চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করার পর তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো। কিয়েভকে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র দেয় তারা।
তবে ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দেওয়ার পর এখন পশ্চিমা দেশগুলোর অস্ত্রের মজুদ আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। ফ্রান্সের প্রভাবশালী সংবাদমাদ্যম ল্য মোঁদ মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
পত্রিকাটি অবশ্য জানিয়েছে, ইউক্রেনে যেসব অস্ত্র সহায়তা পাঠানো হয়েছে তার দুই-তৃতীয়াংশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আর বাকিগুলো গেছে ইউরোপের দেশগুলো থেকে।
এ ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, ‘রাশিয়ার আক্রমণ ঠেকাতে, পশ্চিমারা তাদের অস্ত্রের ভাণ্ডার ইউক্রেনের জন্য খুলে দেয়। এটি সত্যি যে, ইউক্রেনে পাঠানো সহায়তার দুই-তৃতীয়াংশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সহায়তার মধ্যে রয়েছে ১০ লাখ গোলাবারুদ, এক লাখ ট্যাংক বিধ্বংসী অস্ত্র ও মনুষ্যবাহী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র।’
‘এরফলে, পশ্চিমাদের অস্ত্র, সঙ্গে আটলান্টিক মহাসাগর অঞ্চলীয় দেশগুলোর অস্ত্র আশঙ্কাজনক পর্যায়ে হ্রাস পেয়েছে।’
পত্রিকাটি বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অস্ত্রের মজুদ এতটাই কমে গেছে যে, সেসব অস্ত্রের সামরিক প্রশিক্ষণও এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ১৫০ মিলিমিটারের এক লাখ গোলা কিনতে চেয়েছিল ওয়াশিংটন। কিন্তু এগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার হবে তাই দক্ষিণ কোরিয়া এখনো গোলা দিতে রাজি হচ্ছে না।
উৎপাদনের তুলনায় বেশি অস্ত্র পাঠিয়ে দেওয়াতেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ইউরোপের দেশগুলোর অস্ত্র মজুদের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া এবং দুর্বল দেশ আফগানিস্তান, সোমালিয়া, লিবিয়া এবং সিরিয়ায় অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টিও তাদের মজুদ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেছে ল্য মোঁদ।
আরেকটি কারণ হলো পশ্চিমারা অত্যাধুনিক অস্ত্রের দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছে। যদিও নতুন এসব অস্ত্র অনেক বেশি কার্যকরী। কিন্তু এগুলো বেশ দামীও।
এ ব্যাপারে স্ট্র্যাটেজিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (এফআরএস) গবেষক থিবো ফইলেট বলেছেন, ‘পশ্চিমা দেশগুলোর সেনাবাহিনীর ধারণা ছিল উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্র তাদের চাহিদা পূরণ করতে পারবে। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধে গাইডেড অস্ত্র (বিদ্যুৎশক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত) অস্ত্র বেশি কার্যকরী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। এই যুদ্ধে দেখা গেছে কামানের মতো গতানুগতিক অস্ত্র বড় ভূমিকা রাখতে পারে।’
ফরাসি সংবাদমাধ্যম ল্য মোঁদের কাছে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, অস্ত্রের মজুদ দ্রুত সময়ের মধ্যে আগের জায়গায় ফেরানোর মতো সক্ষমতা পশ্চিমা অস্ত্র উৎপাদনকারীদের কাছে নেই।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের লকহিড মার্টিন এবং রায়থনের মতো কোম্পানির প্রতি বছর ট্যাংক বিধ্বংসী জাভেলিন কামানের ২ হাজার ১০০টি ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনের সক্ষমতা আছে। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইউক্রেনকে এখন পর্যন্ত জাভেলিনের ৮ হাজার ৫০০ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
অন্যদিকে ফ্রান্স ইউক্রেনে পাঠানো তাদের স্বয়ংক্রিয় সিজার হাউইটজার নিয়ে চিন্তিত। তারা তাদের এ অস্ত্রের চার ভাগ এক ভাগ ইউক্রেনকে দিয়েছে। ফ্রান্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অস্ত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নেক্সটারের কাছে আরও ১৮টি সিজার হাউইটজারের অর্ডার দিয়েছে। কিন্ত এগুলো পেতে দীর্ঘ সময় লাগবে।
সূত্র: তাস নিউজ (রাশিয়ার বার্তাসংস্থা)