আবহমান
যখনই উল বুনি
ঘর ভুল হয়ে যায়।
দুটো কাঠি বলাবলি করে জন্মের-মৃত্যুর কথা,
শোনিত স্রোতের মতো লাল উলের বল গড়িয়ে যায় খাটের তলায়
উল,নাকি খুকির ফিতে
কিম্বা মায়ের রক্তশ্রাব,
বুকের কাছে একটা দুটো ঘর পাল্টে নিলে নকশা বদল;
হ্যারিকেন আলোর মতো আবছা আদর লেগে আছে চাদরে।
দুটো কাঠি কী আলাপ করে অন্ধকারে!
ভাগ
খেজুর গাছ বেয়ে রস নামতে শুরু হতে
ভাগ হলো একটা সংসার,
এক ভাই ভাবল তার একটা পাঁজর ভাঙল,
বসত-বাসন কে কোনটা নেবে ভাবতে ভাবতে বোন পর হলো,
পুকুরে এখনও ভাসছে তার লাল ফিতে,মেলা থেকে কেনা চুড়ি,
কে কোন ঘরে ঠাঁই নেবে হিসেব করতে গিয়ে মা ফিরে গেল জলে, বাবা আকাশে,
ছেলেটা মাটিতে দাগ কাটে একা,
ওর খুড়তুতো দিদি বসে থাকে ঘাটে;
মাঝ বরাবর পড়ে আছে একটা ঘুড়ি আর লাটাই।
কে কোনটা নেবে?
অপেক্ষা
অপেক্ষা করি সুসময়ের, আর
সুসম্পর্কের দিনের।
এভাবে অপেক্ষা করতে করতে
চারাগাছ হয় মহিরূহ
তিল থেকে তাল
সংযম খসে পড়ে নদীতে
পিছিয়ে পড়ে বাড়ি ঘর পাড়া
মুখ থুবড়ে পড়ে চাঁদ রাতের পথে।মরে
অপেক্ষা শেষ হয় না
আশাজাগানিয়া রাত শেষ হলে আসবে
ধূসর দিন।
অপেক্ষারই অন্য নাম জীবন।
ছাতিম
আমার একাকীত্বর পাশে তোমার অন্ধত্ব বেশ মানানসই এখন।
দুজনেই হাতড়াতে থাকি অল্প কিছু চাল-ডাল
বেঁচে থাকার উপায়।
কখনও সখনও ছোঁয়াছুঁয়ি,এঁটোকাঁটা হয়ে যায়।
তখন আমি কানা ভিখারি আর তুমি ছাতিম গাছ।
রাতের আকাশে ধুলো জমে
ছাতিম গাছের ফুল
ঝরে ঝরে পড়ে।
আয়নার লাল টিপ রূপকথা বলে। রোজ।
কুসুম
অন্ধকারের পাশে এখনও কুসুম জেগে আছে।
ওরা জানে না কোথায় যাবে,
ছেঁড়া ফাটা লাশের ওপর, নাকি প্রথম সঙ্গম শয্যায়।
আলোর পাশে এখনও কিছু নারী জেগে উঠতে চাইছে
জন্ম নিচ্ছে কারা,
মানুষ না পশু!
মাতৃশূন্য অভাগা এখন দেশ
জলসত্র
সমস্ত বৃষ্টি এখন উড়ো খই হয়ে পথের পাঁচালী,
জলরাস্তায় সংসার হাবুডুবু
ডুবছি,খালি ডুবছি আমি
যে পথ দিয়ে হেঁটে গেলো বিনুনি বাঁধা মেয়েটি ওর বাবার হাত ধরে,
সেখানে ছড়িয়ে আছে চাপ চাপ রক্ত
উঠোন থেকে জলধোয়া ফুলেরা ভেসে যাচ্ছে পরপার
আর ওর পিছু পিছু কাগজের নৌকা
চলে যাচ্ছে দূর আতান্তরে।
সারাদিন পরে সম্পর্ক এসে দাঁড়াল সাঁকোর ওপর,
ওরা জঙ্গলে ফেলে রাখছে এখন স্বপ্নের বীজ,
তার থেকে ঠিক দশ পা দুরে দাড়িয়ে আছে ভাঙা স্কুলবাড়ি।
আপাতত প্রেম আশ্রয় নিক ত্রাণ শিবিরে।
আপাতত যা হয় হোক শুধু তোমাকে চাই।
ডুবন্ত সূর্যকে আড়াল করে দুরে
দাঁড়িয়ে আছে তিনটি বালক
ওদের মা ভাবছে সরকারি বাঁধ হয়ত টেনে আনবেই সংসার আবার।