‘আমি তো মোহন কাওরা’ পর্ব আট

অবশেষ দাস
অবশেষ দাস
13 মিনিটে পড়ুন

মোহনের পরীক্ষা আর দিন সাতেক বাকি। লাস্ট মিনিট সাজেশন ধরে প্রস্তুতি চলছে। কাওরা বাড়িতে এইভাবে রাত জেগে নেশাতুর হতে দেখা গেছে। এত পড়াশুনা করতে কেউ দেখেনি। কেমিস্ট্রি আর ফিজিক্স নিয়ে ওর একটু টেনশন আছে। বাংলা, ইংরাজী, এগ্রিকালচার এসব কোনও চিন্তা নেই। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি,মাথায় যেন কিছু থাকছে না। দীপঙ্করের বাড়ি এর মধ্যে সে একদিন গিয়েছিল। মান-অভিমান মিটিয়ে এসেছে। অভিমান সে তো করবেই। কারণ তার বন্ধুটি মা মরা ছেলে। কখন কোনটা করতে হবে,সেটা তার বিবেচনা থাকা দরকার। উচ্চমাধ্যমিক কত বড় পরীক্ষা। সময় নষ্ট তো একদম চলে না। সেখানে দিনের পর দিন সন্ন্যাসীদের মতো তার উদাসীন্য, দীপঙ্করের ভাল লাগেনি। বন্ধুর সর্বনাশ সে তো কখনও চায়নি। পরীক্ষার প্রয়োজনীয় সবকিছু দীপঙ্কর ওকে দিয়ে দিয়েছে। এমনকি ফর্ম ফিলাপের টাকাটাও জোর করে সে মোহনকে দিয়েছে। কেউ জানে না। কত বড়ো মনের পরিচয়। এদিকে মোহন পড়াশুনার পাততাড়ি গুটিয়ে কবিতা লিখে বেড়াচ্ছে। মান-অভিমান তো হবেই। এর মধ্যে মাঝরাতে সনাতনের শরীর খুব খারাপ হল। রাতে অটো ভাড়া করে হসপিটালে নিয়ে যেতে হল। অক্সিজেন, ওষুধপত্র ‌হাজার ঝক্কি পোয়াতে হল। মোহনের দুটো দিন নষ্টও হল।‌
পারমিতা বলেছিল, ‘মোহন দা তোমার পড়াশুনা আছে। না হয় আমি হসপিটালে যাই। বড়দার সঙ্গে।’
এ যাত্রায় সনাতন পার পেলেও কখন কি হয়ে যায়,তার ঠিক নেই। দেখতে দেখতে কটা দিন কেটেও গেল। পরীক্ষার সিট অ্যালটেড হয়েছে, মাথুর জে.এম.বয়েজ হাইস্কুলে। মার্চের দশ তারিখ থেকে পরীক্ষা। একদিনে দুটো পেপারের পরীক্ষা। এক দিনে ছঘন্টা লিখতে হবে। মাঝে কিছুক্ষণ ব্রেক।
জগতের সবকিছু তার নিয়মে চলতে থাকে। পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়।‌ প্রথম দিন তো সে দারুণ পরীক্ষা দিয়েছে। সব জানা পেয়েছে। মোহনের পরীক্ষা একটা একটা করে হয়ে গেল। তার পরীক্ষা কেমন হল, সেটা যাচাই করার সামর্থ্য এবাড়ির কারও নেই। যুগলকিশোর সব ভুলে গেছে। পড়তে সে পারে। এগ্রিকালচার তো সে পড়েনি। তাই মোহনের মুখের কথা নেওয়ার চেষ্টা করে।
– কি রে পরীক্ষা কেমন দিলি?
– মোটামুটি দাদা।
– মোটামুটি কেন? ভাল নয়?
