বিভিন্ন দেশের কবিতার বিভিন্ন আঙ্গিক সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু কথা। আমরা ধীরে ধীরে সংক্ষিপ্ত কবিতার দিকে, এগোচ্ছি, কেননা মানুষ এখন ভীষণ ব্যস্ততার মধ্যে থাকে, বড় ধরণের কাব্য রচনা করা কিংবা পড়ার সুযোগ খুব কম, তাই দোঁহা, হাইকু, রুবাই, লতিফা, চৌপদী, পঞ্চপদী, ষষ্ঠপদী, লিমেরিক ও তানকার প্রতি পাঠকের আগ্রহ আজকাল দেখা বেশী যাচ্ছে।
।।এক।।
তানকা, হাইকু ও সেনরু:
‘তানকা’ হলো জাপানি সংক্ষিপ্ত কবিতা।
(বলা যায় তানকা হচ্ছে উত্তেজনাপূর্ণ, ঠিক যেন টি- টুয়েন্টি ম্যাচ।)
জাপানিরামনের ভাব সংক্ষেপে প্রকাশ করতেই বেশী পছন্দ করে। ‘কথা কম কাজ বেশী’- এই নীতিতেই তারা বিশ্বাসী। মানে অল্প কথায় ভাবের ব্যাপক বিস্তার ঘটাতে চায় তারা তাদের গীতি-কাব্যে।তাই জাপানকে বলা হয় ‘হ্রষতম কবিতার দেশ।’ জাপান হ্রস্বতম কবিতার দেশ, হাইকুর দেশ। অন্যদিকে আমরা জানি, উদিয়মান সূর্যের দেশ,চেরী ফুলের দেশ।
জাপানী কবিতা অন্যান্য দেশের কবিতার মতো নয়। সে দেশের কবিতা অবিমিশ্র- কাব্যিক ও অকাব্যিক কোন বিবেচনা প্রসূত নয়। কবিতার আকৃতি এখানে মূলতঃ হ্রস্বতম। এদের কবিতা চীনের কবিতার কাছে ঋণী হলেও জাতীয় মানসিকতায় পরিস্রুত। জাপানী কবিতা চীনের মতোই সংযত। ফলে তাদের কবিতায় অনেক কিছুই অনুক্ত। এক ফুলের কলির বিকাশে, সমগ্র বসন্তকে ধরার চেষ্টা। সন্ধ্যা ঝরা পাতার দৃশ্য বর্ণনায় হেমন্তকে ধরার প্রচেষ্টা।ঘাসের উপরে শিশির ফোটার দৃশ্যে সমগ্র জীবনের অনিত্যকে ধরার চেষ্টা।
জাপানে কবিতা চর্চা সমাজের সকলেই করে। কবি বলে আমাদের মতো, ওখানে কোন রকম কোন আলাদা সম্প্রদায় নেই। সকলেই মোটামুটি লিখতে পারেন। কারণ তাদের সকলেই শিক্ষিত এবং তাদের অনুভূতির প্রাধান্য ও ছন্দের সারল্যই এর মূল কারণ।
তানকার ফর্মটি (৫-৭-৫-৭-৭) মূলত ওয়াকা(waka) ফর্ম থেকে এসেছে ৷জাপানিরা গীতি-কাব্য হিসাবে তানকার ব্যবহার করতো, সেই অনুযায়ী ধ্বনিবিন্যাসই শ্রেয়। জীবনের সুখ দু:খ,আশা-আকাঙ্খা, হতাশা, প্রতিবাদ, আনন্দ, উল্লাস, নৈতিক অবক্ষয়, সবগুলিই তানকার বিষয় হতে পারে অনায়াসে। তানকায় (৫-৭-৫) -কে জাপিনিরা upper phrase (কামি নো কু)-য়ে বিষয়বস্তু। (৭-৭) -কে বলে lower phrase(শিমো নো কু)-য়ে সারমর্ম। প্রথম তিন লাইনে বা চরণে প্রকাশ পায় বিষয়বস্তু,ভাবমূর্তি,রূপ-প্রতিরূপ, প্রতিচ্ছায়া-প্রতিচ্ছবি বা কথামালা, এবং পরের দুই লাইনে প্রকাশ পায় সারমর্ম।তানকা বিষয়ের দিক থেকে জোর দেয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঋতুবৈচিত্র, জীবনের আশা নিরাশা প্রভৃতিকে।
তিন প্রজন্মের তিনটি তানকার উদাহরণ-
১).
ক্লান্তি বিহীন
গাও হে কোকিল।
এক বছরে
দুবার কখনো কি
বসন্ত আসে বলো?
-(ফুজিয়ানা নো ওকিকাজে -৯১০)
২).
বিবর্ণ ফুল
আনমন হৃদয়ে
জগৎ দেখে,
সুবিশাল আকাশে
বসন্ত আসে ছুটে।
-(রাজকুমারী শিকুশি – ১২০১)
৩).
