নাস্তিক Atheist (এ্যাথিস্ট)/ ‘ملحد’ (মিলহিদ)
এটি শ্বরবিজ্ঞানের বৈক্তিক-বৈশিষ্ট্য সারণির ‘অবিশ্বাসী’ পরিবারের অন্যতম একটি ‘রূপক পরিভাষা’। এর মূলক ‘অবিশ্বাসী’ এবং ছদ্মনাম পরিভাষা ‘যবন’।
নাস্তি (রূপ)বি সত্তহীনতা, অনস্তিত্ব ক্রি নেই, নাই।
নাস্তিক (রূপ)বিণ অবিশ্বাসী, আচারবিরোধী বিপ আস্তিক (আল) সাম্প্রদায়িক সংস্কারাদির প্রতি অবিশ্বাসী ব্যক্তি (প্র) সৃষ্টিকর্তা (কাঁই) পালনকর্তা (সাঁই) ও পুনর্জন্মে অবিশ্বাসী, পৌরাণিক কাহিনী বিশ্বাস করে না এরূপ, Atheist, ‘ملحد’ (মিলহিদ) (আবি) মতবাদদ্বেষী, পাপিষ্ঠ, দাহরিয়া (ﺪﻫﺭﻴﺎ) (ইদৈ) unfaithful (আদৈ) মুলহিদ (আ.ﻤﻟﺤﺩ), কাফির (আ.ﻜﺎﻔﺮ) (দেপ্র) এটি শ্বরবিজ্ঞানের বৈক্তিক-বৈশিষ্ট্য সারণির ‘অবিশ্বাসী’ পরিবারের ‘রূপক পরিভাষা’ ও শ্বরবিজ্ঞানের একটি প্রতীতি বিশেষ (সংজ্ঞা) ১ তথাকথিত শাস্ত্রাদি নির্ভর ও অন্ধবিশ্বাসপ্রসূত নিরাকার সাম্প্রদায়িক উপাস্য কিম্বা প্রতীতিবাদের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপনকারীকে অবিশ্বাসী বা রূপকার্থে নাস্তিক বলা হয় ২ সাম্প্রদায়িক কল্পকাহিনী ও অলীক গল্পকাহিনী অগ্রাহ্যকারীকে অবিশ্বাসী বা নাস্তিক বলা হয় (ছপ) যবন (রূ) নাস্তিক (দেত) অবিশ্বাসী।
নাস্তিকের সংজ্ঞা
তথাকথিত শাস্ত্রাদিনির্ভর ও অন্ধবিশ্বাসপ্রসূত নিরাকার সাম্প্রদায়িক উপাস্য কিংবা প্রতীতিবাদের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপনকারীকে অবিশ্বাসী বা রূপকার্থে নাস্তিক বলে।
নাস্তিকের আধ্যাত্মিক সংজ্ঞা
সাম্প্রদায়িক কল্পকাহিনী ও অলীক গল্পকাহিনী অগ্রাহ্যকারীকে অবিশ্বাসী বা নাস্তিক বলে।
নাস্তিকের প্রকারভেদ
শ্বরবিজ্ঞানের নাস্তিক দুই প্রকার। ১.উপমান নাস্তিক ও ২.উপমিত নাস্তিক।
১. উপমান নাস্তিক (Analogical Atheist)
সাধারণত; যুক্তি, দর্শন ও প্রমাণ থাকার পরও কোনকিছু বিশ্বাস করতে চায় না এরূপ ব্যক্তিকে অবিশ্বাসী বা উপমান নাস্তিক বলে।
২. উপমিত নাস্তিক (Compared Atheist)
দৈবিকা, জ্যোতিকা ও প্রতীতিগণের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপনকারীকে অবিশ্বাসী বা উপমিত নাস্তিক বলে।
নাস্তিকের পরিচয়
