের উপকূলে প্রবেশ করে সরাসরি যুদ্ধ করে। করাচি বন্দরে প্রথমবার অ্যান্টিশিপ মিসাইল দিয়ে ধ্বংস করে পাকিস্তানের একাধিক জাহাজ। এই অভিযানের নাম ছিল অপারেশন ট্রাইডেন্ট। এই অভিযানে ছিল ভারতীয় নৌসেনার তরফে তিনটি যুদ্ধ জাহাজ। আইএনএস নিপাত, আইএনএস নির্ঘাত এবং আইএনএস বীর।এই তিন যুদ্ধ জাহাজ গুজরাটের ওখা বন্দর থেকে রওনা হয় পাকিস্তানের করাচি বন্দরকে লক্ষ্য করে। রাতের মধ্যে করাচি উপকূল থেকে ৭০ মাইল দূরে পৌঁছায় ভারতের এই তিন যুদ্ধ জাহাজ। মুহূর্তের মধ্যে অ্যান্টিশিপ মিশাইল দিয়ে ধ্বংস করে পাকিস্তানের পিএনএস খাইবার। পাশাপাশি ধ্বংস করে আরও বেশ কয়েকটি জাহাজ। এরপরই শুরু হয়েছিল একে অপরকে হামলা। গোটা হানায় মোট ৬টি মিসাইল ছুড়েছিল ভারতীয় নৌসেনা। কোনও ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই দেশে ফিরে এসেছিল ভারতীয় নৌসেনার জাহাজগুলি।৯০ মিনিটের এই অপারেশনে নৌসেনার কোনও ক্ষতি হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে অন্যতম সফল নৌসেনা অভিযান বলা হয় এই ‘অপারেশন ট্রাইডেন্ট’কে।এই বিশেষ অভিযানের জন্য ভারতীয় নৌবাহিনী সম্মানিত করে জয়ী যুদ্ধ জাহাজের সকল সেনা ও আধিকারিকদের। এই বিশেষে দিনটিকে স্মরণ করেই প্রতি বছর ৪ ডিসেম্বর পালিত হয় নৌসেনা দিবস।এই বিশেষ দিনে ভারতীয় নৌসেনার তরফে দেশের বেশ কয়েকটি সমুদ্র উপকূলে করা হয় বিশেষ মহড়া। পাশাপাশি মুম্বইয়ে ইন্ডিয়া গেটের সামনে নৌসেনার বিশেষ দুটি ব্যন্ডের দল করে বিটিং রিট্রিট। একইসঙ্গে এই দিনেই দেশের আম জনতা বিশেষ করে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রদের দেখার সুযোগ করে দেওয়া হয় নেভির যুদ্ধ ও অন্য সমরাস্ত্র।ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রাথমিক দায়িত্ব দেশের সামুদ্রিক সীমা সুরক্ষিত রাখা। এছাড়াও যৌথ মহড়া, বন্দর পরিদর্শন এবং বিপর্যয়ের সময় ত্রাণকাজের মতো জনকল্যাণকর কাজে নৌবাহিনীকে ব্যবহার করা হয়৷ বিশেষ করে করোনা অতিমারিতে আমরা লক্ষ্য করেছি ভারতীয় নৌ বাহিনীর মানবিক দায়িত্ব ও কর্তব্য নিষ্ঠার অবিসংবাদিত নজির।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী জওয়ান, আধিকারিক ও সবধরনের কর্মচারী মিলিয়ে বর্তমানে ভারতীয় নৌবাহিনীতে কর্মরত রয়েছেন ৬৭,২২৮ জন৷ নৌসেনার অস্ত্রাগারে মজুত রয়েছে, একটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার, আটটি ল্যান্ডিং শিপ ট্যাংক ১১টি ডেস্ট্রয়ার, একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন, একটি ব্যালেস্টিক মিসাইল সাবমেরিন, ১৪টি সাধারণ সাবমেরিন ও একটি মাইন প্রতিরোধী ভেসেল৷ ভারতীয় নৌ বাহিনী দেশের সামুদ্রিক সীমানা সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি ভারতবর্ষকে সামরিকভাবে আরো বেশি সুদৃঢ় ও বলীয়ান করে তুলতে এখনো তার কর্তব্য পালনে অবিচলিত। এক কথায় বলতে গেলে আমাদের সেনাবাহিনীর অকুতোভয় জওয়ানেরা দেশমাতৃকার সেবার প্রতি একনিষ্ঠভাবে নিবেদিত প্রাণ। জাতীয় নৌসেনা দিবসে আমরা সমস্ত ভারতীয়রা আমাদের সেনাবাহিনীতে কর্তব্যরত বীর জওয়ানদের কুর্নিশ জানাই তাদের মহৎ কাজকে ভালোবেসে ও স্মরণ করে। ভুলে গেলে চলবেনা তাদের অতন্দ্র প্রহরা নজরদারি দেশাত্মবোধের ও দেশমাত্রিকার সেবার প্রতি দায়বদ্ধতাতেই আপামর ভারতীয়রা নিরাপত্তায় জীবনযাপন করে। জাতীয় সেনা দিবসে আমরা সমস্ত দ্বিধা উৎকণ্ঠা সংকোচ সরিয়ে আমাদের সেনাবাহিনীর প্রতি হয়ে উঠি আরো বেশি মানবিক ও সহানুভূতিশীল।