এপ্রিল দূরে
মে মাসে বৃক্ষশাখা
ফুল শয্যায়
দিশাহারা নয়নে
অপেক্ষায় থাকে যে।
-(মায়েদা য়ুউগুরে – ১৯৫১.)
জাপানিরা গীতি-কাব্য হিসাবে ধ্বনিবিন্যাসে তানকা লিখেছেন ঠিকই, তবে বর্ণবিন্যাসেও আজকাল তানকা ও হাইকু লেখা হচ্ছে বাংলা ভাষায়। আমরা যেহেতু তানকা বা হাইকুকে গীতি-কাব্য হিসেবে ব্যবহার করি না, সেই কারণে বর্ণবিন্যাসে লেখা হাইকু বা তানকা বাংলায় চলে যায়।
হাইকু (Haiku) হল ওয়াকা ফর্মের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফর্ম। হাইকুতে (৫-৭-৫) সতেরোটি ধ্বনি আর তানকাতে (৫-৭-৫-৭-৭) একত্রিশটি ধ্বনি (সিলেবল) থাকে। এগুলি জাপানিদের আবেগপূর্ণ গীতি-কাব্য।
তিন প্রজন্মের তিনটি হাইকুর উদাহরণ-
১).
মাঝ রাত্তির
সমুদ্রে জলরাশি
উত্তাল হলো।
-(রানসেৎসু – ১৬৫৩)
২).
পাখা ওয়ালা
এক বোবা হাওয়া
অসহ্য তাপ।
-(কাকো-১৭০০)
৩).
সহসা সূর্য
অচেনা ফুলদলে
কবিতা লেখে।
-(বাশো – ১৮৯৪).
জাপানিরা ‘সেনরু’ নামে এক পংক্তির কবিতা লিখেছেন বহু। সেগুলি জনসমাজে খুবই জনপ্রিয়। মানুষের মুখে মুখে ঘোরে, আমাদের বাংলার প্রবাদের মতো। তবে বেশীর ভাগ লেখকরই পরিচয় জানা যায় নি।
এখানে পাঁচটি জাপানি সেনরু-র উদাহরণ-
১).
সোহাগ করলে মেয়েটার কথা বেড়ালের মতো হয়, না হলে মেঘ গর্জন।
– অজ্ঞাত।
২).
বাজিয়ে জাগায় বাপ ,বাঁশিটি সদ্য কেনা শিশুর জন্য।
– শোকি।
৩).
দুজনে বেরোব, স্বামী কথা বলে আয়নার সাথে।
– সেইকো।
৪).
মেয়ে দেখতে এসে, মাকে পছন্দ হল শেষে।
-অজ্ঞাত।
৫).
স্ত্রী রাতেই থিয়েটারে যায়, স্বামীকে নেয় না সঙ্গে।
– হাম্পনসেন।
।।দুই।।
রুবাই ও শায়েরী:
রুবাই ও শাযেরী কি এক জিনিষ?
নাহ,, শাযেরী ও রুবাই এক জিনিষ নয়। তবে সব রুবাই-ই এক একটি শায়েরী, কিন্তু সব শায়েরী-ই কিন্তু এক একটি রুবাই নয়।
কারণ, তবে তফাৎ কি?
তফাৎ হলো- দার্শনিক চৌপদী (চার লাইনের) কবিতা হলো ‘রুবাই’।
রুবাইয়ের চলন খুব নিয়মানুগ ও লাগসই। লেখা হবে চার লাইনে।
প্রথম দুই লাইনে অন্ত্যমিল থাকবে। তৃতীয় লাইনের শেষে অন্ত্যমিল মুক্ত।
আবার চতুর্থ লাইনে প্রথম দুই লাইনের মতো অন্ত্যমিল থাকবে।
প্রথম দুই লাইনে মূল বিষয়ের অবতারণা করা হবে। অন্ত্যমিল সেই বিষয়ের ঐক্য ধারণ করবে। তৃতীয় লাইনে কবি বা দার্শনিক তাঁর সেই ভাবনা তুলে ধরবেন, যা তিনি পদ্ধতিগত আলোচনা বা চর্চায় উত্তর পাচ্ছেন না। চতুর্থ লাইনের অন্ত্যমিলের মধ্য দিয়ে তৃতীয় লাইনের সমস্যা নিয়ে কবির নিজের কথা থাকবে। আর তা প্রথম দুই লাইনে বলা আলোচনার সঙ্গে তা যুক্ত হবে।
এর ইঙ্গিত বহন করবে চতুর্থ লাইনের অন্ত্যমিলে।
যেমন দু’টি রুবাইয়ের উদাহরণ-
১).
After so long time I met you in my dream last night
From bloomed body-garden I smelt the perfume-delight,
Your soft touch gave me spirit in my heart’s gloominess
Woke up from dream-remained the remorse in existence.