এটি শ্বরবিজ্ঞানের বৈক্তিক-বৈশিষ্ট্য সারণির ‘অবিশ্বাসী’ পরিবারের অধীন একটি ‘রূপক পরিভাষা’ বিশেষ। তথাকথিত শাস্ত্রাদি নির্ভর ও অন্ধবিশ্বাসপ্রসূত সাম্প্রদায়িক নিরাকার উপাস্য কিম্বা প্রতীতিমতবাদ অবিশ্বাসী এবং বস্তুবাদে বিশ্বাসীদেরকে নাস্তিক বলা হয়। সন্দেহ হতেই অবিশ্বাসের সৃষ্টি হয়। অবিশ্বাসকারীকেই নাস্তিক বলা হয়। কাউকে অধিক বিশ্বাস করাও ভালো নয়। আবার কাউকে অধিক অবিশ্বাস করাও উচিত নয়। যাচাইবাছাই বা প্রমাণ সাপেক্ষে সব কিছুই বিশ্বাস করা উত্তম। তবে যে কোনো বিচারকমণ্ডলীর দ্বারা কোনো বিষয় প্রমাণিত হলে, তা বিশ্বাস করায় কোনো অসুবিধা নেই।
যদিও বিশ্বাস ও বাস্তবতার মধ্যে অমিল পাওয়া যায়। কোনো ব্যক্তির মনে অবিশ্বাসের পরিমাণ অধিক হলে তাকে মাঝে মাঝে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। অবিশ্বাস হতেই ঘরের তালা আবিষ্কার হয়েছে বলে অনেকেই ধারনা করে থাকে। আমাদের সমাজে সব সময় প্রায় পাঁচ প্রকার গল্পকাহিনী শুনতে পাওয়া যায়। যেমন- ১.দার্শনিক কাহিনী ২.বৈজ্ঞানিক কাহিনী ৩.রাজনৈতিক কাহিনী ৪. সাম্প্রদায়িক কাহিনী ও ৫.পারম্পরিক কাহিনী।
এদের মধ্যে কেবল সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক পৌরাণিক কাহিনীর ক্ষেত্রে আমাদের আলোচ্য নাস্তিক পরিভাষাটি প্রযোজ্য। এছাড়াও; অন্যান্য ক্ষেত্রে বিশ্বাস বা অবিশ্বাস কিম্বা অবিশ্বাসী বা নাস্তিক পরিভাষাটি নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা দেখতে পাওয়া যায় না। বর্তমানে সারাবিশ্বে অসংখ্য সাম্প্রদায়িক মতবাদ থাকলেও কেবল ইসলামী মতবাদেই অত্র পরিভাষাটির অধিক ব্যবহার ও অধিক আলোচনা লক্ষ্য করা যায। সাম্প্রদায়িক বিধিমালা অনুসারে সাম্প্রদায়িক বিষয়বস্তু অস্বীকারকারীরা বিপথগামী এবং এ অবিশ্বাসের ফলে অবশ্য অবশ্যই তারা নরকবাসী হবে।
জ্ঞানের আউল স্তরের মন্ত্রী ও নামী সবাই নাস্তিক। কারণ তারা একে অন্যের সাম্প্রদায়িক মতবাদ ও সাম্প্রদায়িক উপাসনাদি সম্পূর্ণই অস্বীকার ও অবিশ্বাস করে থাকে। হিন্দুরা তাদের সাম্প্রদায়িক মতবাদ এবং সাম্প্রদায়িক উপাসনাদি অস্বীকারকারীদের ‘যবন’ বলে থাকে।
অন্যদিকে; মুসলমানরা তাদের সাম্প্রদায়িক মতবাদ ও সাম্প্রদায়িক উপাসানাদি অস্বীকারকারী বা অবিশ্বাসকারীকে ‘কাফির (ﻜﺎﻔﺭ)’ বা মোয়াহিদ কাফির (ﻤﻮﺤﺪ ﻛﺎﻔﺭ) বলে থাকে। এ সূত্র হতে মানুষ মাত্রই হয়তো ‘যবন’ নয়তো ‘কাফির (ﻜﺎﻔﺭ)’। কিন্তু বিষয়টি মূলতঃ সেরূপ নয়। যার যার সাম্প্রদায়িক মতবাদ অনুযায়ী মানুষ মাত্রই বিশ্বাসী। কারণ প্রত্যেকেই কোনো না কোনো সাম্প্রদায়িক মতবাদ বিশ্বাস করে। এজন্য; বলা যায় স্বস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে সবাই বিশ্বাসী। অর্থাৎ নাস্তিক বলে কেউ নেই।
