বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে বলে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বুধবার (৯ নভেম্বর) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানায় ঢাকায় সফররত আইএমএফের প্রতিনিধি দল।
আইএমএফ প্রতিনিধিরা জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্ব মূল্যস্ফীতির চাপে আছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সব পণ্যের দাম বেশি। ফলে আমদানি করা পণ্য বেশি দামে আনতে হচ্ছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। এ বছর বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি দাঁড়াবে ৯%।
আইএমএফ বলেছে, মহামারি কাটিয়ে উঠে বাংলাদেশ জোর কদমে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে এগিয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ব্যাহত হয়। এতে একদিকে চলতি হিসাবের ঘাটতি বাড়তে থাকে, অন্যদিকে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকে। একই সঙ্গে, মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধি পায় এবং প্রবৃদ্ধির গতি কমে যায়।
বাংলাদেশ এসব তাৎক্ষণিক সমস্যা বেশ ভালোভাবে সামলে নিলেও দীর্ঘমেয়াদি কিছু গুরুতর কাঠামোগত সমস্যা রয়ে গেছে বলে মনে করে আইএমএফ।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হচ্ছে বলে মনে করে তারা। আইএমএফের পরামর্শ, সফলভাবে এলডিসি উত্তরণ নিশ্চিত করতে এবং ২০৩১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার ক্ষেত্রে অতীতের সফলতার ওপর ভর করে এগোতে হবে এবং কাঠামোগত সমস্যাগুলো আমলে নিতে হবে। সেই সঙ্গে বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পাশাপাশি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
বাংলাদেশেকে ৪.৫ বিলিয়ন (৪৫০ কোটি) ডলার ঋণ সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে গত ২৬ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করে আইএমএফ’র ১০ সদস্যের একটি দল। এই দলের প্রধান ছিলেন রাহুল আনন্দ।
সফর শেষে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন আইএমএফ প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার বিষয়ে বুধবারই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানান তারা। ৪২ মাসে পুরো ঋণটা দেওয়া হবে।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আইএমএফের কাছ থেকে আমরা যেভাবে চেয়েছি, সেভাবেই ৪.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাচ্ছি। আগামী ফেব্রুয়ারিতেই আমরা প্রথম কিস্তি পাবো। মোট সাত কিস্তিতে ২০২৬ সালের মধ্যে এই ঋণের পুরো টাকা পেয়ে যাবো।”
অর্থমন্ত্রী জানান, আমরা ফেব্রুয়ারিতে প্রথম কিস্তিতে পাবো ৪৪৭.৪৮ মিলিয়ন ডলার। ছয় মাস পর পর ৫৫৯.১৮ মিলিয়ন করে সাত কিস্তিতে পুরো ঋণটা পাবো। পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ড দিয়ে পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। মোট ঋণের ওপর গড় সুদের হার হবে ২.২%। ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফের পক্ষ থেকে কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি। আমরা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যেসব বিষয় সংস্কারের কথা ভাবছি, তারাও একই কথা বলেছে।