-Aznabi
বঙ্গানুবাদ: বহুকাল পর গতরাতে স্বপ্নলোকে তোমার দর্শন পেলাম
প্রস্ফুটিত তোমার দেহবাগিচার অাকুল খোশবু পেলাম,
তোমার পেলব হাতের পরশ এ নীরস প্রাণে চেতনা দিল
স্বপ্ন ভেঙ্গে জেগে উঠলাম- বুকভরা খেদ রয়ে গেলো!
-আজনবী
২).
O Saki! Lo! The lovely morning has appeared
Arise and pour the wine into the bottle left from the night
Forget all miseries and drink the joy of life
This one breath is ours – think not of the next.
সোবহেই খোশ ও খুররম অাস্ত খীম অায়ে সাকী
দর শীশাহ্ বেকুন শরাব অায শব বাকী
জামী বামান অারদ দম গনীমত মীদান
ঈন একদমাহ্ নগদরা ওয়া ফরদা বাকী।
বঙ্গানুবাদ: ছিন্ন করে রাতের আঁধার এলো শুভ ঐ প্রভাত
সাকি ওঠো! ভাঙো নেশা জেগে উঠো আমার সাথ
ভুলো সকল বিষাদ ব্যথা – পান করো এ জীবনরস
বর্তমানটা ভোগ করে নাও – বাকি যা সব দাও না বাদ।
আর ‘শায়রী’ হল কবিদের ছোট ছোট কবিতা যা দিয়ে অল্প কথায় মনের অনেক গভীর ভাব প্রকাশ করা হয়ে থাকে। তাতে দার্শনিক ভাবনা থাকতেও পারে, আবার নাও থাকতে পারে। শায়েরী রুবাইয়ের মতো চার লাইনের হতেই হবে, এমন কোন বাধ্য বাধকতা নেই। দু-লাইন, তিন লাইন, চার লাইন যা খুশি হতে পারে। ১-৩-৪ লাইনে মিল থাকার কোন বাধ্য বাধকতা নেই। তবে অন্তমিল থাকলে ভাল। না থাকলেও কোন ক্ষতি নেই।
যেমন কয়েকটি শাযেরীর উদাহরণ-
শায়রী (এক)
চমনমে ইখতালাতে রঙো বু সে বাত বনতি হ্যায়
হাম ই হাম হ্যায় তো কেয়া হাম হ্যায়
তুমহি তুম হো তো কেয়া তুম হো
– সারসার সালানী
বঙ্গানুবাদ: বাগানে যে ফুল ফোটে রঙ আর সুরভীর মিলনেই তার সার্থকথা। তেমনি আমাদের দুজনের মিলনেই আমাদের চরম মূল্যায়ন, আমাদের জীবনের পূর্ণতা। একা আমি তো অসম্পূর্ণ একা তুমিও মূল্যহীনা।
শের শায়রী (দুই)
ও ঔর হোঙ্গে যো পীতে হ্যায় বেখুদিকে লিয়ে
মুজেসে চাহিয়ে থোরিসে জ়িন্দেগীকে লিয়ে
– জিগর মুরদাবাদী
বঙ্গানুবাদ: ওরা আলাদা জাতের লোক যারা সুরা পান করে জীবন কে ভুলে যাবার জন্য, আমার তো সুরার প্রয়োজন হয় জীবনকে ফিরে পাবার জন্য।
শের শায়রী (তিন)
ময়নে যো তুমকো চাহা, কায়া ইসমে খতা হ্যয়
এ তুম হো, আ আয়না, ইনসাফ জরা করনা
– জলীল মানিকপুরী
বঙ্গানুবাদ: আমি যে তোমাকে চাইছি এটা অপরাধ কি? এই তুমি এইবার তোমার সামনে এই আয়না রাখছি, দেখে বিচার কর, হে প্রিয়া তুমি এত সুন্দরী কার সাধ্য যে তোমাকে না ভালবাসে থাকতে পারে, নিজেকে আয়নায় দেখ, বুঝতে পারবে এত সুন্দরীকে সবাই চাইতে পারে এতে কারও কোন অন্যায় নেই।
শের শায়রী (চার)
বদল যায়ে আগর মালী
চমন হোতা নেহী খালি
বাহারে ফিরভি আতি হ্যায়
বাহারে ফিরভি আয়েঙ্গে
– দাগ
বঙ্গানুবাদ: মালি বদলে গেলে বাগান খালি হয়ে যায় না, শূন্য হয়ে যায় না বাগানের ফুলভার। কেন না বসন্ত আবারও আসবে তার ফুল সাজি নিয়ে, মালী অনেক বদলাবে কিন্ত বসন্তের আগমন তাতে কোন দিন রুদ্ধ হবে না।
শায়েরী তাই রুবাই হতেও পারে, নাও হতে পারে। কিন্তু প্রত্যেকটি রুবাই-ই এক একটি শাযেরী। বোঝা গেল নিশ্চয়ই শায়েরী ও রুবাইয়ের তফাৎ।
উর্দু কবিতার মূল রূপগুলি হ’ল-
গজল গীত, (দুটি লাইনার দম্পতির একটি সেট), যা একই ছড়ার সাথে কঠোরভাবে শেষ হওয়া উচিত এবং গজলের পূর্বনির্ধারিত মিটারের মধ্যে থাকা উচিত। গজল গঠনের জন্য সর্বনিম্ন পাঁচটি দম্পতি থাকতে হবে। দম্পতিদের একই চিন্তা থাকতে পারে বা নাও থাকতে পারে। এটি কবিতার অন্যতম জটিল রূপ, কারণ গজল লেখার সময় এমন অনেকগুলি কঠোর পরিমিতি মেনে চলতে হয়। বিষয়টি লেখার আগে গজলের মূল প্রতিপাদ্যটি সম্পর্কে চিন্তা করা গুরুত্বপূর্ণ। গজলের প্রথম লাইনে অবশ্যই একটি বিরত থাকা আবশ্যক, যা এমন একটি শব্দ বা বাক্য যা সহজেই অন্যান্য দম্পতির মধ্যে লাগানো যায়। একটি গজলের প্রতিটি দম্পতি , শের (কবিতা) নামে পরিচিত। প্রথম শেরকে মাতলা বলা হয় । শেষ শেরকে মাকতা বলা হয় , তবে কেবল যদি কবি তাঁর “তখালুস” ব্যবহার করেন ।
‘হামদ হামّ’ রূপটি হ’ল আল্লাহর প্রশংসা করা কবিতা। “হামদ” শব্দটি কুরআন থেকে উদ্ভূত,এর ইংরেজি (Praise) অনুবাদ “প্রশংসা”।
‘মনকাবাত’ রূপটি হ’ল সূফী ভক্তিমূলক কবিতা, মুহাম্মদের জামাতা আলী ইবনে আবী তালিবের প্রশংসা করে কোনও সূফী সাধক।
মার্সিয়া (Marsiya) একটি হ’ল অন্ত্যেষ্টি গাথা সাধারণত মৃত্যু ক্ষান্ত হাসান , হুসেন , অথবা তাদের আত্মীয়। ছড়ার মতো এ এ এ এ বি বি সহ প্রতিটি স্তরের ছয়টি লাইন রয়েছে।
মীর আনিসের পরম্পরাগত প্রজন্মের মধ্যে যে ঐতিহ্যটি উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন, তিনি হলেন মীর নবাব আলী ‘মুনিস’, দুলাহ সাহাব ‘উরুজ’, সৈয়দ মোহাম্মদ মহসিন (জৌনপুরী), মোস্তফা মীরজা উরফ পাইরে সাহেব ‘রাশেদ’, সৈয়দ মুহাম্মদ মির্জা উনস, আলী নবাব ‘কাদিম’, সৈয়দ সাজ্জাদ হুসেন “শাদীদ” লখনভী, আল্লামা, ডাঃ সাইদ আলী ইমাম জায়েদী, “গৌহের” লুছনাভি মীর বাবর আলী আনিসের নাতি, সৈয়দ কারার হায়দার (জৌনপুরী) এবং সৈয়দ ইয়াদুল্লাহ হায়দার (সৈয়দ কারার হায়দারের ছেলে)। মাসনাভি (Masnavi একটি কবিতা লেখা হয় জোড় মধ্যে ব্যাকিক( bacchic) চতুর্মাত্রিক চরণবিশিষ্ট কবিতা একটি সঙ্গে ছন্দোবিশেষ *(গত পা জন্য)। বিষয়টি প্রায়শই রোম্যান্স হয়। মীর তকি মীর এবং সৌদা এ জাতীয় কিছু রচনা করেছিলেন। ডাঃ সৈয়দ আলী ইমাম জায়েদী গওহর লখনভী রচিত ইসলামের ধর্মীয় মাসনবী ইতিহাস (তারিখ-ই-ইসলাম আজ কুরআন)। ‘নাআত’ এমন একটি কবিতা যা বিশেষত ইসলামী নবী মুহাম্মদ সা । ‘নাজম’ কবিতা মূলত উর্দু কবিতার মূল ধরণ। এটি যে কোনও বিষয়ে লেখা যেতে পারে, এবং তাই এর বিপুল সংখ্যক উদাহরণ বিদ্যমান। নাজির আকবরবাদী, ইকবাল , জোশ,ফিরাক,আখতারুল ইমান থেকে শুরু করে দম মীম রশিদ , ফয়েজ , আলী সরদার জাফরি এবং কাইফী আযমী , উর্দু কবিরা সাধারণ জীবন, দার্শনিক চিন্তাভাবনা, জাতীয় সমস্যা এবং একটি পৃথক মানুষের অনিশ্চিত নাজমকে আবৃত করেছেন। ।
নাজমের স্বতন্ত্র রূপ হিসাবে ইংরেজী এবং অন্যান্য ইউরোপীয় কবি দ্বারা প্রভাবিত বহু উর্দু কবি উর্দু ভাষায় সনেট লিখতে শুরু করেছিলেন। আজমতউল্লাহ খান (১৮––-১৯৩৩) উর্দু সাহিত্যের সাথে এই ফর্ম্যাটটি চালু করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। উক্ত উর্দু কবি যারা সনেট লিখেছিলেন তারা হলেন আক্তার জুনাগড়ী, আক্তার শিরানী, নূন মীম রশিদ, জিয়া ফাতেহাবাদী, সালাম মাছালিশহরী এবং উজির আঘা ।
