ইরানের সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সময় নিহত এক বিক্ষোভকারীর শোকাহত পরিবারের সদস্যদের ওপর গুলি চালিয়েছে দেশটির ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড বাহিনী। পাশাপাশি হাসপাতাল থেকে ওই বিক্ষোভকারীর মরদেহও নিয়ে গেছে বিপ্লবী গার্ডের সদস্যরা। শনিবার রাতভর ইরানজুড়ে বিক্ষোভের মাঝে এই ঘটনা ঘটেছে বলে একটি মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরের মাঝের দিকে হিজাব পরার বিধান লঙ্ঘনের দায়ে মাহসা আমিনি নামের এক তরুণী ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার এবং পুলিশি জিম্মায় মারা যাওয়ার পর থেকে গত দুই মাস ধরে দেশটিতে বিক্ষোভ চলছে। ওই তরুণীর মৃত্যু ঘিরে শুরু হওয়া বিক্ষোভ ইতোমধ্যে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নিয়েছে।
এর ফলে ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর এবারই প্রথম সবচেয়ে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি নেতৃত্বাধীন দেশটির ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী। ব্যাপক দমনপীড়নের মাধ্যমে ইরানি কর্তৃপক্ষ সরকারবিরোধী এই বিক্ষোভ মোকাবিলার চেষ্টা করছে।
অসলো-ভিত্তিক ইরানি মানবাধিকার সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) বলেছে, ইরানে বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৪২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। বিক্ষোভে সহিংসতা চালানোর দায়ে অর্ধ ডজন বিক্ষোভকারীকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়েছে ইরানের আদালত। এছাড়া বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বুধবার আইএইচআর বলেছে, ইরানের ৩১টি প্রদেশের ২১টিতেই বিক্ষোভকারীদের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে সিস্তান-বেলুচিস্তানে ১২৩ জন এবং যে অঞ্চলে মাহসা আমিনির বাড়ি সেই কুর্দিস্তানে ৩২ জন মারা গেছেন। শনিবার রাতভর কুর্দিস্তানের বুকান শহরে বিক্ষোভ-সহিংসতা হয়েছে।
নরওয়ে-ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হেঙ্গাও বলেছে, গত রাতে বুকান শহরের শহীদ ঘলিপুর হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি)। এ সময় হাসপাতাল থেকে শাহরিয়ার মোহাম্মদি নামের এক বিক্ষোভকারীর মরদেহ নিয়ে গিয়ে গোপনে সমাহিত করেছে তারা।
কুর্দি-অধ্যুষিত এলাকার মানবাধিকারের বিষয়ে খোঁজ রাখা এই মানবাধিকার সংস্থা এএফপিকে বলেছে, আইআরজিসির সৈন্যরা শাহরিয়ার মোহাম্মদির পরিবারের সদস্যদের ওপর গুলি চালিয়েছে। এতে কমপক্ষে ৫ জন আহত হয়েছেন।
সূত্র: এএফপি।