মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত ১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হাত ব্যবহার করে গোল করেছিলেন, ফুটবল ইতিহাসে যেটি হ্যান্ড অব গড নামে বিখ্যাত। ম্যারাডোনা গত হলেও ৩৬ বছর আগের সেই ঐতিহাসিক গোলটি নিয়ে আজও আলোচনা হয়। নতুন করে ডিয়েগো ম্যারাডোনার সেই গোলটি আবারও আলোচনার শিরোনামে।
না, সেই গোল নিয়ে আবার নতুন কোনো তত্ত্ব বা ঘটনা সামনে আসেনি। যে বল দিয়ে ম্যারাডোনা হ্যান্ড অব গড মুহূর্তের জন্ম দিয়েছিলেন, সেটি বুধবার (১৬ নভেম্বর) নিলামে তোলা হয়েছিল। বিখ্যাত নিলামকারী প্রতিষ্ঠান গ্রাহাম বাডের আয়োজিত নিলামে সেই সাদা অ্যাজটেকা বলটির দাম উঠেছিল ২০ লাখ ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ২৫ কোটি টাকা।
ইংল্যান্ড-আর্জেন্টিনার মধ্যকার সেই ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিউনিসিয়ান রেফারি আলি বিন নাসের। ইংলিশ খেলোয়াড়রা সেদিন সমস্বরে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির হ্যান্ডবলের দাবি জানালেও তিনি সেদিন গোলটি বহাল রাখেন। এরপর থেকে বলটি তার মালিকানায়ই ছিল। গত মাসে তিনি বলটিকে নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নেন।
মেক্সিকোর বিখ্যাত অ্যাজটেক সভ্যতার স্থাপত্য এবং ম্যুরাল দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে অ্যাজটেকা বলটি তৈরি করেছিল খেলাধুলার নির্মাণসামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাডিডাস। বর্তমানে ফুটবল খেলায় একাধিক বলের ব্যবহার থাকলেও ১৯৮৬ বিশ্বকাপের শেষ আটে মেক্সিকো সিটিতে ইংল্যান্ড-আর্জেন্টিনার পুরো ম্যাচটিতে শুধু সেই বলটিই ব্যবহৃত হয়েছিল।
ঐতিহাসিক বলটি নিলামে উঠানো প্রসঙ্গে তিউনিসিয়ান রেফারি আলি বিন নাসের বলেন, “এই বলটি আন্তর্জাতিক ফুটবল ইতিহাসের অংশ। আমার মনে হয়েছে বিশ্বের সঙ্গে এটাকে ভাগাভাগি করে নেওয়ার এখনই সঠিক সময়। আমি আশা করব যিনি কিনবেন তিনি এটাকে মানুষকে দেখার সুযোগ করে দেবেন।”
চিরস্মরণীয় ওই ম্যাচে ডিয়েগো ম্যারাডোনার ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র এর আগেও নিলামে উঠেছে। এ বছরের মাঝামাঝি সেই ম্যাচে ম্যারাডোনার পরিহিত জার্সিটিও নিলামে তোলা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সেটি ৯.৩ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়েছিল।
৩৬ বছর আগে ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে ম্যাচের ৫১ মিনিটে সবাইকে স্তব্ধ করে হাত দিয়ে গোল করে দলকে এগিয়ে নেন তিনি। তখন ভিএআর প্রযুক্তি না থাকায় বেঁচে যান ম্যারাডোনা। পরবর্তীতে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি জানান গোলটি করার সময় “ঈশ্বরের হাতের” সাহায্য পেয়েছিলেন তিনি। সেই থেকে গোলটি ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছে “হ্যান্ড অব গড” নামে।
সেদিনের সেই গোল বহাল রাখার সিদ্ধান্তটি আজ ভুল প্রমাণিত হলেও তৎকালীন পরিস্থিতি বিবেচনায় সেটি সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল বলেই দাবি করেন তিউনিসিয়ান রেফারি আলি বিন নাসের। তিনি বলেন, আমি গোটা ঘটনাটি ঠিকভাবে দেখতে পারিনি। শিল্টন ও ম্যারাডোনা আমার দৃষ্টি আটকে দিয়েছিলেন। টুর্নামেন্টের আগে ফিফার নিয়ম অনুযায়ী তাই আমি লাইন্সম্যানের দিকে গোল নিশ্চিত করার জন্য তাকাই। ও মাঝমাঠের দিকে ফিরে আসে, যার অর্থ হল ওর মতে গোলটি বৈধ।
তিনি আরও বলেন, ম্যাচের পর ইংল্যান্ডের তৎকালীন কোচ ববি রবসন আমাকে বলেছিলেন- তুমি নিজের কাজটা ঠিকমতোই করেছো। কিন্তু লাইন্সম্যান ছিলেন দায়িত্বজ্ঞানহীন।
এর ৪ মিনিট পরেই মাঝমাঠ থেকে একক দক্ষতায় পাঁচজন ইংলিশ খেলোয়াড় এবং গোলরক্ষক শিলটনকে পরাস্ত করে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠতম গোল করেন। আর্জেন্টাইন অধিনায়কের এই জোড়া গোলে ইংলিশদের বিপক্ষে ২-১ গোলের জয় পায় আলবিসেলেস্তেরা। পরবর্তীতে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ ফুটবলের শিরোপাও জিতে নেয় লাতিন আমেরিকান দেশটি, আর ম্যারাডোনা বনে যান ফুটবল ঈশ্বর।
সূত্র : এএফপি