কাসিদা (Qasida), সাধারণত গাথা একজন পরোপকারী ব্যক্তি, থেকে বিদ্রুপ, অথবা একটি ইভেন্টের একটি অ্যাকাউন্ট। এটি গজলের মতো একই ছড়া ব্যবস্থায় ব্যবহৃত হয়, তবে সাধারণত দীর্ঘ হয়।
রুবাই(Ruba’i) একটি কবিতা শৈলী, হয় আরবি “শব্দটি চতুর্দশপদী শ্লোক।” বহুবচন শব্দ রুবাইয়াত( rubā’iyāt) প্রায়ই ইংরেজীকরণ রুবাইয়াত , এই ধরনের quatrains একটি সংগ্রহ বর্ণনা করতে ব্যবহার করা হয়।
তাজকিরা(Tazkira) হ’ল জীবনী সংক্রান্ত সংহিতা-এর কবিতা ।
উর্দু কবিতার মূল সংগ্রহগুলি হ’ল-
দিওয়ান, গজলের সংকলন।
কুলিয়াত, একজন লেখকের সম্পূর্ণ কবিতা সংকলন।
।।তিন।।
লান্দে কবিতা:
আফগানিস্তানের ঐতিহ্যবাহী পশতুন ভাষায় লেখা লোক-কাব্যের অনন্য এক কবিতার ঘরানার নাম ‘লান্দে’।
সাধারণত এই কাব্যের বিষয়বস্তু নারী ও পুরুষের শাশ্বত প্রেম।
‘লান্দে’ হচ্ছে প্রেম-বিষয়ক দুই লাইনে লেখা বিশেষ ঘরানার অণুকাব্য –
অনেকটা তিন লাইনের জাপানি হাইকুর মতো।
তবে এই লান্দে লেখার কোন বাঁধা-ধরা ছক বা নিয়ম কানুন নেই হাইকু বা রুবাই-য়ের মতো।
শেষে অন্তমিল থাকলেই হলো।
একটি উদাহরণ –
‘প্রিয়তম বিহনে সারা রাত পুড়ি আর জ্বলি
আমি এক মোমের বাতি, নীরবেই পুড়ি আর গলি।’
– নাদিয়া আঞ্জুমান (১৯৮০-২০০৫).
আরও পাঁচটি লান্দে কবিতা বাংলায়-
১).
তোমার আবেশে কেটে যায় দিন সন্ধ্যাও আসে ফিরে,
চেতনারা সব তোমার আবেশে আমাকেই রাখে ঘিরে।
২).
‘ভালবাসার কাজ সুবাস ছড়ানো,আকড়ে থাকা নয়,
তাই তো ভালবাসা করতে গিয়ে,অনেকে পায় ভয়।’
৩).
‘আমি ভালবাসা পাব ভেবে ভালবাসিনে,
অপমানিত হবো জেনেও ভালবাসি হে।’
৪).
‘ভালবাসা ছাড়া আর কিছু নাই এই ভবে,
পুড়ে ছাই হতে চাও ভালবেসে ফেলো তবে।’
৫).
‘মন নিয়ে খেলা করি মন নিয়ে বাঁচি,
এই মন আছে বলে তুমি আমি আছি।’
Lande, what is poetry?
Lande is a unique genre of folk poetry written in the traditional Pashtun language of Afghanistan.
Usually the subject of this poem is the eternal love of men and women.
‘Lande’ is a special love poem written in two lines about love
Much like a three-line Japanese haiku.
However, there are no fixed rules or rules for writing in this land like haiku or rubai.
At the end of the match.
An example-
‘Burn and burn all night in the beloved’s house
I am a candle, burning silently and alley.’
– Nadia Anjuman (1970-2005).
Five more Lande poems:
1.
In your obsession the day passes and the evening comes back,
All consciousness surrounds me in your obsession.
2.
‘The work of love is to spread fragrance, not to cling,
That is why many people get scared when they go to make love.’
3.
‘I love you, I love you,
I love knowing that I will be humiliated.’
4.
‘There is nothing but love,
You want to be burnt to ashes, but fall in love.’
5.
‘I play with my mind, I live with my mind,
I am here because you have this mind.’