যবন (রূপ)বি অহিন্দু, বিধর্মী, বিদেশী, প্রাচীন গ্রিক জাতি, আইওনিয়াবাসী গ্রিক (প্র) প্রচলিত হিন্দু সাম্প্রদায়িক মতবাদ মান্য করে না এরূপ ব্যক্তি স্ত্রী যবনী।
কাফির [ﻜﺎﻔﺭ] বিণ যবন, কৃতঘ্ন, অকৃতজ্ঞ, তৃণ, গুপ্ত, সমুদ্র, লৌহবস্ত্র, সত্য অস্বীকারকারী, অন্ধকার রাত্রি, বিশাল উপত্যকা, ঘনীভূত মেঘরাশি, খেজুরের কলির আবরণ, সমতল ভূমি {আ}
মোয়াহিদ [ﻤﻮﺤﺪ] বিণ একেশ্বরবাদী, কেবল স্রষ্টার একত্ববাদে বিশ্বাসী {আ}
মোয়াহিদ কাফির [ﻤﻮﺤﺪ ﻛﺎﻔﺭ] বি স্রষ্টার একত্ববাদে বিশ্বাসী যবন (প্র) যে ব্যক্তি কেবল সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করে কিন্তু অবতার বা অবতারবাদ কিংবা ঐশিবাদ বিশ্বাস করে না {আ.মোয়াহিদ.ﻤﻮﺤﺪ +আ.কাফির.ﻜﺎﻔﺭ}
এবার প্রশ্ন হতে পারে; যারা বিশ্বের কোনো সাম্প্রদায়িক মতবাদই বিশ্বাস করে না তাদের কী বলা হয়? এরূপ প্রশ্নের উত্তর হলো- সাধারণ দৃষ্টিতে মতবাদবিমুখ ব্যক্তিকে অবিশ্বাসী বা নাস্তিক বলা হয়। কিন্তু আমরা বলবো কেবল সাম্প্রদায়িক মতবাদ বা সাম্প্রদায়িক উপাসনাদি অস্বীকারকারী বা অবিশ্বাসকারীকে নাস্তিক বলা উচিত নয়। কারণ নাস্তিকরা কখনই সাম্প্রদায়িক মতবাদ বা সাম্প্রদায়িক উপাসনাদির পুরোটাই অস্বীকার করে না। তারা কেবল সাম্প্রদায়িক মতবাদের সে অংশটুকুই অস্বীকার করে- যেটুকু অত্যন্ত গোজামিল, অসংলগ্ন ও রূপকথায় একেবারে ভরপুর। কিন্ত নাস্তিকই যার যার স্রষ্টাকে কখনই অস্বীকার করে না।
নাস্তিকদের ব্যাপারে এতটুকু বলা যায় যে- সৃষ্টিকর্তারূপে কেউ জ্ঞানকে, কেউ শক্তিকে আবার কেউবা প্রকৃতিকে স্বীকার করে থাকে। যেমন কেউ বলে- জ্ঞানই সব কিছু সৃষ্টি করেছে ও করছে। এজন্য; সৃষ্টিকর্তা বলে যদি কেউ থেকে থাকেন তবে তিনিই হলেন ‘জ্ঞান’। আবার কেউ বলে- শক্তিই সব কিছু সৃষ্টি করেছে ও করছে। এজন্য; সৃষ্টিকর্তা বলে যদি কেউ থেকে থাকেন তবে তিনিই হলেন ‘শক্তি’। আবার কেউ বলে- প্রকৃতিই সবকিছু সৃষ্টি করেছে ও করছে। এজন্য; সৃষ্টিকর্তা বলে যদি কেউ থেকে থাকেন তবে তিনিই হলেন ‘প্রকৃতি’। নাস্তিকরা যে যা-ই বলুক না কেন সবাই কোনো না কোনো পরিভাষার দ্বারা সৃষ্টিকর্তাকে অবশ্যই স্বীকার করছে। আবার শ্বরবিজ্ঞানীগণ বলেন যে- প্রকৃতি সৃষ্টিকারী স্রষ্টা ও জীব সৃষ্টিকারী স্রষ্টা এক নয়।
