আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে কাতার বিশ্বকাপের প্রথম অঘটন ঘটায় সৌদি আরব। তার পরদিনই দ্বিতীয় অঘটনের জন্ম দিল জাপান। চার বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে হারিয়ে দিয়েছে তারা ২-১ গোলে।
২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে মাঠে নেম গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় জার্মানরা। বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের পর ২০২০ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে তারা শেষ ১৬ পার করতে পারেনি। সেই আক্ষেপ ঘোচানোর মিশন নিয়ে নতুনরূপে জাপানের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল হ্যান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা।
জার্মানি প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে থাকলেও বিরতির পর খেই হারিয়ে ফেলে। দ্বিতীয়ার্ধের শেষদিকে জাপানের প্রবল আক্রমণে জোড়া গোল খেয়ে বসে তারা । আর তাতেই হার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করতে হলো চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের।
বিশ্বকাপের মঞ্চে এবারই প্রথমবারের মতো দেখা হয় দুই দলের। প্রথম দেখাতেই বাজিমাত করল জাপান।
বিশ্বকাপের আগে খুব একটা সন্তোষজনক পারফরম্যান্স ছিল না জার্মানির। আর বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেও দেখা গেল তাদের ছন্নছাড়া খেলা।
অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের মিশেলে তৈরি জার্মানি ম্যাচের শুরু থেকেই নিজেদের সেরা ছন্দে ফেরার প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল। কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থতা সঙ্গী হচ্ছিল তাদের। জাপানের ওপর শুরু থেকেই বেশ চড়াও হলেও ঠিক ফিনিশিংটা আসছিল না থমাস মুলারদের পক্ষ থেকে।
তবে আক্রমণের জবাবটা বেশ ভালোভাবেই দিচ্ছিল জাপান। বেশ কয়েকবার সম্ভাবনা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত হতাশ হচ্ছিল তারাও। জার্মান ডিফেন্ডার আর ম্যানুয়েল নয়্যারের বাধায় প্রতিবারই ভেস্তে যাচ্ছিল তাদের প্রচেষ্টা।
ম্যাচের ৩৩তম মিনিটে ডেডলক ভাঙেন মিডফিল্ডার ইকে গুনডোগান। জাপানের ডি বক্সে ডেভিড রম ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টি পায় জার্মানি। সফল স্পট কিকে সেখান থেকে দলকে লিড এনে দেন ইকে গুনডোগান।
তিন মিনিট বাদেই পাল্টা আক্রমণে যায় জাপান। জার্মান ডিফেন্ডার নিকো স্কোলোটারবাকের দুর্দান্ত এক ট্যাকেল সামলে বল ডি বক্সের দিকে এগিয়ে দেন জাপানি মিডফিল্ডার তাকেফুসা কুবো। কিন্তু সেখানে থাকা ডেইজেন মিডার কাছে বল পৌঁছানোর আগেই সেটি ক্লিয়ার করে দিয়ে বিপর্যয় এড়ান গুনডোগান।
৪২তম মিনিটে থমাস মুলারের ডি বক্সের বাইরে থেকে নেয়া জোরাল শট গোলবারের উপর দিয়ে গেলে লিড নেয়ার সুযোগ হাতছাড়া হয় জার্মানির।
প্রথমার্ধের যোগ করা অতিরিক্ত সময়ের চতুর্থ মিনিটে লিড নেয় ইউরোপের পরাশক্তিরা। ডানদিক থেকে মুলারের ক্রস নিচ দিয়ে লো শট নেন জসুয়া কিমিচ। জাপানি গোলরক্ষক শুশি গোন্ডা সে যাত্রায় শট ঠেকিয়ে দিলেপ ফিরতি শটে জালের ঠিকানা খুঁজে নেন কেই হাভার্টজ।
কিন্তু ভাগ্য বাধ সাধে সেখানে। প্রাথমিক অবস্থায় গোল নিশ্চিত করলেও ভিএআর দেখে সেটি বাতিলের ঘোষণা দেন রেফারি। ফলে ১ গোলের লিড নিয়েই বিরতিতে যেতে হয় জার্মানিকে।
দ্বিতীয়ার্ধে যেন অন্যরূপে আগমন ঘটে জাপানের। শুরু থেকেই চাপ বাড়াতে থাকে প্রতিপক্ষের ওপর। ৫০-৬৫ মিনিটের ভেতর বেশ কয়েকবার সম্ভাবনা জাগালেও শেষ পর্যন্ত গোল বের করে আনতে ব্যর্থ হয় তারা।
তবে প্রতি আক্রমণ দেখা যায় জার্মান শিবির থেকেও। কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট শট আর জাপানের গোলরক্ষকের কল্যাণে গোলের দেখা মেলেনি তাদের।
৭১ মিনিটের মাথায় আও তানাকাকে উঠিয়ে নিয়ে মাঠে নামানো হয় রিতসু দোয়ানকে। মাঠে নামার চার মিনিটের মাথায় দলকে সমতায় ফেরান জাপানি এ মিডফিল্ডার।
৯ মিনিট পর পাল্টা আক্রমণে গোলের আশা জাগায় জার্মানি। কিমিচের নেয়া কর্নার শট নো ম্যানস ল্যান্ডে গিয়ে পড়ে। সেখান থেকে বল পেয়ে গোলমুখে রুডিগার শট নিলেও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় সেটি।
ম্যাচের ৮২তম মিনিটে পাল্টা আক্রমণে যায় জাপান। আর সেই আক্রমণ থেকে ৮৩ মিনিটের সময় জার্মান সমর্থকদের নিশ্চুপ করে দিয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন তাকুমো আসানো। আর তাতেই এক প্রকার পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যায় চারবারের বিশ্বকাপজয়ীদের।
গোল হজম করেই খেই হারিয়ে ফেলে জার্মানি। ম্যাচের বাকিটা সময় তাদের আর সমতায় ফেরা বা লিড নেয়া সম্ভব হয়নি। যে কারণে কাতার বিশ্বকাপের দ্বিতীয় অঘটনের জন্ম দিয়ে ২-১ ব্যবধানে হারকে সঙ্গী করেই মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাদের।