আমি রমা পাল, হাওরা কদমতলা পালবারির ছেলে মিলন পালের সঙ্গে বিবাহের পর চম্পাকলি পাল হয়েসি।
পঁসিস বসর আমি এই বারিতে সকলের সঙ্গে থাকি। আমার ভোটার আইডি কার্ড, আধার কার্ড… সবেতেই নাম রমা পাল।
আমার মা আমার এই নাম দিয়েসেন। এই বারিতেই আমার আর মলয়ের বিয়ে হয়েসে। সামাজিক সব আচার-বিচার মেনেই গায়ে হলুদ, মালাবদল, সিঁদুরদান, বৌভাত, ফুলসয্যা, সবই হয়েসে। আমার সারি, সাঁখা, সিঁদুর পরতে খুব ভাল লাগে। বারিতে ও অফিসে সবসময় আমি সারি পরি।
এই পঁসিস বসর আমি আমার জন্মভুমি ইটালিতে যাইনি। যেতে আমার মনও করে না। ওখানে বাবা আসে। ভাই আসে, আর আমার, মা, আমার সোটবেলাতেই বাবাকে ডিভোর্স করে অন্য লোকের সঙ্গে থাকে। বাবার সঙ্গে কথা হয়…
আমি লন্ডনে পরাসুনা করতাম সেখানেই মলয়ের সঙ্গে পরিচয়। চার বসর আমাদের কোর্টসিপ চলেসিল। তখন থেকেই আমি বাংলাকে। বাংলার কালচারকে ভালবাসি। লণ্ডনের বাঙালিদের কাসেই আমি সারি পরা সিখেছি। ওদের নিয়ম-কানুন সব সিখেছি আর মলয়ের কাসে বাংলা সিখেসি।
এখানের নিয়ম মেনে বিয়ের আগে কেউ কাউকে টাচ করিনি। মলয়ের সঙ্গে প্রথম একদিন সারি পরে দেখা করতে গিয়ে ওকে অবাক করে দিয়েসিলাম। সেই থেকেই আমি সারিই পরি।
যেদিন আমি হাওরায় নেমে মা-বাবাকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করি, মা আমাকে বুকে জাপটে ধরেসিল, আনন্দে আমার চোখে জল চলে এসেছিল। প্রথম বুসলাম মায়ের আদর কি?
পনেরো দিন পরে আমাকে বধুবেসে বরণ করে এই লোহা বাঁধানো চুড়ি পরিয়ে বলেসিল, ‘আজ থেকে তুমি আমার ঘরের লক্ষী।’
প্রথমদিকে আমাকে ঠাকুরঘরে ঢুকতে দিত না। রান্না সব মায়ের কাসেই সিখেছি। এখনো অফিস থেকে ফিরে নিজ হাতে সবাইকে রান্না করে পরিবেশন করে খাওয়াই।
একমাস ধরে আমার নিয়ম মেনে চলা দেখে ঠাকুরঘরে নিজের সাথে করে নিয়ে ঠাকুর পুজার নিয়ম সব দেখিয়ে দিল। সেই থেকে আমিই সকালে পুজা করে অফিস যাই।
আমার সেলে অম্লান পাল, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে এম এস করসে, ননদ আমার খুব বন্ধু।
সবাই বলে ভুসর্গ নাকি কাস্মীর , আমার কাছে এই বারিটাই আমার ভুসর্গ। এখানেই সারা জিবন কাটিয়ে দিতে চাই।
অম্লানের বিয়ে দিয়ে আমার মার মত সাসুড়ি হতে চাই…
বিঃদ্রঃ একজন বিদেশিনীর পুরোপুরি বাঙালী গৃহবধূ হয়ে ওঠার কাহিনী। তার বয়ানগুলি (বিদেশিনী কন্ঠে বাংলা উচ্চারণ অপরিবর্তিত রেখেই) এক সাক্ষাৎকার থেকেই সংগৃহীত।