এজন্য; প্রকৃতির স্রষ্টা ও সাম্প্রদায়িক স্রষ্টা এক কিন্তু শ্বরবিজ্ঞানের স্রষ্টা এবং প্রকৃতির স্রষ্টা এক নয়। প্রকৃতির স্রষ্টাই বিজ্ঞান, দর্শন ও সাম্প্রদায়িক স্রষ্টা হতে পারে কিন্তু পারম্পরিক দর্শন ও শ্বরবিজ্ঞানের স্রষ্টা সম্পূর্ণই ভিন্ন। এরূপ চিরদ্বন্দ্ব নিরসনের জন্যই বৈষয়িক স্রষ্টা ও পারম্পরিক স্রষ্টারূপে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন স্রষ্টার ভিন্ন ভিন্ন অস্তিত্বের বর্ণনা করা হয়ে থাকে। বিজ্ঞান, দর্শন, জ্যোতির্বিদ্যা ও সাম্প্রদায়িক মতবাদের নিরাকার স্রষ্টাকে বৈষয়িক স্রষ্টা বলা হয় এবং তার অস্তিত্ব সম্পর্কে বলা হয়, হয়তবা তা হবে ‘জ্ঞান’ কিম্বা তা হবে ‘শক্তি’ অথবা তা হবে ‘প্রকৃতি’। কিন্তু শ্বরবিজ্ঞানের স্রষ্টাকে পারম্পরিক স্রষ্টা বলা হয় এবং তার অস্তিত্ব সম্পর্কে বলা হয়, হয়তবা তা হবে ‘কাঁই’ নয়তবা তা হবে ‘শুক্র’।
একদল অন্যদলের স্রষ্টাকে কখনই বিশ্বাস করে না। অর্থাৎ সাম্প্রদায়িকরা বিজ্ঞানীদের স্রষ্টাকে এবং বিজ্ঞানীরা সাম্প্রদায়িকদের স্রষ্টাকে কখনই বিশ্বাস করে না। তাহলে বিজ্ঞানীদের নিকট সাম্প্রদায়িক মতবাদ অনুসারীরা নাস্তিক এবং সাম্প্রদায়িক মতবাদ অনুসারীদের নিকট বিজ্ঞানীরা নাস্তিক। তেমন হিন্দুদের নিকট মুসলমানরা নাস্তিক এবং মুসলমানদের নিকট হিন্দুরা নাস্তিক।
আবার যার যার স্থানে অবস্থান করে সাম্প্রদায়িক মতবাদ অনুসারী, পারম্পরিক, জ্যোতিষী, দার্শনিক ও বিজ্ঞানীরা যার যার স্রষ্টাকে অবশ্যই বিশ্বাস করে। এজন্য; সবাই আস্তিক। যেহেতু; ইচ্ছায় অনিচ্ছায় সবাই যার যার সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস ও মান্য করে সেহেতু পৃথিবীতে নাস্তিক বলে কেউ নেই। যার ফলে পৃথিবীতে নাস্তিক ও নাস্তিক্যবাদ বলে কিছুই নেই। মানুষ স্থূলদৃষ্টিতে একে অন্যকে নাস্তিক বলে অবুঝের মতো গালাগালি করলেও সূক্ষ্মদৃষ্টিতে সারাবিশ্বের কোথাও নাস্তিক বা নাস্তিক্যবাদের অস্তিত্ব কোনো নেই।
আবার প্রশ্ন হতে পারে আমাদের একই সমাজে বাস করে, একদল অন্যদলকে বা একজন অন্যজনকে নাস্তিক বলে গালি দেয় কেন? উত্তরে বলা যায়- স্রষ্টা কী? নাস্তিক কাকে বলে? নাস্তিক্যবাদ কাকে বলে? কোনো কোনো সত্তাকে স্রষ্টা বলে অস্বীকার করলে মানুষকে নাস্তিক বলা হয় ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞানের চরম দৈন্যতার কারণেই মানুষ একে অন্যকে নাস্তিক বলে গালি দিয়ে নিজের নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দেয়। যার মধ্যে নাস্তিকতা ও নাস্তিক্যবাদ বিরাজমান কেবল সে অন্যকে নাস্তিক বলে গালি দিতে পারে।
