বিবাহ হল একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটি নর-নারীকে স্বামী-স্ত্রীতে পরিণত করে। বিবাহের মাধ্যমেই নর-নারীর সম্পর্ক সামাজিক বৈধতা, স্বীকৃতি ও অনুমোদন লাভ করে পরিবারে পরিণত হয়। এককথায়, বিবাহ হল এক বা একাধিক পুরুষ এবং এক বা একাধিক নারীর সমাজ স্বীকৃত স্থায়ী বন্ধন যা পিতৃত্বের উদ্দেশ্যেই যৌন সম্পর্ককে অনুমোদন দিয়ে থাকে (অ্যান্ডারসন ও পার্ক)। এই বিবাহের আগে এবং পরে নর-নারী/ দম্পতিদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়, যার ফলে বিবাহ ভেঙে যায় বা দম্পতিদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এইরকম অবস্থায় ‛ম্যারেজ কাউন্সেলিং’ এর প্রয়োজন হয়।
‛ম্যারেজ কাউন্সেলিং’ হল এমন এক সহায়তা যার মাধ্যমে বিভিন্ন কারণে নর-নারী/ দম্পতিদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব বা সমস্যা (পণপ্রথা, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক, বদ অভ্যাস, যৌন অতৃপ্তি, অর্থাভাব, কন্যা সন্তানের জন্ম, স্ত্রীর পিত্রালয়ের অত্যাধিক নাক গলানো, স্বামী নেশাগ্রস্থ হলে প্রভৃতি)- র সৃষ্টি হয় তার সমাধান হয়ে থাকে। একে ‛Couple Theraphy’ হিসাবেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। একজন কাউন্সেলর এই ‛ম্যারেজ কাউন্সেলিং’ এর মাধ্যমে দম্পতিদের সমস্যাগুলিকে সমাধান করে তাদের সম্পর্ক গুলোকে আরও বেশি সুন্দর করে গড়ে তোলেন। দম্পতিদের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলতে হলে ‛ম্যারেজ কাউন্সেলিং’ এর সাহায্য অবশ্যই নেওয়া উচিত।
এই ‛ম্যারেজ কাউন্সেলিং’ বিবাহের পূর্বে এবং বিবাহের পরে হতে পারে। বিবাহের পূর্বে পাত্র -পাত্রীর মধ্যে বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে নানান ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। এর ফলে পাত্র-পাত্রীর মানসিক অবস্থাও খুব শোচনীয় হয়ে পড়ে। তখন বিবাহ ভেঙে যাওয়ারও পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায়, এরকম অবস্থায় ‘ম্যারেজ কাউন্সেলিং’ এর সাহায্য নেওয়া উচিত। এবং বিবাহের পরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নানান কারণে বিভিন্ন সমস্যার সূত্রপাত হয়ে থাকে। দুজনের মধ্যে সু-সম্পর্কগুলো ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকে; এমনকি তাদের মধ্যে ডিভোর্সেরও পর্যায় চলে আসে। তখন কিন্তু মাথা ঠান্ডা রেখে আবেগের বশে সম্পর্কগুলোকে নষ্ট না করে একজন ভালো ‛বিবাহ পরামর্শদাতার’(Marriage Counselor) এর কাছে যেতে হবে। একজন বিবাহ পরামর্শদাতা ডিভোর্সের মুখ থেকে যেকোন দম্পতিকে ফিরিয়ে আনতে পারেন। কিন্তু এটাও মাথায় রাখতে হবে যে, এই ম্যারেজ কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে দম্পতিদের সমস্ত সমস্যা গুলোকে একশো শতাংশ ভাবে সমাধান করা যায় না, কিন্তু চেষ্টা করা হয়ে থাকে।
যাইহোক, সমস্ত দম্পতিদের বলবো আবেগের বশে কোনো সুন্দর সম্পর্ককে না বিচ্ছেদ করে একবার হলেও যেন ‛ম্যারেজ কাউন্সেলিং’ করান। ম্যারেজ কাউন্সেলিং করা কোনো লজ্জা বা খারাপ কাজ নয়, নিজেদের সমস্যা গুলোর কেবল সমাধান করার একটি মনস্তাত্ত্বিক উপায়। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে তারা যেন একজন সুদক্ষ, অভিজ্ঞ, রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত ম্যারেজ কাউন্সেলর এর কাছে যান। একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, সু-সম্পর্ক গড়ে তুলতে সময় লাগে দীর্ঘবছর কিন্তু ভেঙে ফেলতে সময় লাগে মাত্র কয়েক সেকেন্ড। তাই সমস্ত পাত্র-পাত্রী বা দম্পতিদের কে বলবো দীর্ঘ বছরের সম্পর্ক গুলোকে আবেগের বশে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে না ভেঙে একজন অভিজ্ঞ ম্যারেজ কাউন্সেলর এর সাহায্য নিতে। সামাজিক সম্পর্ক গুলো সুস্থ থাকলেই এই সমাজও সুস্থ থাকবে।