লক্ষ্মী পড়াশুনা জানে না। কিন্তু মোহনের মুখ পড়তে পারে। সে প্রতিদিন মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পর, সে বুঝতে চায়, ছোট দেওরের মনে জোর। পরীক্ষার দিনগুলো মোহনের মনের জোর যেন দিনে দিনে কমে গেছে। সে বুঝতে পারে। কিন্তু কিছু বলে না।
পরীক্ষার শেষ দিনে দীপঙ্করের মা মোহনকে ডেকে বলল, ‘বাবা, রেজাল্ট যা হবার তা হবে, তুমিও আমার আর একটা ছেলে।‌ বাড়িতে এসো। ভবিষ্যতে কি করবে, কি করবে না, তোমার বাড়িতে বাবা আছেন। দাদা-বউদিরা আছেন। আমরাও আছি। এটা মনে রেখো। কখনও নিজের মতো চলবার চেষ্টা করো না। তোমার মা নেই। এই বয়সে অনেক ভুলভ্রান্তি হয়। কিন্তু সংশোধন তো চাই। কখনও থেমে যেও না। কোনও অসুবিধা নিয়ে আমাদের কাছে আসতে দ্বিধা করো না। সবসময় জানবে, আমরা তোমার পাশে আছি। তোমার একজন মা আছে। যে তোমার কথা ভাবে।
মোহন মাথা নিচু করে থাকে। অনেকক্ষণ। দীপঙ্করের মা যখন কথা বলতে বলতে থামলেন, তখন সে তার পা জড়িয়ে ধরল। আর বলল,
– মাগো তোমারাই আমার হাসিখুশি। তোমরা ছাড়া আমার তো আর কেউ নেই। তোমাদের ছেড়ে কোথায় যাব।
– থাক বাবা। অমন করে না। তুই তো আমার ছেলে। আমার আর একটা ছেলে। দীপঙ্কর যেদিন‌ সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়েছিল, সবাই দেখে দেখে চলে গিয়েছিল। তুই ওকে ছেড়ে যাসনি। ভুলিনি বাবা। স্কুল থেকে মোড় মাথার STD বুথে কে একটা খবর দিয়েছিল, আমাদের বাড়িতে খবরটা যেতে দেরি হয়ে গিয়েছিল। খবর পেয়ে আমরা তাড়াহুড়ো করে এসেছিলাম। ছেলের শরীর রক্তে ভেসে গিয়েছিল। সেদিন তুই তো ছিলিস, ওর পাশে। হসপিটালে। এইভাবে দুই ভাই চিরকাল একসঙ্গে থাকিস।’
মোহন বলে, হ্যাঁ মা। তুমি যা বলবে, তাই হবে মা।
তারপর ওরা সামনে এগিয়ে যায়।
বাঁধানো বটগাছের গোড়ায় খুব ভাল বসা যায়। দুই ছেলে মোহন আর দীপঙ্করকে নিয়ে গাছতলায় তিনি হাতে তুলে খাইয়ে দেন। মোহন তো কখনও এত আদর পায়নি। খুব লজ্জা পায়। কিন্তু না বলতে পারে না।
রুটি, আলু ভাজা, হাতে বানানো ছাপা সন্দেশ আর সুজি বরফি বেশ গুছিয়ে দুজনকে খাইয়ে দেয়, দীপঙ্করের মা। জলের বোতল‌ হাতে ধরিয়ে দেয়। তারপর অনেক গল্পগুজব। হাসাহাসি। পুরানো কথার ঝাঁপি খুলে অনর্গল কথা বলে যাওয়া।
দীপঙ্কর বলল, চল্। আজ আমাদের বাড়িতেই থেকে যাবি। সকালবেলা নদী দেখতে যাব। খুব মজা হবে। তুই কবিতা লিখবি। চল্।
– বাড়িতে কিছু বলে আসা হয়নি। চিন্তা করবে। দু-এক দিনের মধ্যে আসছি।
মা বললেন, ‘মোহন ঠিক কথা বলছে। বাড়িতে চিন্তা করবে। আজ ওকে যেতে দাও।‌’
দীপঙ্কর আর বাধা দেয় না। একটু পর মোহন বাসে উঠে পড়ে। দীপঙ্কর মায়ের সঙ্গে মেন রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাত নাড়া দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে বাস চোখের আড়ালে চলে যায়। তারপর রাস্তার অপরপ্রান্তে এসে ওরা রায়চকের বাস ধরে নেয়। ওদের বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা নেমে যায়।

শীত চলে গেলেও রাতের দিকে হালকা ঠান্ডা পড়ছে।‌ ধনঞ্জয়ের বউ বলে, ‘দোলপুণ্যিমার চাঁত ডুবলে গরম ঠিকঠাক পড়বে।’ মাধবের বউ দুলালি এখনও রাতে লেপ মুড়ি দেয়।‌পালান,গজেন ভোর হতে না হতেই মাঠের দিকে হাঁটে। গজেনের বউটা এদিকে না এলেও পালানের বউ দস্যি বিছানার চাদর গায়ে মাঠের দিকে আসে,পালানের পিছন পিছন।
