সোনালি প্রজন্মের বেলজিয়ামকে আগের ম্যাচে হারিয়ে দীর্ঘ ২৪ বছর পর বিশ্বকাপে জয়ের দেখা পেয়েছিল মরক্কো। অবিস্মরণীয় ওই জয়ে ১৯৮৬ বিশ্বকাপের পর আবারও গ্রুপপর্ব পেরোনোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করে তারা। অবশেষে গ্রুপপর্বে শেষ ম্যাচে কানাডাকে ২-১ গোলে হারিয়ে ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে পা রেখেছে আফ্রিকান দেশটি।
শেষ ষোলোয় পা রাখতে কানাডার বিপক্ষে হার এড়ানোই মরক্কোর জন্য যথেষ্ট ছিল। বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) দোহার আল থুমামা স্টেডিয়ামে তাই নির্ভর হয়েই মাঠে নামে আটলাস লায়নরা। ম্যাচের চতুর্থ মিনিটে এগিয়েও যায় তারা। তবে এতে কানাডার গোলরক্ষকের বদান্যতার ভূমিকাই বেশি।
ডিফেন্ডারের দুর্বল ব্যাকপাস ক্লিয়ার করতে ডি-বক্সের বাইরে চলে আসেন কানাডা গোলরক্ষক মিলান বোরিয়ান। শট নিলেও বলটিকে বিপদজনক এলাকার বাইরে পাঠাতে পারেননি তিনি। সেই সুযোগেই বল পেয়ে যান হাকিম জিয়েখ। মিলান বোরিয়ান এগিয়ে আসায় কানাডার গোলবার তখন খালি। ফলে তার মাথার ওপর দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দিতে কোনো অসুবিধা হয়নি জিয়েখের।
ম্যাচের ১৫ মিনিটেই গোল পরিশোধের সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল কানাডা। ডান প্রান্ত থেকে কাইল নারিন দারুণ এক ক্রস করলেও মরক্কোর গোলরক্ষককে একা পেয়েও শট পোস্টে রাখতে পারেননি তাহোন বিউকানান।
কানাডা সুযোগ হাতাছাড়া করলেও মরক্কো ছিল পুরো বিপরীত মেরুতে। কানাডিয়ান রক্ষণের ভুলের ফায়দা তুলে নিয়ে লিড দ্বিগুণ করে আফ্রিকান দেশটি। দুই কানাডিয়ান সেন্টারব্যাক কানাডার কামাল মিলার ও স্টিভেন ভিটোরিয়া সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও তাদের গাফেলতির সুযোগ নিয়ে মরক্কোর এন-নেসিরি মাঝমাঠ থেকে ছুটে এসে গোল করেন।
খেলার ধারার বিপরীতে ৪০ মিনিটে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান কমাতে সক্ষম হয় কানাডা। যদিও তাতে নিজেদের কৃতিত্ব নেই, গোলটি যে আত্মঘাতী। বাঁ দিক থেকে কানাডার স্যামুয়েল আডোকুজবের নেওয়া শটে নায়েফ আগের্দ পা চালালে তা দিক পরিবর্তন করে মরক্কোর জালে আশ্রয় নেয়। এটি কাতার বিশ্বকাপের প্রথম এবং টুর্নামেন্টের ইতিহাসে শততম আত্মঘাতী গোল।
বাঁ দিক থেকে হাকিম জিয়েখের ফ্রি-কিক থেকে পাওয়া বলে জোরালো শট চালিয়ে এন-নেসিরি গোল করলে প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ব্যবধান বাড়ায় মরক্কো। কিন্তু এখানেও তালগোল পাকান নায়েফ আগের্দ। তিনি অফসাইডে থাকার কারণেই যে ভিএআরে গোলটি বাতিল হয়ে যায়। ফলে ২-১ গোলে এগিয়ে থেকেই মধ্যবিরতিতে যায় আরব দলটি।
প্রথমার্ধে মরক্কোর প্রাধান্য থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে কানাডার দাপট ছিল। গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় আগেই নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় কিছু একটা পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে কনক্যাকাফ অঞ্চলের দেশটি। ৫৮ মিনিটে সমতায় ফেরার সুযোগও এসেছিল তাদের সামনে। কিন্তু ডান প্রান্ত থেকে আসা আলফোন্সো ডেভিসের ক্রস লারিনের সামনে দিয়ে গেলেও শট নিতে ব্যর্থ হন তিনি।
মিনিট দুয়েক পর আবারও কানাডা পেয়েছিল ম্যাচে ফেরার সুযোগ। কিন্তু এবার ডান প্রান্ত থেকে হইলেটের কাছ থেকে বল পেয়ে ডেভিস নিজেই সুযোগ হাতছাড়া করেন। ৭১ মিনিটে আরও একবার সমতাসূচক গোলের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল কানাডিয়ানরা। কিন্তু হইলেটের ক্রসে আটিবা হাচিনসন মাথা লাগালেও তা ক্রসবারে প্রতিহত হয়ে ফিরে আসে।
শেষ পর্যন্ত কানাডাকে ২-১ গোলে হারিয়েই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে শেষ ষোলোর টিকিট পায় মরক্কো। এর আগে, টুর্নামেন্টের ইতিহাসে প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে ১৯৮৬ বিশ্বকাপে গ্রুপপর্ব পেরিয়েছিল। অন্যদিকে, গ্রুপপর্বের তিনটি ম্যাচেই হেরে যাওয়ায় ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপে কানাডার প্রত্যাবর্তন হলো একদমই সাদামাটা। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে আগের ম্যাচে ডেভিসের করা গোলটিই কাতার বিশ্বকাপে কানাডার একমাত্র অর্জন, কারণ এটিই যে বিশ্বকাপে তাদের প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র গোল।