।। চার।।
হায়াঙ্গা, সিজো, ছাংগা, গাসা:
হায়াঙ্গা কবিতা বলতে বোঝায় বহিরাগত কোরিয়ান কবিতা যা হানজা ব্যবহার করে কোরিয়ান শব্দগুলি প্রতিলিপি করে (ইডু পদ্ধতির অনুরূপ, প্রতিলিপির হায়ঙ্গা স্টাইলকে বলা হয় (hyangch’al) এবং ইউনিফাইড সিলার সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য। এটি কবিতার প্রথম স্বতন্ত্র কোরিয়ান রূপগুলির মধ্যে একটি। গোরিও পিরিয়ডের সামগুক ইউসার ১৪ টি কবিতা রয়েছে যা আজ অবধি সংরক্ষণ করা হয়েছে।
হাইয়াঙ্গা বেশ কয়েকটি আনুষ্ঠানিক বিধি দ্বারা চিহ্নিত। কবিতাগুলি চার, আট বা দশ লাইনের সমন্বয়ে থাকতে পারে। দশ-লাইনের কবিতাগুলি সর্বাধিক বিকাশযুক্ত, যথাক্রমে চার, চার এবং দুটি লাইন সহ তিনটি বিভাগে কাঠামোযুক্ত। দশ লাইনের অনেকগুলি কবিতা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দ্বারা রচিত হয়েছিল। শিলার পরিধি হাওয়ারং ‘এর বিকাশ ও সমৃদ্ধির’ ক্ষেত্রে এর ভূমিকা হায়াঙ্গা জেনার অনেক পণ্ডিতের আগ্রহের বিষয়।
গোরিও পিরিয়ড হানজার ক্রমবর্ধমান ব্যবহার দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছিল। হাইয়াঙ্গা মূলত কোরিয়ান সাহিত্যের একটি রূপ এবং “গোরিও গান” হিসাবে অদৃশ্য হয়ে গেল (গোরিও গায়ো) আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বেশিরভাগ গোরিয়েও গানগুলি মৌখিকভাবে গাওয়া হয়েছিল এবং অনেকগুলি জোসিয়ন আমলে বেঁচে ছিল, যখন তাদের কয়েকটি হ্যাঙ্গুল ব্যবহার করে লেখা হয়েছিল। গোরিও গানের কাব্যিক রূপটি পরিচিত হিসাবে রয়েছে।
কোরিয়ো যুগের (৯১৮ – ১৩৯২ খ্রীষ্টাব্দ) এমন প্রায় ষাটটি কবিতা পাওয়া গেছে। কিছুটা দীর্ঘ বলে, এইসব কবিতাকে ‘ছাংগা’ বলা হতো। এইসব কবিতার রচয়িতারা সকলেই সাধারণ লোক, এমন কি কেউ কেউ জনপদ বঁধু ( কিসেয়াং)। কবিতাগুলির কাব্যিক উৎকর্ষ যথেষ্ট এবং প্রেমের উৎকৃষ্ট প্রকাশ।
সুতীব্র আবেগের বাধাহীন প্রকাশ সেইসব কবিতাগুলোয় সমুজ্জল অথচ তা কিন্তু অশালীন নয়।
গাসা শ্লোকের একটি রূপ, যদিও এর সামগ্রীতে নৈতিক উপদেশের মতো পৃথক অনুভূতির প্রকাশের চেয়ে আরও বেশি কিছু অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। গাসা শ্লোকের একটি সহজ রূপ, যার প্রতিটি তিন বা চারটি সিলেবলের দ্বিগুণ হয়। কেউ কেউ গাসাকে প্রবন্ধের রূপ বলে মনে করেন। গাসার সাধারণ থিমগুলি ছিল প্রকৃতি, ভদ্রলোকদের গুণাবলী বা পুরুষ এবং মহিলার মধ্যে প্রেম। ফর্মটি প্রথম গোরিও আমলে আবির্ভূত হয়েছিল এবং জোসেওন রাজবংশের সময়ে এটি জনপ্রিয় ছিল।
এগুলি সাধারণত গাওয়া হত এবং ইয়াংবান মহিলাদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল। ষোড়শ শতাব্দীর কবি জিয়ং চোলকে রূপটি নিখুঁত রূপকার বলে গণ্য করা হয়, যার মধ্যে সমান্তরাল রেখার সমন্বয়ে প্রতিটি বিভক্ত হয়ে যায়।