দখিনা বাতাস ফুটে গেছে। শীতের ছবিটা বদলে যাচ্ছে।‌ বাগানে ঢ্যাঁড়শ, ঝিঙের দানা পোঁতা হয়ে গেছে। সরু পুঁই শাকের ডোঁক সাপের মতো মাথা তুলে এগিয়ে আসছে রাস্তার দিকে। সে ঘরের চাল কিংবা মাচা চায়। পুঁই শাক ঘন্ট তেলো কাঁকড়া আর কুমড়ো দিয়ে জমে যাবে, গ্রীষ্ম-বর্ষা। গরমের চাষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে, পাইকপাড়ার টুকরো টুকরো বাগানে। শীতের ওলকপি, বাঁধাকপি এখনও পরম অবহেলায় বাগানের এক পাশে আড়া লেগে আছে। পাইকপাড়াও কিছু ফেলে রাখতে পারে, ওগুলো তার নমুনা। অনেকে উঠোনের পাশে একটু কুপিয়ে পালং দানা ছড়িয়েছিল। আর ভাল লাগছে না। তাই ওদের গায়ে হাত পড়ছে না। মোরগের মাথার মতো উঁচু হয়ে তারা দাঁড়িয়ে আছে, ওদের এখন শেষবেলা। ওখানেই এ পাড়ার লোক লঙ্কাচারা বসাবে। মাঠে মাঠে খেসারি কড়াই ছড়াচ্ছে। ক’দিন বাদেই শাক চচ্চরি হবে, মাটির উনুনে। তারক, রাজুদের বাগানে ভাঁটি করে কচু বসিয়েছিল। সব এখনও তোলা হয়নি। ওখানে আর কিছু হয় না, জায়গাটা আওতা।
চুপড়ি, ঝুড়ির বাজার আগের মতো নেই। তবু সনাতনের ছেলেরা ধরে রেখেছে।সবরকম চালিয়ে যাচ্ছে। এইপাড়ায় ওদের মতো আরও অনেক আছে। তারি, গুড়, রসের ভাড়ঁ নামিয়ে পালান ভাল কামালেও জুয়া আর নেশা করে সব ফরফিট করে দেবে। বউকে তো মরসুমের সময় খুব আদর দেয়। বায়না ধরলে রাখে। হাটে থেকে পছন্দ মতো ছাপা শাড়ি কিনে দেয়, এবার তো একসঙ্গে দুটো দিয়েছিল। আর যখন ধরে বংশ উদ্ধার করে দেয়। খুব মার মারে। কেউ বাধা দিতে গেলে তাকেও মারে। তাই কেউ আটকায় না। দস্যি যা মার খায়, অত ভাত খায় না।
মোহনের কোনোদিকে মন নেই। সে ঠিকানা ধরে কবিতা পাঠাতে আরম্ভ করে। একল বিদ্যালয়ের মাইনেও হাতে পেয়েছে, একসঙ্গে দু-তিন মাসের। ডাকে চিঠি পাঠানোর কোনো অসুবিধা নেই, তার কাছে পয়সা আছে। ঘরের অসুবিধা দেখার মতো সে কিছুই করে না। টুকটাক মনে করলে দেয়। ভাইপোদের জন্যে খাবার আনে। তেলে ভাজা আনে। মাঝেমধ্যে পাউরুটি কিনে আনে। মুড়ি কিনে আনে। এর মাঝখানে হাসিখুশি পত্রিকার দ্বিতীয় সংখ্যা প্রকাশের প্রস্তুতি শুরু হয়। বৈশাখ সংখ্যা প্রকাশ করার প্রস্তুতি চলতে থাকে। পঁচিশে বৈশাখ, রবিঠাকুরের জন্মদিন উপলক্ষে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পত্রিকা প্রকাশের কথা সে ভাবতে থাকে। একইসঙ্গে ফতেপুর বাজারে গিয়ে কম্পিউটার সেন্টারের মালিকের ফায়-ফরমাস খেটে দেয়। বিনা পয়সায় কম্পিউটার শেখার সুযোগও পেয়ে যায়। মোহনের একল বিদ্যালয় নিয়ম অনুযায়ী সকালবেলা করে চলে। বিকেলবেলা সে আর সময় পায় না। খুব অল্প সময়ের মধ্যে মোহনের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন চলে আসে। আরও বিভিন্ন কাজে সে জড়িয়ে পড়ে। অনেক রাত করে বাড়ি যায়। বাইরের মানুষের সঙ্গে মিশতে মিশতে সে একে একে শৌখিন রুচির মানুষ হয়ে যেতে লাগে। সে জীবন যাপনে শৌখিনতা খোঁজে। নিজের সমাজের সঙ্গে সে আর নিজেকে মেলাতে পারে না। রাত হলে তাদের ভাঙা ঘরে গিয়ে হয়তো শুতে হয়, কিন্তু সারাদিন কর্পোরেট লোকজনের হাবভাব দেখে দেখে সে নিজের অজান্তেই একটু কর্পোরেট হয়ে যায়। তার জীবনের শেকড় পাইকপল্লীতে আঁটা থাকলেও, সমস্ত দিনের যোগাযোগ ও রুচির মধ্যে একটা উচ্চাকাঙ্ক্ষা জন্ম নেয়।
