গত বছর অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর কমপক্ষে ১৬ হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। এইসব বন্দিদের মধ্যে দেশটির জাতীয় দিবস উপলক্ষে প্রায় ৬ হাজার জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বিভিন্ন দেশের নাগরিকেরাও আছেন। আছেন ব্রিটেনের সাবেক একজন রাষ্ট্রদূত, জাপানের একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা, মিয়ানমারের বেসামরিক নেত্রী অং সান সুচির অস্ট্রেলিয়ান উপদেষ্টা, বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী।
মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন শন টার্নেল; তিনি অস্ট্রেলিয়ান অর্থনীতিবিদ এবং অং সান সুচির অস্ট্রেলিয়ান উপদেষ্টা। প্রায় দুই বছর মিয়ানমারের একটি কারাগারে বন্দি ছিলেন তিনি।
গত সপ্তাহে মুক্তি পাওয়ার পর কারাগারে থাকাবস্থায় তিনি মিয়ানমারের জান্তা সরকারের নির্যাতনের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তার সহবন্দিদের করা নানা ধরনের নির্যাতনের রোমহর্ষক বর্ণনা উঠে এসেছে তার কথায়।
মুক্তি পাওয়ার পর গত শুক্রবার সিডনিতে ফিরেছেন তিনি। পরে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমোধ্যমের কাছে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।
শন টার্নেল সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তাকে প্রথমে ইয়াঙ্গুনের ইনসেইন কারাগারের একটি ছোট্ট ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল। ঘরটিতে একটি লোহার চেয়ার ছিল। ওই চেয়ারটির সঙ্গে তার পায়ের শিকল বেঁধে রাখা হতো। এভাবে আটকে রেখে প্রায় দুইমাস তাকে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়েছিল।
কারা কর্তৃপক্ষ তাকে সুচির হয়ে ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের সঙ্গে কাজ করা এবং বন্দুক চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিল। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি পাঁচবার করোনাভাইরাস পজিটিভ হয়েছিলেন; এ সময় তাকে একদম লোক যোগাযোগহীন থাকতে হয়েছে।
তিনি বলেছেন, বন্দিত্বের প্রথম দিনগুলোতে তিনি সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে জেলখানাতেও বন্দিদের প্রতিবাদের ভাষা শুনেছেন। বন্দিরা থালা বাজিয়ে গভীর রাতে প্রতিবাদে সামিল হতেন। প্রতিবাদ শুরু হলে পরে তিনি বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ শুনতে পেতেন। বুঝতে পেতেন তার সহবন্দিদের নির্যাতন করা হচ্ছে।
“আমি ভেবেছিলাম, তারা নিশ্চয়ই আমার সঙ্গে এমনটা করবে না? তারপর কিছুক্ষণ পর, আমি ভাবতে শুরু করলাম, হয়তো তারা করবে। আমার মনে হয় তারা আমাকে শোনাতেই আমার পাশের বন্দিদের নির্যাতন করতো।”
শন টার্নেলকে খাবার খাওয়ার জন্য একটি নোংরা বালতি দেওয়া হয়েছিল। তিনি ভেবেছিলেন তাকে পরিচ্ছন্ন কোনো খাবার পাত্র দেওয়া হবে। তিনি ওই বালতিতে করে ৬৫০ দিন খাবার খেয়েছেন।
এরপর তাকে নাইপিডো ডিটেনশন সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেও একই রকম পরিস্থিতি।
শন জানান, কারা কর্তৃপক্ষ তাকে মারধর করেনি, তবে তারা তাকে ধাক্কা দিয়েছে এবং গালিগালাজ করেছে। নাইপিডোতে নেওয়ার পর দিনে প্রায় ২০ ঘণ্টা বন্দি অবস্থায় থাকতে বাধ্য করা হয়েছিল। বর্ষাকালে ছাদ ফুটো হয়ে ঘরে বৃষ্টির পানি ঢুকতো। এ সময় তাকে সারারাত জেগে মেঝের ওপর বসে থাকতে হয়েছিল। বৃষ্টির পানিতে যখন ঘর ভেসে যেতো তখন তিনি জামাকাপড় দিয়ে সেই পানি পরিষ্কার করার চেষ্টা করতেন।
জেলে থাকা অবস্থায় পরিবারের সাপোর্টের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, আমার স্ত্রী হা ভু অস্ট্রেলিয়ার ম্যাককুয়ারি ইউনিভার্সিটির একজন অর্থনীতিবিদ। বন্দি থাকাবস্থায় তার সঙ্গে ফোনে চ্যাটের মাধ্যমে যোগাযোগ করতাম। সে আমাকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করেছে। অস্ট্রেলিয়ান দূতাবাসের মাধ্যমে নিয়মিত বই, কুকিজ এবং কেক পাঠিয়েছে।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট লঙ্ঘনের দায়ে অস্ট্রেলিয়ান এই অর্থনীতিবিদকে গত সেপ্টেম্বরে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তবে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন।
(সূত্র: এএফপি)