সিজো একটি (traditional) ঐতিহ্যবাহী কোরিয়ান ভাষাগত কাব্যিক রূপ যা উত্থাপিত হয়েছিল (Koryǒ) কোরিও সময়কাল, সময়কালে পুষ্পিত (Chosǒn) কোসন রাজবংশ, এবং এখনও লেখা হয়। সাধারণ থিমগুলি অন্তর্ভুক্ত করে তবে নিম্নলিখিতগুলির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, প্রকৃতি, অতীতের নস্টালজিয়া, প্রেমের আগ্রহ, (historical) ঐতিহাসিক ঘটনাগুলি, নৈতিক নির্দেশন। বেশিরভাগই লিখেছেন তখনকার শিক্ষিত জনগণ এবং শিক্ষিতরা উপভোগ করেছেন (ইয়াংবান ক্লাস) তবে এর ব্যতিক্রমও ছিল। কিসেনগস নিম্নতম শ্রেণীর ছিল, তবুও তারা তৈরি করতে পারে এবং আবৃত্তি করতে পারে সিজো।
সিজো। ছোট তিন লাইনের কবিতা। জাপানে যেমন হাইকু, কোরিয়াতে তেমনি শিজো। সংক্ষিপ্ত, শাণিত। সহজ, কিন্তু ভারী সুন্দর।
অনেকে বলেন, কবিতার ফর্ম হিসেবে সিজো নাকি হাইকুর চেয়েও প্রাচীন। হাইকুর মত সিজোরও আছে কিছু বজ্র-আঁটুনি নিয়মকানুন। একেকটা লাইনে থাকবে মাত্র চোদ্দ থেকে ষোলটা সিলেবল, বাংলায় যাকে বলে ‘দল’। তাই শিজোয় শব্দব্যবহার হতে হয় খুব সংযত, পরিমিত।
হাইকুর সঙ্গে তুলনা করলে অবশ্য বোঝা যায়, সিজোর এই লাইনের দৈর্ঘ্যও নেহাৎ কম নয়, কারণ হাইকুতে সাধারণতঃ প্রথম লাইনে পাঁচ, দ্বিতীয় লাইনে সাত আর শেষ লাইনে পাঁচ, এইভাবে সিলেবল-এর বিন্যাস হয়। মোট সতেরো। হাইকু তাই আরও ছোট্ট। এখানে একফাঁকে মনে করে নেওয়া যেতে পারে মাৎসুয়ো বাশোর সেই বিখ্যাত হাইকুটিকে, ইংরেজি অনুবাদে যাকে লেখা হয়: “An ancient pond/ a frog jumps in/ the splash of water”,
রবীন্দ্রনাথ যার বাংলা অনুবাদ করেছিলেন,
‘পুরোনো পুকুর/
ব্যাঙের লাফ/
জলের শব্দ।’
ভাষান্তরের সময়ে ওই মাত্রা-সিলেবল এর চুলচেরা হিসেব মানেননি তিনি। সেটা সম্ভবও নয় কারণ দুটো ভাষার গঠনরীতি পুরো আলাদা।
কোরিয়ান সিজো অমন সাতে-পাঁচের নিয়মে থাকে না, তার দৈর্ঘ্য আরেকটু লম্বা– তিন লাইন মিলিয়ে চুয়াল্লিশ থেকে ছেচল্লিশ সিলেবল। সেই জন্য হাইকুতে যেমন একটা লাইন শুধু একটাই দৃশ্য দেখায়, শিজোর একেকটা লাইনে ধরে যায় দুটো টুকরো ছবি। লাইনের মাঝখানে ছোট্ট একটা বিরতি পড়ে, যার দুপাশে থাকে সে দুটো বাক্যাংশ।
গোলমেলে ঠেকছে কী?
একটা উদাহরণ দিলেই ব্যাপার টা বোঝানো সহজ হয়ে উঠবে। শুরু করা যাক তবে।
“দশটা বছর ব্যয় করে এই পর্ণকুটির তৈরি করা
আধখানা তার বাতাস থাকে, আধখানা তার চাঁদের বাড়ি
কোথায় তোমায় বসতে দেব? বরং তুমি বাইরে এসো।”
সং সুন নামে পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকের এক কোরিয়ান কবির লেখা রাজদরবারে কাজ করতেন আগে, পরে সব ছেড়ে দিয়ে গ্রামে চলে যান, লেখালিখি নিয়েই জীবন কাটান। এই কবিতাটার পিটার লি-কৃত ইংরেজি অনুবাদ থেকে বাংলায় অনুুবাদ করা। এখানে যদি এক একটা লাইনকে দেখা যায় আলাদা করে, বোঝা যাবে প্রত্যেকটায় আসলে দুটো বাক্যাংশ আছে, দুটো ছবি।
প্রথম লাইনেই যেমন দুটো স্টেটমেন্ট, একটা বলছে দশ বছর পরিশ্রমের কথা, অন্যটা বলছে বাড়ির কথা। দ্বিতীয় লাইনে তো আধাআধি ভাগ হয়ে গেছে লাইনটাও, বাড়িটারই মত… যার অর্ধেকটায় থাকে বাতাস, আর বাকি অর্ধেকটায় চাঁদ। শেষ লাইনেও অমন দু ভাগ, প্রথম অংশটা বলছে, বাড়িতে ঢুকতে/বসতে দেবার জায়গা নেই (যেহেতু বাতাস ও চাঁদ আগেই সবটা দখল করে রেখেছে), আর শেষ টুকরোটা জানাচ্ছে, বাড়ির বাইরেই বরং অতিথিকে গ্রহণ করা হবে।