আগেও সে উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিল, এখনও সে উচ্চাকাঙ্ক্ষী। কিন্তু আকাঙ্ক্ষার উপাদান ক্রমশ বদলে গেছে। সে কাউকে ভুলতে চায়নি, ঠিক কথা। কিন্তু সমবেত স্বপ্ন সে ক্রমে ক্রমে ভেঙে ফেলে। তার আর দীপঙ্করের বাড়ি যাওয়া হয় না। পড়াশুনা শেষ না করেও সে একটা বিরাট জগতের ভেতর দিয়ে হাঁটতে শুরু করে। পরীক্ষা শেষ হবার কিছুদিনের মধ্যেই বাইরের জগতের ডানায় বসে সে উড়তে থাকে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সম্মেলন, বইমেলা তাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। কিছুই সে পায় না। অথচ, মনে হয়, অনেককিছু। এমনই মায়া, এমনই তার হ্যাঁচকা।
চারিদিকে সে ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ পেয়েছে।কবি-সাহিত্যিকের ভিড়। কে বড়, কে মাঝারি, কে কিংবদন্তি সব যেন তার গুলিয়ে গেছে। পরীক্ষার রেজাল্টের কথা তার আর মনে নেই। দু-এক দিন রাতের দিকে আধা-ঘুমন্ত মোহন শুনতে পায়, বাবার কাশির শব্দ। থামতে চায় না, সেই কাশি। তখন তার মনে পড়ে পরীক্ষার রেজাল্টের কথা।
উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট যেদিন বের হল , মোহনের রেজাল্ট সবাইকে হতাশ করলো। সে বাড়িতে কিছু বলল না। বলল না, ঠিক নয়। বলার মতো তার কিছু থাকল না। আগের মতো অস্থিরতা তার নেই। হয়তো ভবিতব্য সে জেনে গিয়েছিল। তাই আগে থেকেই সে অভিযোজন করে ফেলেছে। খেটে খাওয়া সংসারে পড়াশুনার আপডেট তো থাকে না। তারপর পাড়াতে লেখাপড়া করার পিঠোপিঠি ছেলেপুলে থাকলে সব খবর পাওয়া যায়। রেজাল্ট বেরিয়ে যাওয়ার প্রায় দশদিন বাদে একদিন মাঝরাতে যুগলকিশোর মোহনকে জিজ্ঞেস করে,’ তোর রেজাল্ট কি হল রে।বাজার কোরতে হাটে গিয়েছিলুম। অনেক ফম জেরক্স কোরতেচে।’
– ভাল হয়নি, দাদা। পরের বারে চেষ্টা করব।
যুগলকিশোর না খেয়ে উঠে গেল। সনাতন শুয়ে ছিল। সব তার কানে গেল। রেজাল্ট নিয়ে সে আর আলাদা কিছু জিজ্ঞেস করল না।‌ রাতে ছেঁড়া ঝ্যাঁতলায় শুয়ে শুয়ে লক্ষ্মী অনেক কেঁদেছে। তার কত স্বপ্ন ছিল। সব বিফলে গেল। কিচ্ছু হল না। কেউ পারল না।

মোহন কোথায় কি করে বাড়ির কেউ খবর রাখে না। কম্পিউটার নিয়ে কিসব করে, এইটুকু জানে। কিন্তু সংসারে তাকে কিছু দায়িত্ব নিতে হয়নি। যখন মনে করে, দেয়। তার কাছে কোনও দাবি, সংসার করেনি। এই সংসারে সে স্বপ্ন হয়েছিল। স্বপ্নের একটা মস্ত বড় গাছ। সেই গাছের ডালপালা একে একে ভেঙে যেতে লাগল। লক্ষ্মী এই সংসারের ছায়ার ভেতর আর প্রদীপ জ্বলতে দেখে না। ঝন্টুর বউ পারমিতা সব শুনেছে, সে মোহন‌কে এই নিয়ে কিছু বলেনি। সে মনে মনে বেশ হতাশ হয়েছে। মাধব, দুলালি যখন শুনল যে মোহন পাশ করতে পারেনি,‌ তখন সনাতনের দিকে তাকিয়ে ওদেরও কষ্ট হল। স্বপ্নের মৃত্যু হলে জীবনের কদর থাকে না। ওদের বাড়ির লোক বোঝে না, পত্র-পত্রিকা করে সত্যি কিছু হয় কিনা। কিন্তু এটা লেখাপড়ার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়, সেটা লক্ষ্মী তার মতো করে বুঝেছে। লক্ষ্মীর ছেলে দুটো একে একে হাতে ধরতে হয়ে যাচ্ছে। তাদের খাটাখাটনি ছাড়া কিছুই তো দেওয়ার নেই।