যুক্তিরূপে বলা যায় “পাত্রে যা থাকে ঢাললে তাই পড়ে”। তার ভিতরে নাস্তিকতা ও নাস্তিক্যবাদ আছে বলেই তা বের হচ্ছে। অন্যকে নাস্তিক বলে কটুক্তি করায় তার নিজের নাস্তিকতা প্রমাণ করে। কার্যত যার যার মনের মতো করে তার তার স্রষ্টার হাত, পা, চোখ, মুখ, কান, নাক, মন, জ্ঞান, রাগ, বিবেক-বিচার ও আসন-বসন নির্মাণ করে তা অন্যকে বিনা বিচারে গ্রহণ করতে বা মেনে নিতে বলবে, কেউ মেনে না নিলেই তাকে নাস্তিক বলবে এটা কখনই হতে পারে না। একটু ভালোভাবে লক্ষ্য করলেও দেখা যায়- কারো স্রষ্টার হাত, পা, বিবেক-বিচার ও আসন-বসন ইত্যাদি আছে।
আবার কারো স্রষ্টার এসব নেই। কারো স্রষ্টা বিয়ে করেছে সন্তানও সৃষ্টি করেছে (হিন্দুদের ব্রহ্মা)। কারো স্রষ্টা বিয়ে করেনি কিন্তু ক্ষেত্রজ সন্তান সৃষ্টি করেছে (খ্রিস্টানদের ঈসা)। আবার কারো স্রষ্টা বিয়েও করেনি সন্তানও সৃষ্টি করেনি (মুসলমানদের আল্লাহ)। কারো স্রষ্টা মারামারি করতে গিয়ে পাঁচটি মাথার মধ্যে একটি মাথা পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছে (হিন্দুদের ব্রহ্মা)। কারো স্রষ্টা নিজে মারামারি করে না বটে তাদের অবতারদের দ্বারা মারামারি করায় (মুসমানদের আল্লাহ)। কারো স্রষ্টার মাথা একটা। আবার কারো স্রষ্টার মাথা একাধিক (ব্রহ্মা)। তাহলে স্রষ্টা নির্মাণ একান্ত শৈল্পিক বিষয়। যার যার দলের রূপকার গুরু ও গোঁসাইরা ডাকার জন্য স্বস্ব স্রষ্টা নির্মাণ করে তাঁকে মনের মাধুরিতে রূপদান করেছেন। সেটা হোক সাম্প্রদায়িক স্রষ্টা বা বিজ্ঞানীদের স্রষ্টা।
কোনো বিষয়বস্তু নিয়ে কিছু বলার পূর্বে তা ভালোভাবে জানা ও বুঝা একান্ত প্রয়োজন। এবার পরিষ্কার কথা হলো শ্বরবিজ্ঞানের বিভিন্ন সূত্রাদি দ্বারা বিশ্বের সব সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক স্রষ্টা নির্মাণ করা হয়েছে। সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক মতবাদের সুমহান মনীষীরা একান্তই যার যার স্রষ্টা নির্মাণ করে মনের রঙতুলিতে স্বস্ব স্রষ্টার অবস্থান, বিদ্যমানতা, মন, জ্ঞান, শক্তি, হাত, পা, বিবেক-বিচার ও আসন-বসন ইত্যাদি নির্মাণ করেছেন।
এছাড়াও; বিশ্বের কেউই স্রষ্টার এতবড় নিকট আত্মীয় নন যে- স্রষ্টার বাড়িতে নিমন্ত্রণ পেয়ে অথবা স্রষ্টাকে নিমন্ত্রণ করে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসে স্রষ্টার সাথে সৌজন্য সাক্ষ্যাতে মিলিত হয়ে বা চা-চক্রে মিলিত হয়ে স্রষ্টার আয়তন, অবস্থান, বিদ্যমানতা, মন, জ্ঞান, শক্তি, হাত, পা, —, বিবেক, বিচার, আসন, বসন ও তার পরিবারের সদস্যাদি এমনকি স্রষ্টার আহার বিহারাদি পর্যন্ত স্বচক্ষে দেখে বর্ণনা করেছেন।