ছোট্ট একটা ছিমছাম কবিতা। তিন লাইনের জাফরির ফাঁক দিয়ে আসা একটুকরো গল্পের আভাস। সিজো আসলে এরকমই।
সিজো-তে তিন লাইন মিলিয়ে মোট চুয়াল্লিশ থেকে ছেচল্লিশটা সিলেবল থাকে। লাইন পিছু চোদ্দ থেকে ষোলটা।
ইংরেজি অনুবাদের সময়ে সচরাচর সিলেবল-এর হিসেব একদমই মানা হয় না, এমনকি লাইনের হিসেবও নয়। বাংলায় সেটা করা বরং তুলনামূলকভাবে কিছুটা সহজ। অনুবাদ করার সময়ে ষোল মাত্রার স্বরবৃত্তের ছাঁচ রাখার চেষ্টা করা ভাল , যাতে সিলেবল – এর হিসেবটা বজায় থাকে মোটামুটি (মানে ছেচল্লিশ সিলেবলের উর্ধ্বসীমাটা আরেকটু বাড়িয়ে আটচল্লিশ বানানো যায় আর কি!) আর ছন্দটাও খানিক ফিরিয়ে আনা যায়। যদিও কোরিয়ান শিজোতে সিলেবল বিন্যাসের হিসেবটা আরও জটিল, সেগুলো কয়েকটা শব্দবন্ধে ভাগ হয়ে এরকম দেখায়-
১ম লাইন – ৩ -৪ -৪ – ৪ (বা ৩)
২য় লাইন – ৩ -৪ -৪ – ৪ (বা ৩)
৩য় লাইন -৩-৫-৪-৩
এ তো গেল শিজোর শুষ্ক গঠনগত দিকটা- খাঁচার গড়ন, যন্ত্রপাতি আর কলকব্জা। তার ভেতরের কবিতাটা কেমন হবে? নিয়ম আছে তারও। প্রথম লাইনে বিষয়টার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে, দ্বিতীয় লাইনে সেটাকেই দেখানো হবে সবিস্তারে। তৃতীয় লাইনে এসে কিন্তু একটু পালটে যাবে বিষয়মুখ, আসবে একটা ছোট্ট টুইস্ট (কিম্বা, ক্ষেত্রবিশেষে একখানা বড় ক্লাইম্যাক্স) মোটমাট প্রথম দু লাইনের থেকে একটু বদলে যাবে স্বর।
যেমন আগে দেওয়া কবিতাটায় প্রথম লাইনে এসেছে বাড়িটার উল্লেখ। দ্বিতীয় লাইনে তারই বিস্তারিত বর্ণনা। শেষ লাইনে কিন্তু একটা অপ্রত্যাশিত নতুন সুর এসে গেছে, একজন অতিথির কথা, একজন ‘তুমি’, যাকে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া যাচ্ছে না। এটাই সিজোর বৈশিষ্ট্য। একটা ছোট্ট মোচড় শেষে, একটা আলতো বিষয়ান্তর। ব্যস, সিজো মানে এই-ই।
শেষ লাইনে টুইস্টের কথা বললাম ঠিকই, কিন্তু সিজো সেই অর্থে ওপরচালাক কবিতা নয় মোটেই। পাঠককে চমকে দেওয়া তার উদ্দেশ্য নয়। সিজো আসলে খুব সরল, এবং গভীর। প্রাচ্যের দেশগুলোতে, তা চিন হোক জাপান হোক আর কোরিয়াই হোক, কবিতার মূলসুরটা তো খুব সহজ তারে বাঁধা থাকে। হয়তো প্রকৃতির বর্ণনা, হয়তো কবির সুখ বা দুঃখের একটুকরো ছবি, এইটুকুই। শেষ লাইনে যেটা আসে সেটা ওই একই ছবিকেই হয়তো একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে নেওয়া হয়।
আর হ্যাঁ, সিজো কিন্তু গান হিসেবেও গাওয়া হত। সুর-টুর দিয়ে, বাঁশির সঙ্গে। অনেক সময়েই সেগুলো হত তাৎক্ষণিক, কোনও জলসায় বসে তখনই কথা বসিয়ে সুর দিয়ে গেয়ে ফেলা। সেকালে আমাদের দেশেও কবিয়ালরা যেমন করতেন। কাজেই কবিদের সিজো-নির্মাণের নিয়মকানুন, অক্ষর আর সিলেবল-এর বিন্যাস একদম ভালোভাবে রপ্ত থাকতে হত, যাতে যে চট করে কথা বসিয়ে ওই ফর্ম্যাটে যে কোনও বিষয়ের ওপর কবিতা কিম্বা গান বেঁধে ফেলা যায়।
প্রথম সিজোর জনকের মর্যাদা দেওয়া হয় ‘উ তাক‘ নামের এক কবিকে। মোটামুটি তের’শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে চতুর্দশ শতকের মাঝামাঝি, এই সময়টা তাঁর জীবনকাল।#