মোহন বাইরের জগতে আরও অনেক বেশি জড়িয়ে পড়ে। পত্রিকার কাজ শেষ হয়ে আসে। চড়কের মেলার ঘোড়ার মতো দৌড়তে দৌড়তে বৈশাখ এসে যায়। নতুন বছরের নিম-হলুদ লাগে পাইকপল্লীর গায়ে। মোহন পড়াশুনা করল, কি করল না, এই নিয়ে এই পল্লীর কারও কোনও মাথা ব্যথা থাকল না। থাকলেও তা কুয়াশার চাদরে ঢাকা লন্ঠনের ক্ষীণ আলোর মতো কোথাও হয়তো টিমটিম করে জ্বলে থাকল। সনাতন পাইকের শেষ লাঠিটাও ভেঙে গেছে, এই ভেবে কেউ প্রকাশ্যে অশ্রুপাত করল না। সনাতন নিজেও না।

চলবে…

- বিজ্ঞাপন -

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

বিষয়:
এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
জন্ম: দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা। বাবা গৌরবরণ দাস এবং মা নমিতা দেবী। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের পাশাপাশি তুলনামূলক ভারতীয় ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা। দুটোতেই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। এছাড়া মাসকমিউনিকেশন নিয়েও পড়াশোনা করেছেন। বর্তমানে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার বিদ্যানগর কলেজের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক। প্রথম লেখা প্রকাশ 'দীপশিখা' পত্রিকার শারদ সংখ্যায়। তাঁর কয়েকটি কবিতার বই: মাটির ঘরের গল্প ( ২০০৪), কিশোরবেলা সোনার খাঁচায় (২০১৪), হাওয়ার নূপুর (২০২০) সহ অজস্র সংকলন ও সম্পাদিত গ্রন্থ প্রকাশিত হওয়ার আগেই তিনি একজন প্রতিশ্রুতিমান কবি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। কবিতা চর্চার পাশাপাশি প্রবন্ধ ও কথাসাহিত্যের চর্চা সমানভাবে করে চলেছেন। কবি দুই দশকের বেশি কাল ধরে লেখালেখি করছেন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ও সংকলনে। বেশকিছুদিন সম্পাদনা করেছেন ছোটদের 'একতারা' সাহিত্য পত্রিকা। এছাড়া আমন্ত্রণমূলক সম্পাদনা করেছেন বহু পত্র-পত্রিকায়। তিনি গড়ে তুলেছেন শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক দুটি অন্যধারার প্রতিষ্ঠান 'বাংলার মুখ' ও মেনকাবালা দেবী স্মৃতি সংস্কৃতি আকাদেমি।' তাঁর গবেষণার বিষয় 'সুন্দরবনের জনজীবন ও বাংলা কথাসাহিত্য।' পাশাপাশি দলিত সমাজ ও সাহিত্যের প্রতি গভীরভাবে মনোযোগী। ফুলের সৌরভ নয়, জীবনের সৌরভ খুঁজে যাওয়া কবির সারা জীবনের সাধনা। সবুজ গাছপালাকে তিনি সন্তানের মতো ভালবাসেন। সুন্দরবন তাঁর কাছে আরাধ্য দেবী। সাহিত্য সাধনার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন অজস্র পুরস্কার ও সম্মান: সুধারানী রায় স্মৃতি পুরস্কার (২০০৪), বাসুদেব সরকার স্মৃতি পদক (২০০৬), রোটারি লিটারেচার অ্যাওয়ার্ড (২০০৬), ১০০ ডায়মণ্ড গণসংবর্ধনা (২০০৮), পাঞ্চজন্য সাহিত্য পুরস্কার (২০১০), শতবার্ষিকী সাহিত্য সম্মাননা (২০১১), এশিয়ান কালচারাল লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড (২০১৪), ডঃ রাধাকৃষ্ণন সম্মাননা (২০১৫), ডি.পি.এস.সি. সাহিত্য সম্মাননা (২০১৮), আত্মজন সম্মাননা (২০১৯), বিবেকানন্দ পুরস্কার (২০১৯), দীপালিকা সম্মাননা (২০১৯), সংহতি সম্মাননা (২০২০), সুকুমার রায় পুরস্কার (২০২০)।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!