গঙ্গোত্রীর পথে এক গ্রাম, চিনিয়ালি। দেরাদুন থেকে একশ কিলোমিটার উজিয়ে যেতে হয়। চাম্বা থেকে সত্তর কিলোমিটার। ছোট শহরও বলা যায় চিনিয়ালিকে। তার নামেই জায়গার নামকরণ, চিনিয়ালিসুর। গাড়োয়ালি ভাষায় সুর মানে ‘সমতল ভূমি’। পাহাড় ঘেরা ছবির মত চিনিয়ালিসুর। পাশেই বয়ে চলেছে গঙ্গা নদী, এরা বলেন ভাগীরথী। ঠাকুরদের বসবাস এলাকায়। বিস্থ সম্প্রদায়ের ‘ঠাকুর’। মোড়লদের এখনও পরিচয় ‘বিস্থ পতি’ বা ‘বিস্থ ঠাকুর’ নামে। চিনিয়ালি থেকে গঙ্গা নদীকে পাশে নিয়ে পাহাড়ি পথে একেবেকে পৌঁছান যাবে সুন্দর এক উপত্যকায়। নাম হরশিল। আপেল বাগানে ভরপুর। হরশিল পার হয়ে পৌঁছাতে হবে গঙ্গোত্রী, চার ধামের একটি। পবিত্র হিন্দু তীর্থ।
তেমন বিশেষত্ব কিছু ছিল না চিনিয়ালির। কয়েকটি মন্দির, নাগরাজ, বালাজি মন্দির ছিল। কিন্তু হালফিলের ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম এখন অন্য রকম। আছে স্কুল, কলেজ, কৃষি বিজ্ঞন সংস্থান। আছে আর্চ ব্রিজ, বাংলায় খিলান সেতু। অবাক কাণ্ড, এখানেই সুর (সমতল) অঞ্চলে গড়ে উঠেছে বিমান বন্দর, ভারকোট বিমান বন্দর।
অনেক নাম বিমান বন্দরটির। ভারকোট চিনিয়ালসুর বিমান বন্দর, মা গঙ্গা বিমান বন্দর, ধারাসু বিমানবন্দর। অবস্থান উত্তর কাশি থেকে পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার।
নির্জন পাহাড় ঘিরে চলেছে কর্মযজ্ঞ। উন্নয়ন তরক্কি আর প্রগ্রেস। একদা দেশের সাধুসন্ত নির্জন হিমালয়ে শাস্ত্রচর্চা, যোগ সাধনা করতেন। নির্জনতা উধাও পাহাড়ে। বৃদ্ধ সাধুদের জিজ্ঞাসা করেছি। উন্নয়ের ফল ভাল, নাকি মন্দ। কেউ বলছেন, আমাদের সাধনায় ব্যাঘাত হচ্ছে। প্লাস্টিক এবং অন্যান দূষণ বাড়ছে পাহাড়ে। কারও মতে ভালোই তো হচ্ছে। ভক্ত বৃন্দ সহজে আসতে পারছেন। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ রাখছেন। আমরাও গাড়ি হাঁকিয়ে এদিক ওদিক যাচ্ছি। আশ্রমের প্রচার কাজে সুবিধা হচ্ছে। নিজেদের অনেক কার্যকলাপ হোয়াটস অ্যাপে ভক্তদের জনাতে পারছি।
তবে অন্য রকম সাধুও দেখলাম। মোবাইল ফোন মোটেই ব্যবহারই করেন না। চিনিয়ালসুরের পথে অভিজ্ঞতা হল অনেক। আর সুন্দর ব্রিজটার ছবিও তুললাম পটাপট।
আর্চ ব্রিজ উন্নত বিজ্ঞান ও কারিগরির নিদর্শন। নদীর উপর সেতুর নীচে কোন পিলার নেই। দুই পারে দুটি স্তম্ভে (Pier) শধু বাঁধা আছে ভারী সেতু। লোহার তৈরি। মানুষ ও গাড়ি চলাচলের জন্য ব্রিজের পাটাতনে (span) কংক্রিটের ঢালাই। সব মিলিয়ে সেতুটির অনেক ওজোন। নদীতে পিলারের সাপোর্ট নেই। সেতু ঝুলছে দুই পারের স্তম্ভে (Pier) যুক্ত হয়ে। ইংরাজি কথা, ‘Load distribution’ অর্থাৎ সেতুর ভার বিশেষ উপায়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কেমন সেই উপায়?
ব্রিজের আকৃতি ধনুকের মত। উটের পিঠের মতও বলা যায়। পিঠের সব চাইতে উঁচু বিন্দুতেই পড়ে সর্বোচ্চ ভার। ক্রমে নিচের দিকে ছড়িয়ে পড়ে।
পৃথিবীর বহু দেশে আছে এমন আর্চ ব্রিজ। অস্ট্রেলিয়ার সিডনী হারবার পৃথিবীর বৃহত্তম। কলকাতায় গঙ্গার উপর দুটি পুলের নীচেও কোন স্তম্ভ নেই। সেটি কিন্ত আর্চ ব্রিজ নয়। ক্যান্টিলিভার সেতু।
আর্চ ব্রিজের পেনসিল ড্রয়িং দিলাম। চিনিয়ালিসুর পুলটা দেখতে ঠিক বইয়ের পাতায় আঁকা আর্চ ব্রিজের মত। চারপাশের সৌন্দর্যের সঙ্গে মানানসই।#