অর্থাৎ কোনো রূপকারই স্রষ্টার বাড়ির চা-চক্রের নিমন্ত্রিত অতিথি নন এবং স্রষ্টাও কোনো রূপকারের বাড়ির চা-চক্রের নিমন্ত্রিত অতিথি নন। মূল বিষয় হলো সুবিজ্ঞ রূপকাররা যার যার স্রষ্টার যতসব পৌরাণিক বর্ণনা যার যার মনের রঙতুলি দিয়ে মনের মাধুরিতে অন্যন্যরূপে অংকন করেছেন। এজন্য; একদলের স্রষ্টার বর্ণনা অন্যদলের স্রষ্টার বর্ণনার সাথে মিলে না।
এজন্য; একদলের স্রষ্টা অন্যদলের অবিশ্বাস হওয়াই স্বাভাবিক। একদলের স্রষ্টার বর্ণনার চেয়ে অন্যদলের স্রষ্টার বর্ণনা ভিন্ন ভিন্ন বা ভালো ও মন্দ হওয়াই স্বাভাবিক। সর্বশেষে বলবো আসুন আমরা আস্তিক ও নাস্তিক এরূপ অতি সাধারণ শব্দাবলী ব্যবহার করে আত্মতৃপ্তি বা কটুক্তি না করে বরং সবাই আত্মসংযম করি।
স্রষ্টা বিষয়ে একে অন্যকে গালি দেওয়া হতে বিরত থাকি। স্রষ্টা সমস্যাই সাম্প্রদায়িক মতবাদ অনুসারীদের প্রধান সমস্যা। স্রষ্টা সমস্যা সমাধান হলেই সাম্প্রদায়িক মতবাদ অনুসারীরা সাধু হয়ে যায়। স্রষ্টা সমস্যা যার সমাধান হয়নি তার সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক কোনো সমস্যাই সমাধান হয়নি। পক্ষান্তরে স্রষ্টা বা সৃষ্টিকর্তা সমস্যা যার সমাধান হয়েছে তার সাম্প্রদায়িক, পারম্পরিক, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সব সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হয়েছে।
মূলতঃ ধর্ম বস্তুবাদীদের পদার্থ বিজ্ঞানে ব্যবহৃত একটি পরিভাষা। পদার্থ বিজ্ঞানে পদার্থের বৈশিষ্ট্যকে ধর্ম বলা হয়। তাহলে বিজ্ঞানী ও দার্শনিকরা মানুষের রচিত সামাজিক মতবাদকে ধর্ম বলে গ্রহণ করবেন কেন বা স্বীকার করবেন কেন? আর পদার্থ বিজ্ঞানের ধর্ম পরিভাষাটিকে সাম্প্রদায়িক বা পারম্পরিকরা তাদের স্বস্ব নির্মিত মতবাদকে বুঝানোর জন্য গ্রহণ করলেন কেন?
এসব অনেক প্রশ্নের সমাধান করা এখনি প্রয়োজন। তা না হলে আগামীতে এটি আরও ব্যাপক সমস্যা সৃষ্টি করবে। এখন থেকেই বক্তা, আলোচক, লেখক, গবেষক, বৈখ্যিক, টৈকিক, অনুবাদক ও অভিধানবিদদের মতবাদকে মতবাদ এবং ধর্মকে ধর্মই বলতে হবে। কোনক্রমেই মতবাদকে ধর্ম এবং ধর্মকে মতবাদ বলা যাবে না। মতবাদ নিয়ে কোনক্রমে বাড়াবাড়ি করা যাবে না।
চলবে…
ধর্মবাজ বনাম মুক্তবাজ: জাত পাত যার যার; আত্মদর্শন সবার পর্ব-৫